বিদেশ থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আন্দোলনকে সক্রিয় করার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তখন জাপান-জার্মানি ঢুঁড়ে বেড়াচ্ছেন৷ ১৯৩৪ সালে তিনি ভিয়েনায়৷ তাঁর বিশেষ প্রয়োজন একজন ইংরেজি জানা সেক্রেটারির, যিনি জার্মান ভাষা অবশ্যই জানেন৷ এই সূত্রে তিনি পেয়ে গেলেন এক অস্ট্রিয়ান তরুণীকে, যিনি ব্যক্তিগত সচিব থেকে ব্যক্তিগত ঘরণীতে পরিণত হয়ে গেলেন৷ সালটা ১৯৩৪৷ সুভাষচন্দ্র তখন ৩৭, অস্ট্রিয়ান তরুণী ২৪৷ ইন্টারভিউতে দু’জন মহিলা এসেছিলেন৷ সুভাষের পছন্দ হয়েছিল ফ্রয়লাইন (মিস) এমিলি শেঙ্কলকে৷ তিনি তখন ‘দি ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ বইটি লিখছিলেন৷ সেই বইটির প্রস্তুতিপর্বে নোট দেওয়া এবং টাইপ করে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতির দায়িত্ব বর্তালো এমিলির উপর৷
নিত্য সঞ্চরণশীল বায়ুর মতো সুভাষ ঘুরে বেড়ান নানা প্রান্তে৷ ১৯৩৪-এর নভেম্বরের শেষে তিনি গেছেন রোমে৷ সেই সৌন্দর্য নগরী থেকে প্রথম যে চিঠিতে ‘প্রিয় শ্রীমতী শেঙ্কল’কে লেখেন ‘অন্তরঙ্গ’, ‘সুভাষচন্দ্র বসু’– তার তারিখ ৩০ নভেম্বর ১৯৩৪৷ এমিলির চিঠির উত্তরেই তিনি এই চিঠিখানি লেখেন৷ শেষ চিঠিটি লেখেন ১৯ ডিসেম্বর ১৯৪২ তারিখে৷ তার ঠিক পাঁচ বছর আগে ২৬ ডিসেম্বর ১৯৩৭ তিনি গোপনে এমিলিকে বিয়ে করেন৷ তাঁর বাড়িতেও কিছু জানাননি৷ যখন মেজদাদা শরৎচন্দ্র বসুকে বিয়ের খবর জানালেন বার্লিন থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ তারিখে, তখন তাঁর কন্যা অনিতার জন্ম হয়ে গেছে৷
এমিলির শরীর খারাপ হলে সুভাষের ভাল লাগে না, উদ্বিগ্ন হন৷ এমিলি বাংলা শিখছেন— অবশ্যই সুভাষের ভাল লাগে— কথা বলাটা প্রাণ থেকে ঘটবে, এমিলির জন্যে সুভাষ তাঁর হয়ে প্রবন্ধ লিখে এমনকী ভুলভাল বা বাজে ইংরেজি লিখলে বকুনিও দেওয়ার অধিকার দেখান৷ শেঙ্কলও জানতে চান সুভাষের যৌবনের কথা৷
এমিলিকে লেখা চিঠিগুলির অনেকগুলি ছাপা হয়েছে ইংরেজিতে এবং বাংলা অনুবাদে৷ অনেক চিঠি হারিয়ে গেছে বা কেউ নিয়ে গিয়ে ফেরত দেননি৷ নইলে উভয়ের সম্পর্ক নিয়ে হয়তো আরও কিছু তথ্য আমরা পেতাম৷ যা পেয়েছি তা নিয়েই অতএব তাঁদের দাম্পত্য জীবনের একটা কৃশ অথচ স্বাস্থ্যবান ছবি আমাদের আঁকতে হবে৷ বেশির ভাগ চিঠির শুরুতে প্রথম দিকে সম্বোধন করেছেন– Dear Miss Schenkl — পরে Dear Frl Schenkl৷ এতে হেরফের কিছু নেই৷ চিঠি শেষ করেছেন Yours sincerely পাঠ দিয়ে৷ কেবল একবার, দার্জিলিং জেল থেকে লেখা একটি চিঠিতে (২২ মে, ১৯৩৬) একটু অতিরিক্ত আবেগ— ‘I am yours sincerely’৷ এমিলির শরীর খারাপ হলে সুভাষের ভাল লাগে না, উদ্বিগ্ন হন৷ এমিলি বাংলা শিখছেন— অবশ্যই সুভাষের ভাল লাগে— কথা বলাটা প্রাণ থেকে ঘটবে, এমিলির জন্যে সুভাষ তাঁর হয়ে প্রবন্ধ লিখে এমনকী ভুলভাল বা বাজে ইংরেজি লিখলে বকুনিও দেওয়ার অধিকার দেখান৷ শেঙ্কলও জানতে চান সুভাষের যৌবনের কথা৷ সুভাষ জানান— তিনি আর যুবক নন৷ আবার বিয়ের পরেও যে চিঠি লেখেন সুভাষ, তাতে স্ত্রীকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন— Regards and Greetings জানান৷ কখনও বা স্ত্রীর জন্য ‘রাত-দিন চিন্তা’ করেন৷ ‘ছোট্ট প্রিয়তমা’র জন্য এটাই তো স্বাভাবিক৷ ‘প্রিয়তমার জন্য’ অনেক ভালবাসা রইল জানিয়ে কখনও বা তিনি চিঠি শেষ করেন (১৭ অক্টোবর ১৯৩৮)৷ সেই ভালবাসা কখনও বা দীর্ঘপ্রসারী— ‘যতদিন না আমরা মিলিত হচ্ছি ততদিনের জন্য৷’
