আভিধানিক অর্থে ‘অজাচার’ কথাটির অর্থ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে যৌনাচার তথা শরীরী ঘনিষ্ঠতা। বিষয়টির প্রসঙ্গ উঠলে রক্ষণশীল সমাজ ভুরু কোঁচকাবেন, ছিছিক্কার দেবেন। কিন্তু পুরাণের গল্প থেকে শুরু সাহিত্যিকদের উপন্যাসে-গল্পে এই ‘অজাচার’ –এর ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। অজাচারকে নিজেদের সৃষ্টিতে ঠাঁই দিয়েছেন এমন লেখকদের তালিকায় রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শিবরাম চক্রবর্তী, জগদীশ দুপ্ত, সুবোধ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তিলোত্তমা মজুমদার প্রমুখ। প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের কলমে এই ‘অজাচার’ ওপর আলোকপাত করা হল আলোচ্য প্রবন্ধে।
ঘটনাগুলো আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য। আমাদের চারপাশের চেনা চৌহদ্দিতে এমনটা সচরাচর দেখাও যায় না। দু–একটা ঘটে থাকলেও ‘ছিঃ ছিঃ’–এর বন্যা বয়ে যায়। আর নিজের ঘরে হলে? সন্তর্পণে চেপে রাখি , নিঃশব্দ ঘৃণা ছুড়ে দিই। সাহিত্য তো সমাজেরই দর্পণ। তাই মূল স্রোত সাহিত্যেও ব্যাপারটা সেভাবে আসে না। সিনেমা বা সিরিয়ালে এমন দৃশ্য রাখতে গেলেও পরিচালকরা অন্তত দশবার ভাবেন। যৌন দৃশ্য, পরকীয়া এসব রমরম করে চলে। এসব দৃশ্য রাখলে টিআরপি–এর মার নেই। লুকিয়ে লুকিয়ে সবাই দেখবেন এবং উপভোগ করবেন। কিন্তু অজাচার? নৈব নৈব চ।
অজাচার জিনিসটা আসলে কী? সবসময় মোবাইলে মুখ গুঁজে রাখা প্রজন্মকে জিজ্ঞাসা করলে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আবার মোবাইলেই মনোনিবেশ করবে। কেউ হয়তো সবজান্তা গুগলে গিয়ে মানে খোঁজার চেষ্টা করবে। স্মার্ট ফোনের বৃত্ত থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা, একটু সেকেলে মানুষদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরাও নির্ঘাত অনাচারের সঙ্গেই গুলিয়ে ফেলবেন। যেন অনাচার আর অজাচার মাসতুতো পিসতুতো ভাইবোন। মামাতো পিসতুতোর ব্যাখ্যায় না হয় পরে আসা যাবে। আপাতত দেখা যাক অভিধান কী বলছে? অজাচার মানে রক্তের সম্পর্কের মধ্যে যৌনাচার।
রক্তের সম্পর্ক মানে? হয়তো গা গুলিয়ে যাবে। তবু দু–একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ভাই–বোন। আরও বিকৃত উদাহরণ চাইলে মা–ছেলে, বাবা–মেয়ে। আমাদের রক্ষণশীল চেতনায় এগুলি হজম করা বেশ কঠিন। অনেকে হয়তো কানে আঙুল দেবেন। অনেকে বলবেন— ‘এসব শোনাও পাপ।’ লেখকেরা এবং পরিচালকরা এই সহজ সত্যিটা বোঝেন বলেই আমাদের সাহিত্য বা সিনেমায় এর তেমন ছাপ পড়েনি। ছাপ পড়লে তাঁদের জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকত। রয়্যালটি তো দূরের কথা, প্রকাশকরা সে বই ছাপার ঝুঁকি নিতেন কি না সন্দেহ।
অথচ পুরাণ কিন্তু অন্য কথা বলে। গ্রিক সাহিত্য বা ভিন্দেশি সাহিত্যেও ঘটনাগুলি তেমন বিরল নয়। এমনকী পড়শী বাংলাদেশের চটি–সাহিত্যেও আকছার এমনটা দেখা যায়। ঠিক না বেঠিক, উচিত না অনুচিত— এই বিতর্ক চিরকাল থাকবে। আমাদের কাজ পক্ষ নেওয়া নয়। রায় দেওয়াও নয়। শুধু কোথায় কোথায় এই অজাচারের কাহিনি সাহিত্যের আঙিনায় উঠে এসেছে, তার অভিঘাত কী হয়েছে, এইটুকুই আলোকপাত করা।
