‘আপনা মাংসে হরিণ বৈরী’, কথাটি হাজার বছর আগে বৌদ্ধ বজ্রযান তন্ত্রের সাধক কবির রচনা একান্ত বাস্তব থেকে আহরণ করা। প্রকৃতির নিয়মেই তৃণভোজী হরিণী মাংসাশী হিংস্র পশুর শিকার। এমনকী তা থেকে কথামালা গল্পের একচক্ষু হরিণেরও রেহাই নেই। মানব সমাজেও তার ব্যতিক্রম নেই। পাষণ্ড প্রকৃতির অবারিত লোলুপতা নিরীহ অরক্ষিতাকেই বলপূর্বক গ্রহণে তৎপর। তাই নিয়ে ব্যর্থ অস্ফালনের আর শেষ নেই।
সম্প্রতি কলকাতা নগরী কল্লোলিনী হয়ে ওঠে প্রতিবাদের উত্তাল সংক্ষোভে আরজি কর কলেজে এক ডাক্তার নারীকে রাতের অন্ধকারে অরক্ষিত অবস্থায় নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায়। কলকাতায় সম্মিলিত নারী মিছিলে কলরব উঠেছিল, ‘রাত দখল’ করো। কিন্তু মুশকিল হলো রাত দখলের আগে যে ‘দিন দখল’ করার বিশেষ প্রয়োজন, সেকথা খেয়াল থাকে না। কারণ দিন-দুপুরেও দুষ্কৃতির তৎপরতা কিছু কম নয়। আমাদের দেশে অফিস স্কুল কলেজে তার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত বর্তমান।
সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা বিরল নয়। তা নিয়ে দিনকতক হই চই হওয়ার পর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরে থেকে যায়। বম্বেতে রঙ্গা ও বিল্লার দিনদুপুরে বীভৎসতার পরে দিল্লিতে রাতের অন্ধকারে অভয়া কাণ্ড ঘটায় সমাজ ও সমাজমাধ্যমে আলোড়নের সৃষ্টি হয় এবং নতুন নতুন আইন তৈরির ধূম পড়ে যায়। আইনের মুশকিল হচ্ছে, আইন খাতায় কলমে লেখা থাকে কিন্তু তার Letter-এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে Spirit-টা হারিয়ে যায়। এই নতুন নতুন আইন সৃষ্টি করে সরকার নিজের গা বাঁচাতে চেষ্টা করে। এবং সেই আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে দুষ্কৃতি অনায়াসে মুক্তি পেয়ে আইনের অপশাসনকে মূর্ত করে তোলে।
কলকাতায় পূর্ববর্তী ধর্ষণের ঘটনার পর কোনও অভিনেতা নাকি বলেছিলেন, তাঁর পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ হচ্ছে। একথা তাঁর খেয়াল হয়নি যে, বিষয়টি মোটেই পুরুষ নারীর বিষয় নয়, বিষয়টি সমাজবিগর্হিত অপরাধজনিত। কেননা সম্পদ অর্জন খুবই গৌরবজনক হলেও চৌর্যবৃত্তির দ্বারা অপরের সম্পদ সংগ্রহ অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজনেই অপরাধের দণ্ডবিধান প্রয়োজন।
‘সৃষ্টির প্রাঙ্গণে দেখি দুটিরে মিশানো নিয়ে খেলা’— নারী ও পুরুষ এই দুটির মিলনেই নবজন্মের সৃষ্টির ধারা অব্যাহত। শুধু মানবসমাজে নয়, প্রাণীজগতে এমনকী উদ্ভিদের মধ্যেও সেই একই ধারা প্রবাহিত। ফুলের সৌন্দর্যের চমক অলিকে প্রলুব্ধ করে পরাগ সঞ্চারণে ফলের সম্ভাবনাকে পরিণত করতে। মানব সমাজেও নারীর সৌন্দর্য রূপমুগ্ধ কবিকে আবহমানকাল ধরে প্রলুব্ধ করেছে অসংখ্য গাথা নির্মাণ করতে। তার মূলে আছে মিলনের বার্তাবহ কাম বা তার পরিশীলিত রূপ প্রেম।
অনিচ্ছুক বলপূর্বক গ্রহণের নামই বলাৎকার। তার বিপরীতে আছে, যুগযুগ ধরে উভয়ের সম্মতিতে গান্ধর্ব বিবাহের ঘটনা যা মহাভারতের আমল থেকে আজ পর্যন্ত অব্যাহত। মহাভারতে গান্ধর্ব বিবাহের ছড়াছড়ি কিন্তু একটিই ধর্ষণের কথা আছে। বিরাটরাজার ঘরে সৈরিন্ধ্রিবেশী দ্রৌপদীকে লালসাকাতর রাজশ্যালক কীচকের ধর্ষণের চেষ্টা ও ভীম কর্তৃক তার মাংসপিণ্ডে পরিণত হওয়া। আসলে সেটাই ধর্ষকের অবধারিত শাস্তি।