এই ভালবাসার স্বীকৃতির জন্য পরিবারের কাছেও সুভাষ প্রার্থনা জানান৷ বার্লিন থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ তারিখে শরৎচন্দ্র বসুকে লেখা তাঁর চিঠিটি হুবহু উদ্ধার করে দিলেই জানা যাবে তাঁর অন্তরালবর্তী দাম্পত্য জীবনের একটা প্রশান্ত গভীর ছবি৷
পরম পূজনীয় মেজদাদা,
আজ পুনরায় আমি বিপদের পথে রওনা হইতেছি৷ এবার কিন্তু ঘরের দিকে, হয়তো পথের আর শেষ দেখিব না৷ যদি তেমন বিপদ পথের মাঝে উপস্থিত হয়, তাহা হইলে ইহজীবনে আর কোনও সংবাদ দিতে পারিব না৷ তাই আজ আমি আমার সংবাদ এখানে রাখিয়া যাইতেছি— যথাসময়ে এ সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছিবে৷ আমি এখানে বিবাহ করিয়াছি এবং আমার একটি কন্যা হইয়াছে৷ আমার অবর্তমানে আমার সহধর্মিণী ও কন্যার প্রতি একটু স্নেহ দেখাইবে— যেমন সারাজীবন আমার প্রতি করিয়াছ৷ আমার স্ত্রী ও কন্যা আমার অসমাপ্ত কার্য শেষ করুক— সফল ও পূর্ণ করুক— ইহাই ভগবানের নিকট আমার শেষ প্রার্থনা৷
আমার ভক্তিপূর্ণ প্রণাম গ্রহণ করিবে— মা, মেজবৌদিদি এবং অন্যান্য গুরুজনকে দিবে৷
ইতি—
বার্লিন, ৮ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৩
তোমার স্নেহের ভ্রাতা
সুভাষ
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং আসন্ন মৃত্যুর একটা কল্পিত ছায়ার পরিবেশে হৃদয়ের সত্য ছত্রে ছত্রে উচ্চারিত৷ অগ্রজের উপর আস্থা তো আছেই, কিন্তু স্ত্রী-কন্যার নিরাপত্তা শুধু নয়, ভালবাসার কাঙালিনীদের হৃদয়ের আতিথ্যের নিশ্চিন্ততা দান স্বামী সুভাষচন্দ্র বসুর হৃদয়কে উদ্বেলিত করেছে৷ সঙ্গে সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে স্ত্রীর ভালবাসা ভারতের প্রতি শ্রদ্ধায় রূপান্তরিত হবে এই বিশ্বাসও ঘোষিত হয়েছে৷ তাঁর অকৃতকার্য অগীত গান, অকথিত বাণী এই বিদেশিনীই নেবেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বেন৷ সংগ্রামী দেশপ্রেমিকের এই স্বপ্নও তাঁদের দাম্পত্যজীবনকে নিত্যদিনের জীবনযাপনের বাইরে এক ঊর্ধ্বলোকে স্থাপন করেছে৷ হয়তো সেই দীক্ষাতেই স্ত্রীকে তিনি দীক্ষিত করেছিলেন— অন্তরালবর্তী সেই ইতিহাস আর কেমন করে জানব আমরা? যেটুকু জানি, তাও দাম্পত্যজীবনের এক আলোকিত অধ্যায়৷
নেতাজির সঙ্গী নাম্বিয়ার মেয়ের জন্ম হওয়ায় নেতাজির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন শ্রীমতী কৃষ্ণা বসুকে৷ বলেছিলেন, ‘মেয়ে হয়েছে, খবর শুনে উনি সামান্য হতাশ হয়েছিলেন৷ কারণ উনি ছেলের আশা করেছিলেন৷ অবশ্য উনি তখনই সেভাবে সামলে নিলেন৷ আর পরে যখন ভিয়েনাতে শিশুকন্যা দেখতে গেলেন, খুবই গর্বিত ও আনন্দিত হয়েছিলেন৷’