আমাদের চেনা বাংলা সাহিত্যের বাইরেও একটা সাহিত্যের পরিসর আছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেক পাঠকের ভ্রূ কোঁচকাবে। আদম আর ইভ দুজনেই নাকি সম্পর্কে ভাই–বোন। কিন্তু তাঁদের যৌন মিলনেই নাকি মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে। বেদ ও পুরাণেও অবাধ অজাচারের কাহিনি আছে। ঋগ্বেদে ৬।৫৫।৪–৫ এ পাওয়া যায় পূষণ বা পূষ তাঁর মা রাত্রির পতি বা দিধিষু ছিলেন। আর পূষণ তাঁর ভগিনীর জার বা প্রণয়ী ছিলেন। ব্রহ্মপূরাণে ৯২ তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় ব্রহ্মাপত্নী মহী ও তাঁর নিজপুত্র সনাজ্জাতের মধ্যে অজাচার। মৎসপুরাণে আমাদের ভগবান ব্রহ্মাও শতরূপা নামে এক অপূর্ব সুন্দরী মানস কন্যার জন্ম দেন। আবার নিজেই সেই কন্যার প্রেমে পড়ে যান। স্বয়ং শিবও মনসার প্রেমে পড়েন। নিজের কন্যাকে দৈহিক ভাবে কামনা করেন। রাধা সম্পর্কে কৃষ্ণের মামি ছিলেন। কিন্তু সেই রাধা–কৃষ্ণের প্রেম ও লীলা আজও অমর হয়ে আছে। বৃন্দাবনের আনাচে–কানাচে নবযুবতী মামিকে সম্ভোগ করেছেন কৃষ্ণ। এমনকী মাঝ নদীতেও নৌকাকান্ড ঘটেছে। প্রথম দিকে রাধা না করলেও পরের দিকে নিজেই অভিসারে গেছেন।
মধুসূদন–কুমুদিনীর যে জটিলতার সূত্রপাত প্রথম থেকেই তাকে উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্যামাসুন্দরী প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহন করেছে। তারই জবানী — “মধুর হাতে হাত দিয়ে বুঝল এটা ওর খারাপ লাগেনি…শ্যামা কি কুমুর চেয়ে কম সুন্দরী? না হয় ওর রং একটু কালো–কিন্তু ওর চোখ, ওর চুল, ওর রসাল ঠোঁট!”
এবার বাংলা সাহিত্যে আসা যাক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসে মধুসূদন ও তাঁর বৌদি শ্যামাসুন্দরীর মধ্যে একটি আড়ালহীন যৌন সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। শ্যামাসুন্দরী ও মধুসূদনের ঘনিষ্ঠতার যে চিত্র উপন্যাসে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে নিরাবলেপ অশ্লীলতা ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রকৃতপক্ষে কুমুদিনীর ঘৃণা ও বিতৃষ্ণার ফলে মধুসূদনের প্রভুত্ব ও অহংকার যেভাবে অপমানিত হয়েছিল, শ্যামার সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে তার কিছুটা যেন পুনরুদ্ধার হল। মধুসূদনের কাছে নারী দাসী। শ্যামাসুন্দরী মধুসূদনের নষ্ট সম্মান পুনরুদ্ধারের একটা উপায় মাত্র। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শ্যামা মধুসূদনের প্রণয়িনী নয়, ইন্দ্রিয় লালসার জন্যও নয়। পরাজিত মধুসূদনের আত্মসম্মানে একটা শীতল প্রলেপ মাত্র। সর্বোপরি কুমুর আত্মজাগরণের জন্য, কুমুর দাম্পত্য ট্রাজেডিকে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য শ্যামা চরিত্রের প্রয়োজন ছিল। কেন না মধুসূদন–শ্যামার মিলনেই কুমু সংসারে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠল এবং উপন্যাস কিছুটা প্রাণ ফিরে পেল।
মধুসূদন–কুমুদিনীর যে জটিলতার সূত্রপাত প্রথম থেকেই তাকে উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্যামাসুন্দরী প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহন করেছে। তারই জবানী — “মধুর হাতে হাত দিয়ে বুঝল এটা ওর খারাপ লাগেনি…শ্যামা কি কুমুর চেয়ে কম সুন্দরী? না হয় ওর রং একটু কালো–কিন্তু ওর চোখ, ওর চুল, ওর রসাল ঠোঁট!”