ভারতীয় ভাবনায় চতুর্বর্গ ফল লাভে জীবনযাপনের মধ্যে আছে, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। অনেকের সমুচ্চভাবনায় ‘কাম’ নিন্দনীয় হলেও, ভারতীয় ধারায় তার উচ্চ আসন বিদ্যমান। এমনকী ঋষি বাৎস্যায়ন ‘কামশাস্ত্র’ রচনা করে তার বিচিত্রবিভবের বর্ণনা করেছেন।
তবে জীবনের প্রথম পুরুষার্থ হল ধর্ম অর্থাৎ ন্যায়পরতা, তার পরে অর্থ ও কাম। অর্থ বিনা জীবনযাপন অসম্ভব এবং তার পরেই আসে কাম, ব্যাপকার্থে আনন্দ। এই আনন্দলাভই জীবনের ও জীবনধারণের প্রেরণা। তবে সমাজে এই অর্থ ও কাম একান্তভাবেই ধর্ম দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ সেখানে আগ্রাসী সুবদ্ধতার কোনও স্থান নেই। ঈশোপনিষদে স্পষ্ট বলা আছে মা গৃধঃ কস্যসিদ্ধনম্। অর্থাৎ অন্যের ধনে লোভ করবে না। কিন্তু চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি, শিক্ষিত, অভিশিক্ষিত, ধনহীন ধনবার চরিত্রবান চরিত্রহীন নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনধিকারের বস্তুক অধিকারে আনতে।
সুস্থ সমাজজীবনে লুব্ধ কামনা যদি সোজাপথে নিজের উদ্দেশ্য করতে না পারে তাহলেই বক্রপথের আশ্রয় নেয় এবং চোর সিঁধকাটির আশ্রয় নেয়। মূর্খেরা মূর্খের মতো ও শিক্ষিতেরা তাদের অপবুদ্ধির সিঁধকাটি দিয়ে কার্যোদ্ধার করার চেষ্টা করে। আর আগ্রাসী কামনাতর চোরের মতোই বলপূর্বক তার ইচ্ছা পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়ে অরক্ষিত নারীর ওপর ধর্ষণের পৈশাচিক আনন্দে।
সুতরাং এই ধর্ষণের মধ্যে নারী-পুরুষ স্বাভাবিক সম্পের্কের কোনও কথা নেই। আছে তার বিচ্যুতিতে অপরাধের কথা। অনিচ্ছুক বলপূর্বক গ্রহণের নামই বলাৎকার। তার বিপরীতে আছে, যুগযুগ ধরে উভয়ের সম্মতিতে গান্ধর্ব বিবাহের ঘটনা যা মহাভারতের আমল থেকে আজ পর্যন্ত অব্যাহত। মহাভারতে গান্ধর্ব বিবাহের ছড়াছড়ি কিন্তু একটিই ধর্ষণের কথা আছে। বিরাটরাজার ঘরে সৈরিন্ধ্রিবেশী দ্রৌপদীকে লালসাকাতর রাজশ্যালক কীচকের ধর্ষণের চেষ্টা ও ভীম কর্তৃক তার মাংসপিণ্ডে পরিণত হওয়া। আসলে সেটাই ধর্ষকের অবধারিত শাস্তি।
অনেক সুসভ্য লোকের অসভ্য যুক্তি যে, ধর্ষকের ফাঁসি হলেই কি ধর্ষণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। না হবে না। কেননা শরীরের সঙ্গেই যেমন শরীরের বিকৃতি অসুখ আসে এবং একটি অসুখ ওষুধে সারলেও চিরজীবনের মতো নিরোগ হওয়া যায় না। কিন্তু তৎকালীন নিরাময়ই, সুস্বাস্থ্যের বিশেষ প্রয়োজন। সামাজিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধেও একই কথা। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্য কর্তব্য।