ব্রিটিশ সিংহের হুঙ্কার এবং রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সুভাষচন্দ্র ইউরোপ থেকে স্ত্রীকে রেখে ভারতে চলে এসেছিলেন৷ মুম্বই বন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠিয়ে দেয়৷ সারা ভারত এই অন্যায্য গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে৷ এমিলির কাছে সেই সংবাদ পৌঁছিলে তিনি ভারতের বাইরে থেকে ঝড় তুলে দিলেন৷ ইন্ডিয়ান আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগের সেক্রেটারি শ্রীমতী উডসের কাছে একটি প্রতিবাদ-প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দেন৷ সঙ্গে দেন একটি চিঠি৷ সেই চিঠির একটি অংশের ভাষা ছিল এইরকম— ‘It is a shame how he is treated by the British’৷ এটা শুধু স্বামীর জন্য কি? এমিলি ১ জানুয়ারি ১৯৩৭ তারিখে সুভাষচন্দ্রকে যে চিঠি লিখেছিলেন— তার অংশবিশেষ উদ্ধার করতে হবে এই প্রশ্নের জবাবের জন্য—
…তারপর হঠাৎ আমার মাথায় বোকার মতো ‘ব্লিজিসেন’ (Bleigiessen) করবার ইচ্ছাটা এল৷ ব্যাপারটা এইভাবে করতে হয়৷ আপনি একটা চামচেতে খানিকটা ধাতু (সিসে) গলিয়ে নিন৷ যখন গলে যাবে তখন ঠান্ডা জলে ওটা ফেলে দিন৷ তখনই ওটা জমে শক্ত হয়ে গিয়ে একটা আকার নেবে৷ সেই আকার অনুযায়ী, যে ওই চামচে-ভরতি ধাতু ঢেলেছে তার ভবিষ্যৎ আপনি বলতে পারেন৷ আমার ক্ষেত্রে একটা মজার ব্যাপার হল৷ ওই আকারটা ভারতবর্ষের ম্যাপের মতো হয়ে গেল৷৷
— মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, এই অধিকারেই তো তাঁর টাইপ করা সুভাষচন্দ্রের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ‘অ্যান ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’ তিনি সমাপ্ত করার অধিকার পান৷
এমিলির সঙ্গে প্রথম দেখা যখন তাঁর ইন্টারভিউ হচ্ছে৷ তারপরে ঘনিষ্ঠতা, বিয়ে এবং সন্তানের জন্ম৷ ১৯৪৩-এর ফেব্রুয়ারিতে শেষ দেখা৷ মাত্র ন’বছরের দাম্পত্যজীবন৷ এর মধ্যে মাত্র বছর পাঁচেক সুভাষ ইউরোপে ছিলেন৷ ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত সুভাষ মুখ্যত ভারতেই ছিলেন— মাঝপথে মাত্র তিন মাসের জন্য ইউরোপে আসেন৷ তখন অস্ট্রিয়ার বাদগাসটিনে এমিলির সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন৷ পাঁচ বছরের মধ্যে ক’টা দিনই বা এমিলিকে কাছে পেয়েছেন সুভাষ৷ ছোট্ট একটি মেয়েকে বুকে করে তাঁর বয়স্ক মায়ের সঙ্গে একা একা বিরহিণীর জীবনযাপনই বুঝি তাঁর ভবিষ্যৎ ছিল৷ এরই জন্যে ভালবাসা, এরই জন্যে বিয়ে এবং সন্তান! কিন্তু আপন সুখকে বড় করে ভেবে সুভাষকে তিনি একটা আঙিনার মধ্যে বেঁধে রাখতে চাননি৷ সুভাষের স্বপ্নকে তিনি আপন স্বপ্ন বলে ভেবে নিয়েছিলেন এমিলি শেঙ্কল বোস৷ নেতাজি তাঁর মধ্যে সেই চেতনা জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন৷
এরই মধ্যে কোলে এসেছে অনিতা পাভ বোস৷ নেতাজির সঙ্গী নাম্বিয়ার মেয়ের জন্ম হওয়ায় নেতাজির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন শ্রীমতী কৃষ্ণা বসুকে৷ বলেছিলেন, ‘মেয়ে হয়েছে, খবর শুনে উনি সামান্য হতাশ হয়েছিলেন৷ কারণ উনি ছেলের আশা করেছিলেন৷ অবশ্য উনি তখনই সেভাবে সামলে নিলেন৷ আর পরে যখন ভিয়েনাতে শিশুকন্যা দেখতে গেলেন, খুবই গর্বিত ও আনন্দিত হয়েছিলেন৷’ এই মেয়েটিকে বুকে করেই তো এমিলি বোসের যত গর্ব, যত স্মৃতি৷
