আগেরবারই ছবি বিশ্বাসকে নিয়ে বলেছিলাম যে, উনি আমাদের পরিবারের সঙ্গে কীরকম ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ওঁকে নিয়ে দুটি ঘটনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে ইচ্ছে করছে।
একটি ঘটনার কথা অবশ্য আমার মনে নেই, কারন তখন আমি খুবই ছোট। পরে শুনে আমার খুব মজা লেগেছিল।
১৯৫৪ সাল। বিকাশ রায়ের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’তে আমরা তিন ভাই-বোন ও আমাদের প্রতিবেশী কয়েকজন ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে সকলেই অভিনয় করছি, ছবি জ্যেঠুরও ইচ্ছে এই ছবিতে অভিনয় করার। একটা নেমন্তন্ন বাড়ির সিন, আমাকে কোলে নিয়ে ছবি জ্যেঠু সটান বিকাশ জ্যেঠুর কাছে এসে বললেন, ‘আমার পার্ট চাই।’
বিকাশ জ্যেঠু বললেন, ‘আপনার পার্ট নেই।’
ছবি জ্যেঠুঃ পাহাড়িকে বাদ দিয়ে আমাকে নে।
বিকাশ জ্যেঠুঃ পাহাড়িদার ৩/৪ দিনের শুটিং হয়ে গেছে, বাদ দেওয়া যাবেনা।
ছবি জ্যেঠুঃ তাহলে ভানুকে বাদ দিয়ে আমাকে নে।
বিকাশ জ্যেঠুঃ অসম্ভব, ভানুর ইম্পর্টেন্ট রোল, তার ওপর বাঙ্গাল চাকরের পার্ট, আপনি বাঙ্গাল ভাষা বলবেন কেমন করে?
ছবি জ্যেঠুঃ ওটা ঘটি চাকর বানিয়ে দিন।
বিকাশ জ্যেঠুঃ না না, আপনি যান তো, ডিসটার্ব করবেন না, ভূটিকে আদর করতে হয়, ভানুর বাড়ি গিয়ে করুন।
ছবি জ্যেঠু অভিনয়ের সময় নানা প্যাঁচ করতেন, তাতে সহ-অভিনেতাদের খুব অসুবিধে হত। একবার এক নাটকে বাবা জ্যেঠুর কাছে ভাড়া চাইতে গেছেন। ওনার টানাটানির সংসার, ভাড়া দিতে পারে না। বাবা রাগারাগি করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, জ্যেঠু থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আহা রাগ করবেন না, চা খেয়ে যান।’
এই ঘটনাটা ভাবলে আমার গর্ব হয় যে ওই স্তরের একজন অভিনেতা আমার সঙ্গে কাজ করতে চাইছেন! আর তাছাড়া আরও একটা দিক বেরিয়ে আসে যে, তখনকার দিন বলেই এরকম কথাবার্তা বলা যেত, যা আজকের দিনে কল্পনাও করা যায় না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি হল ছবি জ্যেঠু অভিনয়ের সময় নানা প্যাঁচ করতেন, তাতে সহ-অভিনেতাদের খুব অসুবিধে হত। একবার এক নাটকে বাবা জ্যেঠুর কাছে ভাড়া চাইতে গেছেন। ওনার টানাটানির সংসার, ভাড়া দিতে পারে না। বাবা রাগারাগি করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, জ্যেঠু থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আহা রাগ করবেন না, চা খেয়ে যান।’
বাবাঃ না, আমি চা খাব না।
জ্যেঠুঃ তাহলে ডাব খেয়ে যান।
বাবাঃ তাহলে চা আর ডাব দুটোই দিন।
জ্যেঠু গলা নামিয়ে বললেন, ভাল দিলি তো, এটাতো ডায়লগ ছিল না।
কিন্তু উনিও তো ছেড়ে দেবার পাত্র নন।
পরের দিন স্টেজে ভাড়া নিয়ে দু-চারখানা কথা চলছে,, উনি চুপ করে আছেন, কিছুই বলছেন না। বেশ খানিক্ষন বাদে বললেন – আপনার নাম কি?
বাবাঃ কৃতান্ত বিশ্বাস।
জ্যেঠুঃ কাউকে সহজে বিশ্বাস করবেন না।
বাবাঃ ঠিক আছে, আপনার উপদেশ মনে রাখব।
জ্যেঠুঃ আবার খামোখা অবিশ্বাসও করবেন না।
বাবাঃ বেশ, তাই হবে।
এগুলো সবই জ্যেঠু বানিয়ে বানিয়ে বলছেন। এবার বললেন,‘বিশ্বাসও করবেন না, অবিশ্বাসও করবেন না, তাহলে কী করবেন?’
বাবা কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, ‘আমার অন্যায় হয়ে গেছে।’
জ্যেঠু তখন আস্তে আস্তে বললেন, ‘বল, বাড়ি গিয়ে বলব।’
সে যাত্রা বাবা তা-ই বলে রক্ষে পেলেন।
এইসব সিচ্যুয়েশন তৈরির কথা এখন ভাবাই যায় না।