বর্তমান আইনের অপব্যাখ্যায় দীর্ঘায়িত বিচারব্যবস্থায় কালক্ষেপে অপরাধীর মুক্ত হওয়ার সুযোগ না দেওয়াই যথাযথ ব্যবস্থা। আবার কোনও কোনও বিজ্ঞ বিচারপতির মতে ধর্ষককে বিয়ে করে ধর্ষণের চিরাচরিত অধিকার দেওয়াই নাকি পরিত্রাণের উপায়। ধর্ষণ কেন হয় তার মনস্তাত্ত্বিক, দেহতাত্ত্বিক, সমাজতাত্ত্বিক বহু বিচার আছে। কিন্তু অত্যন্ত সূক্ষ্ণ বিচারের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আমাদের খোলা চোখে যা দেখা যায় তা হচ্ছে সুযোগসন্ধানী লোভীর নিষ্ঠুর কামনার বশবর্তী প্রবৃত্তির তাড়না অরক্ষিত শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটা শুধু নির্জন পথে ঘটেঘাটে নয়। সুরক্ষিত অফিসে কলেজে দিনেদুপুরেও আকছার ঘটছে। তার মূলে আছে সামাজিক সুরক্ষার অভাব। তাই Sexual harassment-এর আইন থাকলেও, এই অপরাধের কিছুমাত্র কমতি নেই। তার কারণ বর্তমান সমাজব্যবস্থায় সামাজিক সুরক্ষার একান্ত অভাব। অথচ জানান দিয়ে ডাকাতি করার রঘু ডাকাত বা বিশে ডাকাতদের কালেও ডাকাতির সময়ে নারীর সম্ভ্রমহানির কোনও ঘটনা থাকত না।
যুগ যুগ ধরে ন্যায়বোধ নিয়ন্ত্রিত পারিবারিক আদর্শ যে সামাজিক শাসনকে সুরক্ষিত করত তার করুণ অবসানে পলিটিক্যাল ‘জোর যার, মুল্লক তার’ নিয়ম প্রতিষ্ঠালাভ করল। সেখানে ন্যায়নীতি, উচ্চনীচ, সভ্যতা অসভ্যতা সকলই সংগ্রামে জলাঞ্জলি দিয়ে বামপন্থী মাৎস্যন্যায় প্রবল হয়ে উঠল। শ্রেণিশত্রুর নাম করে প্রতিষ্ঠিত গুণ্ডা রাজনীতির ফলে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সুবিধি তথা সুরক্ষাকে ধূলিসাৎ করা হল। তার অবাবে আজ ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’।
তারাশঙ্করের গল্পে আছে রাঢ় অঞ্চলে একসময় মানষুড়ে নামে এক ধরনের গুণ্ডাচোর ছিল যারা একাকী পথযাত্রী পেলে একরকম বাঁশের টুকরো ছুঁড়ে যাত্রীকে কুপোকাত করে, তার সর্বস্বাপরণ করত। আইনের শাসনে তাদের অপসারণে, সামাজিক সুরক্ষায় সেই ঘটনার আশঙ্কার কোনও কারণ আর নেই। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার অভাবে ‘পলিটিক্যাল বাহুবলী’দের আক্রমণে নারী ধর্ষণের ঘটনার আর শেষ নেই।
অতীতকাল অবশ্যই একেবারে সুখস্বর্গ ছিল না। তবে কিছু অপরাধমূলক চুরি, জোচ্চুরি, ধর্ষণ কিন্তু সমাজের মধ্যে প্রকাশ্যে হত না, যা কিছু হতো সংগোপনে প্রান্তসীমায় সমাবদ্ধ থাকত। এখনকার মতো বুক ফুলিয়ে সমাজের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে চোরের মায়ের বড়ো গলা ফাটানোর উপায় থাকত না।
অবশ্য এটি বর্তমানে সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রগতিশীল রাজনীতির ছত্রছায়ায় পুলিশি আশ্রয়ে লুম্পেনদের দাপাদাপিতে। রাজনীতিতে সমাজবিরোধীদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু তারা ছিল কঠিন শাসনে আজ্ঞানুবর্তী। কিন্তু বামপন্থী বিপ্লবের ফলে সমাজবিরোধীরা সদর্পে মাথায় চড়ে বসেছে। সেই জন্যেই আজ আমাদের সমাজে ফাটাকেষ্ট, গোটাগোষ্ট, কলিমুদ্দিন, শামসুদ্দিনদের এত প্রতাপ। সংবাদে প্রকাশ, একবার হুগলির এক বামপন্থী এমপি নাকি দারোগাকে সদর্পে শাসিয়েছিল, আমার কথা না শুনলে তোর সামনে তোর বউকে রেপ করব। বোধহয় ওই একটি ইংরেজি শব্দই তার আয়ত্ত ছিল।