শরৎবাবুর সাহিত্যে অজাচার সেইভাবে উঠে আসেনি। কাজেই আমরা সোজা চলে যেতে পারি কল্লোল যুগে।
উপবাসী জীবনে কুবের পেল সঞ্জীবনী সুধার স্বাদ! মুক্তি খুঁজে পেল কুবের কপিলার মধ্যে। কপিলাকে নিয়ে সে সপরিবারে ময়নাদ্বীপে যেতেও রাজি। কপিলা সম্পর্কে কুবেরের শালী। পঙ্গু মালার ছোট বোন। কাজেই কুবেরের সঙ্গে কপিলার আত্মীয়তার সম্পর্ক। এখানেও সেই অজাচার।
মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিলেন কুবের ও তার শালী কপিলার প্রেমের জয়গান গেয়ে। আরও একবার তিনি প্রমাণ করলেন, যেখানে প্রেমই জীবনের সব সেখানে রক্তের বন্ধন কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
কেতুপুরের কুবের মাঝি কিন্তু শুধু স্বপ্নে নয়, বাস্তবেও কপিলাকে গ্রহণ করে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। রোগ, শোক, অনটন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, এবং সর্বোপরি কুবেরের পঙ্গু স্ত্রী মালার শারীরিক প্রতিকূলতা কুবেরের জীবনে যখন এক স্থায়ী বিষণ্ণতা সৃষ্টি করেছে; তখন তার জীবনে এল উদ্ধত যৌবনা, লীলাচঞ্চলা কপিলা। সেই কপিলা— যে ঘুমের আগেই কুবেরকে স্বপ্ন এনে দেয়। উপবাসী জীবনে কুবের পেল সঞ্জীবনী সুধার স্বাদ! মুক্তি খুঁজে পেল কুবের কপিলার মধ্যে। কপিলাকে নিয়ে সে সপরিবারে ময়নাদ্বীপে যেতেও রাজি। কপিলা সম্পর্কে কুবেরের শালী। পঙ্গু মালার ছোট বোন। কাজেই কুবেরের সঙ্গে কপিলার আত্মীয়তার সম্পর্ক। এখানেও সেই অজাচার।
মামাতো পিসতুতো ভাই–বোনের মধ্যে যৌন সম্পর্কের আভাস না পেলেও প্রণয় সম্পর্কের উদাহরণ পাওয়া যায় নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘চেনামহল’ উপন্যাসে। বিজু ও প্রীতি। বিজুর পিসির মেয়ে প্রীতি। দু’জনেই দু’জনকে ভালোবাসে। একে অপরের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান। বাড়ির লোককে আড়াল করে তাদের প্রণয় ধীরে ধীরে লালিত হয়। একসময় তারা দুজনে মিলে কলেজের ফাংশন দেখতে যায়। কিন্তু তাদের এই গভীরভাবে মেলামেশাকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না তাদের বাড়ির লোক। প্রীতির সঙ্গে রঞ্জিতের বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু তাদের ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করতে তারা একসঙ্গে মৃত্যু বরণের শপথ নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রীতির মরা আর হয়ে ওঠে না। সে বাঁচতে চায়। হঠাৎ সে সাহসী হয়ে ওঠে। এভাবে কাপুরুষের মতো মৃত্যু সে চায় না। ভোর রাতে সে বিজুকে গিয়ে বলবে ভেবেছে—‘অনেক বোকামি হয়েছে, আর নয়। চলো পালাই। তারপর যা হয় হবে, যে যা বলে বলবে। আমরা না খেয়ে মরব সেও ভাল, কিন্তু বিষ খেয়ে মরব না।’
কিন্তু বিজু তখন কোথায়? দেবদাস হওয়াও তার কম্ম নয়। নিজের প্রেমকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে সে বিষ খায়। বিজু মরে গিয়ে বেঁচে যায়। আর প্রীতি বেঁচে থেকেও সারাজীবন মরণ যন্ত্রণা ভোগ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মানসিকতার এ এক নষ্ট রূপ।