শেষ পর্যন্ত অনিবার্য এসে উপস্থিত হল৷ ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি৷ য়ুরোপে, আমাদের জানা ইতিবৃত্তে, নেতাজির অবস্থানের শেষ দিন৷ সপ্তাহ তিনেক আগে এমিলি অস্ট্রিয়া থেকে এসে পৌঁছলেন বার্লিনে৷ কিন্তু একান্ত করে স্বামীকে পেলেন কই৷ য়ুরোপ ছেড়ে যেতে হবে,কত কাজ যে বাকি রয়ে গেল৷ সেদিকে নজর দিতে গিয়ে স্ত্রী-কন্যার প্রতি ততখানি মনোযোগ দিতে পারলেন না বোস৷
এরই মধ্যে এসে পড়ল সুভাষচন্দ্রের ছেচল্লিশতম জন্মদিন— ১৯৪৩-এর ২৩ জানুয়ারি৷ বার্লিনের ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টারের সদস্য আর সহকর্মীরা খুব ঘটা করে তাঁদের প্রিয় নেতার জন্মদিন পালন করলেন৷ আর অকস্মাৎ নেতাজির মুখে উচ্চারিত হয়ে গেল এক পরম সত্য—‘সামনের বছর এদিনে আমি খুব সম্ভবত তোমাদের মধ্যে থাকব না৷’ একটা থমথমে চাপা আবহাওয়া৷ জানি না এমিলি শেঙ্কল বোসের ‘বামেতর নয়ন’ নেচে উঠেছিল কিনা!
৮ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় ট্রেন৷ খুব ভোরে উঠে বার্লিনের লেহটার বানহোফ স্টেশন থেকে তাঁর ট্রেন ছাড়ল— ট্রেন যাবে কীল (Keil)-এর উদ্দেশ্যে৷ আর তখনই যেন উদ্দেশ্যহীন হয়ে গেল এমিলি শেঙ্কল বোসের জীবন৷ তাঁকে বলা হয়েছিল— যেন কিছুই হয়নি এমনি ভাব বজায় রেখে কিছুদিন সোফিয়েন স্ট্রাসের বাড়িতে থেকে যেতে হবে৷ হ্যাঁ, কিছু তো হওয়ার আর বাকি থাকল না৷
এদিনই চিঠি লিখে গেলেন মেজদা শরৎচন্দ্র বসুকে স্ত্রী-কন্যার ভার তাঁর হাতে দিয়ে৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল৷ পাঁচ বছর পরে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সুভাষের মেজদা সপরিবারে ভিয়েনায় এলেন৷ এমিলির দায়িত্ব এতদিন নিতে পারেননি৷ সে আনন্দোৎসব বারবার চোখের জলে ভিজে যাচ্ছিল৷ এর মধ্যে কত গল্প রচিত হয়ে গেছে— প্লেন-ক্র্যাশ ইত্যাদি৷ মেজ ছেলের কথায় মা বিভাবতী নিজের হাতের চুড়ি খুলে এমিলির মণিবন্ধে পরিয়ে বন্ধনসূত্র গাঁথলেন— আমৃত্যু শাশুড়ি এই অভিজ্ঞান এমিলি শ্রদ্ধার সঙ্গে বহন করে গিয়েছিলেন৷
শুধু কি বলয়-বাঁধনে তিনি ধরা পড়েছিলেন! তাঁর বাড়ির ফায়ারপ্লেসের উপরে নেতাজির সামরিক পোশাক-পরা ছবি— তাতে নেতাজির স্বাক্ষর আর তারিখ টোকিও ১৬-১১-৪৩৷ আগুন-ঝরানো এই দেশপ্রেমিক আর প্রেম-আগুনে উজ্জ্বল এই মানুষটি ফায়ারপ্লেসের ওপরে থেকে তাঁর সংসারে প্রেমের উত্তাপ নিত্য বহমান রেখেছিলেন৷ বইয়ের আলমারিতে নানা বইয়ের মধ্যে সুভাষের ঐতিহাসিক রচনা—‘দি ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ আজও যে সংগ্রামরত কে- সেকথা অনুভব করবেন! সাধে কি রোঁমা রঁলা সুভাষকে এ বই পড়ে লিখেছিলেন—‘ভারতবর্ষের মুক্তি আন্দোলনের ইতিহাস জানতে হলে এ বই অপরিহার্য৷’
সোফিয়ান স্ট্রাসের ওই পুণ্যভবনে এই বিরহ-বিধুরা নারীর প্রেমের ঐশ্বর্য তাঁর সুভাষের স্মৃতি বহন করে কতদিনই না সম্পদশালী হয়েছিল!