‘শেফালী’ শারদ সমারোহ

কিছুদিন আগে ‘শেফালী শারদ সমারোহ’ উদযাপন করা হয়েছিল ‘ইনফোসিস ফাউণ্ডেশন’ (বাঙ্গালোর) এবং ‘ভারতীয় বিদ্যা ভবন’-এর (বাঙ্গালোর/কোলকাতা) যৌথ উদ্যোগে, বিড়লা সভাঘরে। নবপ্রজন্মের শিল্পীদের এই অনুষ্ঠান ছিল রাগ, বিভিন্ন ধরণের গান ও কবিতা এবং স্তোত্রপাঠের এক কোলাজ। শিল্পীরা ছিলেন ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার(সরোদ), শৌনক চট্টোপাধ্যায়(কণ্ঠ) ও সাম্য কার্ফা(পাঠ)।

প্রারম্ভে রাগ শ্রী’তে ইন্দ্রায়ুধের আলাপের পর ধ্রুপদাঙ্গের জোড়ে পাখোয়াজ শৈলীতে তবলায় সুন্দর সঙ্গত করলেন দেবজিৎ পতিতুণ্ডি। শ্রী রাগে আলাপের মাধ্যমে আলাপ ও জোড়ের সেতুবন্ধন করলেন শৌণক। এরই সঙ্গে যথার্থ কণ্ঠ মডিউলেশন ও বাচনভঙ্গির সৌন্দর্যে সাম্যর পাঠ এনেছিল এক অন্য আবহ। প্রথম পর্ব শেষ হয় শ্রী রাগে ইন্দ্রায়ুধের ঝালায়।

দ্বিতীয় পর্বে সুরে সুরে বর্ষার বিদায় ও শরতের আগমন। সরোদিয়ার মতে শরতের কোন বিশেষ চিহ্নিত রাগ খুঁজে পাওয়া যায় না। শরৎ-আগমন বোঝাতে তাঁর চয়নে ছিল রাগ দুর্গা, যেটি এখানে শক্তির সঙ্গে নমনীয়তারও প্রতিচ্ছবি। বাচিক শিল্পীদের জগতে নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রজন্মের উজ্জ্বল নক্ষত্র সাম্যর চমৎকার আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথ ও সুধীন্দ্রনাথ দাশগুপ্তর রচনা মনোগ্রাহী। এরপর দুর্গারাগে গৎ(রূপক) বাজান ইন্দ্রায়ুধ এবং পরে ছিল শৌণকের আগমনী। ‘মহাকালের কোলে এসে’ গানটির পর সরোদে দ্রুত একতাল ও দ্রুত ত্রিতাল বন্দীশে ভাল লাগে দেবজিতের সঙ্গত। দুই বন্দীশের মাঝে ছিল একটি কবিতা।

তৃতীয় পর্ব ‘শৈশবের শরৎ’-এ সাম্য শোনালেন ‘এসেছে  শরৎ হিমের পরশ’ ও শৌণক গাইলেন – ‘আজ ধানের ক্ষেতে’। পরবর্তী অধ্যায়ে ছিল – সরোদবাদন, গান, আবৃত্তি ও স্তোত্রপাঠ। মল্লিকা সেনগুপ্ত ও শঙ্কর ঘোষের আবৃত্তিটির বাচনভঙ্গি ও অভিব্যক্তি ছিল প্রশংসনীয়। এরপর সরোদে মালকোষের আলাপ অন্তে, শৌণকের স্তোত্র শেষে (‘য়া চণ্ডী মধুকৈটভ’) সাম্যর ‘নিভন্ত এই চুল্লীতে’ পাঠ যেন বর্তমানের আঙিনায় দাঁড়িয়ে এক হাহাকার। সরোদে ঝাঁপতাল বন্দীশে বোলবাণীর পর সরোদের আবহেই শৌণকের ‘চণ্ডিকা মহাকালী’ বন্দীশের পরিবেশনায় সরগম ও বোলতানে।

শেষ পর্বে ত্রয়ীর পরিবেশন–নানা রূপে ভৈরবী যেখানে ছিল গিটার ও সরোদে দ্বৈত আলাপ। সরোদের আবহে শৌণকের ‘ভবানী-দয়ানী’ বন্দীশ, সাম্যর কবিতা ও স্তোত্রপাঠের পর শঙ্খধ্বনি যেন সূচনা করে অন্তিম ক্ষণ। কিন্তু এরপরেও ছিল দ্রুত ত্রিতালে ইন্দ্রায়ুধের সরোদে ভৈরবী বন্দীশ ও ঝালা এবং তবলা-সরোদে সওয়াল জবাব। এই ধরণের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় রয়েছে স্বতন্ত্রতা। যথার্থ যন্ত্রানুসঙ্গে শিল্পীরা ছিলেন– রূপক দে, তুহিন সেনগুপ্ত ও সুরজিৎ চক্রবর্তী।