মামাতো–পিসতুতো ব্যাপারটা যখন এসেই গেল তখন দুটি মজার প্রবাদের কথা উল্লেখ করা যায়। আপাতভাবে সংলাপ, কিন্তু এতটাই প্রচলিত যে, তা কার্যত প্রবাদের চেহারা নিয়েছে। শিবরাম চক্রবর্তী। হাসির গল্পের লেখক হিসেবেই পরিচিত। তিনি পিসতুতো বোনের দারুণ একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, পিসতুতো বোন হল কিসতুতো বোন। অর্থাৎ তাকে চুমু টুমু খাওয়া চলতেই পারে। এরমধ্যে কোনও পাপ বা অন্যায় নেই।
এবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর স্মরণীয় উক্তি, ‘মাসতুতো বোন–পিসতুতো বোন অর্ধপ্রেমিকা’। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। সরাসরি যৌনতার কথা আসেনি। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নানা লেখায় ভাই–বোনের এমন খুচরো দুষ্টুমি (বা দুষ্টুমির ইচ্ছে) ঘুরে ফিরে এসেছে।
তিলোত্তমা মজুমদার অজাচারকে কেন্দ্র করে উপন্যাস লিখলেও তিনি বারবার পুরাণের প্রসঙ্গ এনেছেন। চরিত্রের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। নিজের যুক্তির প্রমাণ হিসেবে যতটা পুরাণের দ্বারস্থ হয়েছেন, পুরাণের প্রয়োজনে ততোটা নয়।
আধুনিক কালের বহু উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে বিভিন্নরকম যৌনতার টানাপোড়েন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে তিলোত্তমা মজুমদারের ‘প্রহাণ’ উপন্যাসটির কথা। বড়লোক বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে শ্রী। অসংযত তার জীবনযাপন। যৌনতা নিয়ে কোন ছুঁতমার্গ নেই। যে কোনও পুরুষেরই সে শয্যাসঙ্গী হতে পারে। কিন্তু কিছুতেই তার অন্তরের ক্ষুধা মেটে না। একসময় সে উপলব্ধি করে, অন্য কেউ নয়, তার আকাঙ্ক্ষার একমাত্র পুরুষ তাঁর বাবা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকেই সে ভালোবাসে। সুজয়ের আসার অপেক্ষায় তার কন্যা বসে থাকে। তারই কথা ভেবে বাকলের কাঁচুলি খুলেছে সে। নিজেকে বনফুলে সাজিয়েছে। বন্ধুর মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরলে ক্লান্ত সুজয়কে সে শুশ্রূষা দেয়— ‘তাঁর খুব কাছে ঝুঁকে আছে শ্রী। জড়িয়ে আছে তাঁকে। দেখছে, সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ খোলা। দেখছে ঠোঁট নড়া। দেখছে, বলছে–ঘুমোও বাপি। তুমি ক্লান্ত। সে আরো ঘন হচ্ছে। কাছে আসছে আরও। সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে অনুভব করছেন। শ্রীকে অনুভব করছেন। তাঁর চাপ লাগছে। কীসের চাপ। তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি ওঠার চেষ্টা করছেন। শ্রী তাঁকে জোর করে শুইয়ে দিচ্ছে। বুকে টেনে নিচ্ছে মুখ। সরু ফিতে, হালকা রাত পোশাকের মেয়ে। মেয়ের বুকে নাক ডুবে গিয়ে দমবন্ধ লাগছে তাঁর। তিনি ঠেলে দিলেন শ্রীকে। উঠে বসলেন। তাঁর স্পষ্টকিছু মনে পড়ছেনা। … শ্রী তাঁর গলা জড়িয়ে ধরল। তাঁর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে শুইয়ে দিল ফের।’