প্রগতিশীল রাজনীতিতে এই রেপ ও মার্ডার, সংগ্রামের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। যেখানে খুন ধর্ষণ সরকারি সংগ্রামের হাতিয়ার হয়, সেখানে পলিটিক্যাল গুণ্ডামির আগ্রাসী ব্যবস্থায় সামাজিক সুরক্ষার বেড়াগুলি যে ভেঙে খান খান হয়ে যাবে তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যুগ যুগ ধরে ন্যায়বোধ নিয়ন্ত্রিত পারিবারিক আদর্শ যে সামাজিক শাসনকে সুরক্ষিত করত তার করুণ অবসানে পলিটিক্যাল ‘জোর যার, মুল্লক তার’ নিয়ম প্রতিষ্ঠালাভ করল। সেখানে ন্যায়নীতি, উচ্চনীচ, সভ্যতা অসভ্যতা সকলই সংগ্রামে জলাঞ্জলি দিয়ে বামপন্থী মাৎস্যন্যায় প্রবল হয়ে উঠল। শ্রেণিশত্রুর নাম করে প্রতিষ্ঠিত গুণ্ডা রাজনীতির ফলে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সুবিধি তথা সুরক্ষাকে ধূলিসাৎ করা হল। তার অবাবে আজ ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’।
সমাজের বুকে বসা এই বাহুবলীর নগ্ন রাজত্বের অবসান কোনও আইন রচনার নলচের আড়াল দিয়ে সম্ভব নয়। পুলিশ দিয়ে গ্রামকে গ্রাম ঘিরে ফেললেও তা সম্ভব নয়। আমাদের গ্রামীণ সমাজেও যে সামাজিক সুবিধির শাসনে অপরাধী অন্যায় করতে ভয় পেত সেই সামাজিক বিধিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। পারস্পরিক সুস্থ সম্পর্কের ন্যায়পরতায় অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তাকে সজ্ঞানে কার্যকরী করা বিধেয়।
একদিন বঙ্গদেশে নগর কিংবা গ্রামে পরিবারভিত্তিক যে সামাজিক সুরক্ষাবিধি গড়ে উঠেছিল তার মূলে ছিল রামায়ণ, মহাভারতের আদর্শ পারিবারিক ন্যায়নীতির ওপর শ্রদ্ধা। বনচারী পশু হিংসার পর্যায়ের পর কৃষিভিত্তিক মানবসমাজের সবচেয়ে বড়ো দান হলো পরিবার ও পরিবারভিত্তিক গোষ্ঠীসমাজের ন্যায় অন্যায় বোধ। সেটি অনুসৃত হত রামায়ণ মহাভারতের অদর্শে। সেই জন্যে এস ওয়াজেদ অলি তাঁর ভারতবর্ষ প্রবন্ধে লেখেন, সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে— একসময় দিনের শেষে বাবা তাঁর ছেলেকে রামায়ণের যে পাঠ দেন, অনেক বছর বাদে লেখক সেখানে দেখেন একইভাবে কাব্যপাঠ হচ্ছে। কেবলমাত্র পাঠক শ্রোতার পরিবর্তন হয়েছে। সেদিনের বালক আজ প্রৌঢ় পাঠক এবং শ্রোতাটি পরিবারের নব আগন্তুক।
সমাজে প্রোথিত তথা মানব সম্পর্কের সেই মূল্যবোধ না ফেরাতে পারলে, বাইরের কোনও আইন দিয়েই এই সর্বনাশের মূলোচ্ছেদ করা যাবে না। একটা সহজ উদাহরণ। শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের কাছেই ছিল সোনাগাছির নিষিদ্ধপল্লী। কিন্তু স্কুলে কোনও যৌনশিক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেও সুকুমারমতি বালকেরা কেন কোনওরকম বেষ্টনী ছাড়া বিপথচালিত হতে প্রবৃত্ত হতো না? তার একটিই কারণ, অলিখিত সামাজিক সুবিধি চর্চিত হত বিদ্যালয়ের উন্নত আদর্শ এবং পারিবারিক সুশিক্ষায়।
বর্তমান বিষম বিপদকালে এই বিপত্তিতে আমাদের নজর দিতে হবে সেই সামাজিক সদাচার যাতে শিশুকাল থেকেই পরিবার ও শিক্ষালয়ের একান্ত যত্নে সকলের মধ্যে সদাচার সুগ্রথিত হতে পারে। ভুললে চলবে না, কবির কথা—
‘এ আমার, এ তোমার পাপ
বিধাতার বক্ষে এই তাপ
বহু যুগ হতে জমি বায়ুকোণে আজিকে ঘনায়—
ভীরুর ভীরুতাপুঞ্জ প্রবলের উদ্ধত অন্যায়
লোভীর নিষ্ঠুর লোভ
বঞ্চিতের নিত্য চিত্তক্ষোভ,
জাতি অভিমান,
মানবের অধিষ্ঠাত্রী দেবতার বহু অসম্মান
বিধাতার বক্ষ আজি বিদীরিয়া
ঝটিকার দীর্ঘশ্বাসে জলে স্থলে বেড়ায় ফিরিয়া।’