অবাধ যৌন সম্পর্কে যে কোনও পাপ নেই শ্রী তার বাবাকে সে কথা বুঝিয়েছে। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দশম সূক্ত খুলে তার বাবাকে পড়ে শুনিয়েছে। শুনিয়েছে যম–যমীর কাহিনি। মানবজাতির সৃষ্টির মূলে আছে ভাই–বোনের যৌনমিলন। পৃথিবী থেকে মানবজাতি যাতে অবলুপ্ত না হয়ে যায় তার জন্য যমী তার ভাইকে যৌন মিলনে প্ররোচিত করেছিল। এই যুক্তির বিরুদ্ধে সুজয়ও তার কন্যাকে এই সম্পর্কের অবাস্তবতা বোঝায়।
উপন্যাসের শেষে দেখি সুজয় তার মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত কন্যাকে নিয়ে গেছে হাউরের বাড়িতে। রাত্রি বেলা বাড়ি ফিরে দেখে শ্রী সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় রয়েছে। সুজয় তাকে জামা পরতে বলে। কিন্তু শ্রী বলে—
‘আমি আর পারছি না।
সুজয়।। জামা পর শ্রী। আমি পাগল হয়ে যাব।
শ্রী।। আমি পাগল হয়ে আছি বাপি। তুমি বলেছিলে ভালবাসবে। আচ্ছা সরাসরি না করলেও ইউস ইওর ফিঙ্গার। ইটস নাথিং বাট অ্যান এক্সক্লিসন। ওটা না হলে আমার পাগল পাগল লাগে। মাম আমাকে বলেছে বাপি, সাপ্রেশন ইস মোর ডেঞ্জারাস অ্যান্ড শী টট মি বাই ফিংগারিং মাইন বাপি।’
সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় তার গলা টিপে বলেছে— ‘তুই আর তোর মা এই পৃথিবীর জঞ্জাল।’
বাস্তব জীবন থেকেই তো উঠে আসে সাহিত্যের উপাদান। সেই চরম বাস্তবতাকে সাহিত্যের আঙ্গিকে তুলে এনে তাঁকে শিল্পরূপ দান করার জন্য যথেষ্ট মানসিক জোর থাকার দরকার। একইভাবে ‘রাজপাট’ উপন্যাসে উঠে এসেছে মা ও ছেলের নিরাবরণ যৌনতা। হারাধনের মায়ের নাম মৌসুমি। সে তার মা কে খুব ভালবাসে। তাই হারাধন বিয়েও করেছে মৌসুমি নামধারী এক অধ্যাপিকাকে। হারাধন তাঁর স্ত্রীর প্রেমে পড়েনি। অথচ প্রতিদিন সে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করেছে। সে তার মায়ের প্রতি এতটাই আসক্ত যে স্ত্রীর সঙ্গে সম্ভোগের চরম মুহূর্তেও তার মা কে ডাকে—
‘মা মা মা।তুমি আমার মা? আমার মা?’
বিকৃত মানসিকতার এক নগ্ন মূর্তি হারাধন। শুধু সে কেন? তার মা–ও তো কোনও অংশে কম অপরাধী নন।হারাধনের যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ছিল এক নারীদেহ। তার সেই অবদমিত কামনা চরিতার্থ করার একমাত্র উপায় বিয়ে। যদিও সে বিয়েটা করেছিল মায়ের নির্দেশ মতোই। কিন্তু বিয়ের পর অফিস থেকে ফেরার পথে প্রতিদিনই সে মায়ের কাছে চলে যেত। তার জীবন থেকে শান্তি চলে গেছে বলে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে দুঃখপ্রকাশ করে। মা তার বুকে ছেলের মুখ চেপে ধরেন।
‘…সে ওই পরিচিত গন্ধের বুকে নাক ঘষে ঘষে বৃন্তে ঠোঁট চেপে ধরে। ব্লাউজের ওপর দিয়েই প্রথমে। বস্তুটি চিনতে বুঝতে খুঁজে নিতে অসুবিধা হয় না তার কারণ সে ছোঁয়া মাত্রই বৃন্তগুলো ব্লাউজের ওপর দিয়ে ফুটে ওঠে, যেন ছিঁড়ে বেরোতে চায় বস্ত্র–আবরণ।…’
এরকম বর্ণনা কোট আনকোট তুলে ধরা ছাড়া আর কোনও বিশ্লেষণই যথেষ্ট নয়।
আবার,
‘..মা ও ছেলে আজ পাশাপাশি আলিঙ্গনে মগ্ন রূপোলি ইলিশ। সারা দেহে মাখা আছে পরাণ রেণুকা। দেহে লিপ্ত।– শুয়েছিল। শুয়েছিল তারা আশ্লেষে–রমণে ক্লান্ত। আজ কতদিন পর বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দেহে আছে দেহেরই পূর্ণ সমর্পণ।…’
তবে তিলোত্তমা মজুমদার অজাচারকে কেন্দ্র করে উপন্যাস লিখলেও তিনি বারবার পুরাণের প্রসঙ্গ এনেছেন। চরিত্রের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। নিজের যুক্তির প্রমাণ হিসেবে যতটা পুরাণের দ্বারস্থ হয়েছেন, পুরাণের প্রয়োজনে ততোটা নয়। সমাজ যতই আধুনিক হোক, যতই আমরা টেকস্যাভি হই না কেন, এরকম একটা বিষয়কে নীতিবাদী সমাজ কখনোই মেনে নেবে না।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘হয়তো’ গল্পটি কিন্তু বেশ রহস্যজনক। তাঁর গল্পে নিয়োগীদের বাড়ির যে বর্ণনা গল্পে দেওয়া হয়েছে, সেখানে সম্পর্কগুলো যে খুব একটা সুস্থ তা নয়। না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমরা জানি বিশ্বসাহিত্যের দরবারে এইরকম উপাদানের প্রবণতা অনেক দিনের। এবার আসা যাক একটু ছোটগল্পের আলোচনায়। প্রাপ্তবয়স্কের গল্প লিখতে গিয়ে, শালীনতা রক্ষা করতে গিয়ে অনেকে নীতিকথার গল্প হয়তো লেখেন। কিন্তু কে কী বলবে— এই ভয়ে জীবনের বাস্তবরূপকেও অবহেলা করেন। আসলে সত্যি সব সময়েই সত্যি। ইংরেজিতে একটা কথা আছে না –Truth is stranger than fiction.
রবি ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্পে চারু–অমলের প্রেমের মধ্যে নিপাট অজাচার না থাকলেও একটা সম্পর্ক ছিল। ‘নষ্টনীড়’ -এও সেই দেওর–বৌদি। মাঝখান থেকে বেচারা ভূপতি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি গেল। আসলে ভূপতি মন দিয়ে পাণিনির ব্যাকরন পড়লেও নারীর মনের ব্যাকরণটা পড়েনি। সে ভেবেছিল নিজের বউকে অত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। চারুর শরীর এবং মনের ওপর অধিকার তার সহজাত। কিন্ত সেজন্যই ভূপতি আপন কাজে মগ্ন হয়ে গেলেন। আর এদিকে চারুদেবী তখন অমল ঠাকুরপোকে নিয়ে ব্যস্ত। বাকি কাহিনিটা পাঠক জানেন।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘হয়তো’ গল্পটি কিন্তু বেশ রহস্যজনক। তাঁর গল্পে নিয়োগীদের বাড়ির যে বর্ণনা গল্পে দেওয়া হয়েছে, সেখানে সম্পর্কগুলো যে খুব একটা সুস্থ তা নয়। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। মহিম লাবণ্যকে বিয়ে করে। কিন্তু আর পাঁচটা স্বামী–স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক দাম্পত্য তাদের নয়। মহিম সবসময় লাবণ্যকে সন্দেহ করে। কেন করে কেউ জানে না! সে সন্দেহ করে নারীর ভালবাসাকে। সন্দেহের বাতিক তার এতটাই চরমে ওঠে যে রাত্রে শোওয়ার সময় নিজের সঙ্গে স্ত্রীকে বেঁধে রাখে। এইরকম রহস্যপুরীতে লাবণ্যর একমাত্র সহায় মাধুরী। সে অসামান্য সুন্দরী। কিন্তু অবিবাহিতা। মহিমের বউভাতের দিন মাধুরী লাবণ্যকে ফুলসজ্জার ঘর থেকে বের করে দেয়—
‘বল দেখি আজ কার ফুলসজ্জা, তোর না আমার?’
লাবণ্য ঘরে ঢুকে দেখে সমস্ত ফুল কে যেন চটকে নষ্ট করে দিয়ে গেছে। কিন্তু কে এই মাধুরী? গল্পে পাওয়া যায়, সে নিয়োগীদের সাতপুরুষের পাপের ফসল। অর্থাৎ এই বাড়িরই কারও অবৈধ সন্তান। সম্পর্কে সে মহিমের দূর সম্পর্কের বোন। বোন হওয়া সত্ত্বেও মহিমের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল— এরকম একটা সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দেওয়া আছে গল্পে।
মাধুরী সমগ্র গল্পে যা কিছু করেছে সবই তার অতৃপ্ত কামনা থেকে। মহিম না পেরেছে মাধুরীকে ফিরিয়ে দিতে, না পেরেছে নিজের স্ত্রীকে সন্দেহের ঊর্দ্ধে উঠে ভালবাসতে। প্রতিনিয়ত আত্মদংশনে ভুগেছে। বিবেকের জ্বালায় ছটফট করেছে। আসলে মহিম নিজেকে বিশ্বাস করত না বলেই স্ত্রীকে অবিশ্বাস করত।
সুবোধ ঘোষের বিখ্যাত গল্প ‘পরশুরামের কুঠার’ -এ ধনিয়া বারবার মা হয়। কিন্তু নিজের কাছে কোনও সন্তানকে রাখেনি সে। অভাবের তাড়নায় ধনিয়া নিজের বুকের দুধ বিক্রি করত। অর্থাৎ সে বারবার গর্ভবতী হত। সন্তান প্রসব করার পর সেই সন্তানদের সে মিশনারি হাসপাতালে রেখে নিজে অদৃশ্য হয়ে যেত।
জগদীশ গুপ্তের ছোটগল্প ‘আদি কথার একটি’। এরকম গল্প বাংলা সাহিত্যে আর আছে কি না সন্দেহ। ‘আদি কথা’— ব্যাপারটা কী? আদি কথা বলতে আদম–ইভের যৌনতার কথাও হয়তো বলা হতে পারে। অথবা কোনও কোনও মানুষের basic instinct –এর কথাও বলা যায়। আদি রস মানে শৃঙ্গার রস। এই গল্পে কাঞ্চনের বয়স অল্প। তাকে সদ্য কিশোরীও বলা যায়। এই বয়সেই কিন্তু সে তার স্বামীকে হারিয়েছে। কাঞ্চনের সংসার প্রায় চলে না বললেই চলে। কিন্তু কী করবে সে? একা বিধবা মানুষ। এই অবস্থায় কাঞ্চনের অসহায়তার সুযোগ নেয় সুবল। সে কাঞ্চনের কন্যা খুশিকে বিয়ে করতে চায়। সুবল জানায় যে, বিয়ে করে সে ঘর জামাই থাকবে। খুশি এবং কাঞ্চনের ভরণ–পোষনের দায়িত্বও তার। অকূলে কূল পায় কাঞ্চন। একা থাকার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাঞ্চন তার পাঁচ বছরের কন্যা খুশির সঙ্গে বিয়ে দেয় সুবলের। একটা অদ্ভুত ব্ল্যাকমেল আছে গল্পটিতে। একটা খেলা খেলা বিয়ে হয়। আসলে ছলে বলে কৌশলে সুবল চায় তার শাশুড়ী কাঞ্চনকে সম্ভোগ করতে।
কিন্তু কাঞ্চন কিছুতেই জামাইয়ের এই নোংরা ইচ্ছেকে ইন্ধন দেয় না। সে স্পষ্ট প্রতিবাদ করে। কিন্তু ফল হয় উল্টো। সুবল খুশিকে লাথি মারে। শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। কাঞ্চন বাধ্য হয় সন্তানের জন্য আপস করতে। সে অদ্ভুত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় সে। সুবল শারীরিকভাবে কাঞ্চনের কাছে আসার জন্য কোমরে ব্যথার নাটক করে—
‘ইহাও সত্য কোমরের ব্যথাটাও মিথ্যা’।
এটাও এক বীতংস। সুবলের পাতা ফাঁদে আটকে যায় কাঞ্চন। এক অসহায় মায়ের আর্তনাদ চাপা পড়ে যায়। এই পর্যন্ত গল্পটা বেশ ঢিমে তালে চলতে থাকে। এতদূর পর্যন্ত সুবল পাঠকের কাছে সহানুভূতি পায় না। কিন্তু কাহিনির টুইস্ট অন্য জায়গায়। কাঞ্চনের মধ্যে আস্তে আস্তে সুবলের প্রতি অনুরাগ জন্মাতে থাকে। দেহচেতনার দ্বারা প্রেমচেতনা জাগ্রত হয়। সে দোলাচলতায় ভোগে। একজন মা ক্রমশ নিজের মেয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে থাকে। পাঁচ বছরের শিশুকে সামনে রেখে এক অদ্ভুত নাটক চলে তাদের মধ্যে। একই সঙ্গে মায়ের অন্তর এবং আসন্ন কিশোরীর শরীরী কামনা। একটা মেয়ের যৌনমনস্তত্ত্ব এত স্পষ্টভাবে কোনও গল্পে নেই।
সুবোধ ঘোষের বিখ্যাত গল্প ‘পরশুরামের কুঠার’ –এ ধনিয়া বারবার মা হয়। কিন্তু নিজের কাছে কোনও সন্তানকে রাখেনি সে। অভাবের তাড়নায় ধনিয়া নিজের বুকের দুধ বিক্রি করত। অর্থাৎ সে বারবার গর্ভবতী হত। সন্তান প্রসব করার পর সেই সন্তানদের সে মিশনারি হাসপাতালে রেখে নিজে অদৃশ্য হয়ে যেত। দুটো পয়সা রোজগারের জন্য সে যেত শহরের সেই বাড়িগুলিতে যেখানে সদ্য হওয়া মা–রা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে অক্ষম। সেইসব ক্ষুধার্ত শিশুদের সে স্তনদান করত এবং বিনিময়ে কিছু টাকা রোজগার করত। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বাজারে এসে গেল মায়ের দুধের বিকল্প। শহরের বাবুদের কাছে, সেই ক্ষুধার্ত শিশুদের কাছে এই ‘দুধ–মা’ –এর প্রয়োজন ফুরোলো। এরকম পতিতা এক নারী শহরের ভদ্রলোকের পাড়ার কাছাকাছি থাকে, সেটা বোধহয় খুব একটা ভাল দেখায় না। তাই পুলিশ দিয়ে তাকে উঠিয়ে বেশ্যাপল্লীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রাতে ধনিয়া দুঃস্থ বৃদ্ধ প্রসাদী–চাচার কাছে শেষ দেখা করতে গেল। চোখে তার জল। এইসব পুলিশি ঝামেলায় দুদিন ধরে বৃদ্ধের জন্যে খাবার আনতে পারেনি ধনিয়া। মৃত্যুপথযাত্রী সেই বৃদ্ধ চমকে উঠল— ‘একি? তুই ধনিয়া?
–হাঁ চাচা। আমার জাত নেই, আমি নাকি রাণ্ডি!
–ছি ছি, এ কী বলছিস?’
এরপরে যখন সত্যি সত্যি ধনিয়া মুখে রঙ মেখে বেশ্যাপল্লীর মেয়েদের মতো সাজে তখন দেখে, তার কাছে এসেছে এক তথাকথিত বাবু যাকে ছোটবেলায় নিজের বুকের দুধ খাইয়েছে সে। ধনিয়া বেশ্যা নয়। এইভাবেই সে মধ্যবিত্তের হিপোক্রেসিকে আঘাত করেছে। এর থেকে আর বড় কোনও অজাচার আছে মলে হয় না।
এরপর কয়েকটা ছোট ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক। শরদিন্দু সাহা তাঁর ‘জঠর উপাখ্যান’ গল্পে দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাই জননে অক্ষম। কাজেই ছোটভাই ও তার স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকে। এই অসম্পূর্ণ দাম্পত্যকে সম্পূর্ণ করতে উদ্যোগ নেয় বড় বউ আশাপূর্ণা। সে নীলাকে বলে— ‘আজকাল তো অনেকে শুক্রানু কিনে নেয়। তুই নিবি তোর সুবিমলদার? কেউ জানবে না।’ সরাসরি যৌনতার কথা না থাকলেও অজাচারকে প্রশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে এ অতি মারাত্মক উক্তি।
অভিজিৎ সেনের ‘বিদ্যাধরী ও বিবাগী লখিন্দর ’ আখ্যানে ভিখু তারই আত্মজা মধুমতীর কাছে তার কাপড়ের আড়ালের ‘কমলালেবু’ নিলামে চড়ায়।
রবি ঠাকুর লিখেছিলেন ‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি!’ এই সুবিশাল বাংলা সাহিত্যে কে কোথায় কোন অজাচারের কাহিনি লিখে গেছেন সেটা নিতান্তই গবেষণার বিষয়। তবে আমরা খুব স্বল্প পরিসরে বাংলা সাহিত্যের এই অনালোচিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম, যা ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ গবেষণার দাবি রাখে।