ক্রিকেট মাঠে রাজা বিরাট কোহলিকে দেখলেই দর্শকরা উল্লাসে মেতে উঠতেন গ্যালারিতে৷ সেই বিরাট একেবারে নীরবে ভারতীয় ক্রিকেট টেস্ট যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন৷ বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দাঁড়ি পড়ে গেল৷
হঠাৎ এই বার্তায় সবাই অবাক হয়ে গেলেন৷ কেউই অনুভব করতে পারেননি এই মুহূর্তে বিরাট কোহলি এমন একটা বিরাট ঘোষণা করবেন৷ ক্রিকেট আকাশে নেমে এল একরাশ কালো মেঘ৷ হতাশায় সবাই ভেঙে পড়লেন৷ আর কিছুদিন বাদেই ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারতীয় দল৷ সেই ভারতীয় দলকে হয়তো নেতৃত্ব দিতে ডাকত পড়ত বিরাট কোহলির৷ এই তো কিছুদিন আগেই বন্ধু রোহিত শর্মা আর টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন না জানিয়ে দেন৷ তাই ভারতীয় দলে এমন পরিস্থিতিতে কে নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না৷ অনেকে ভেবেছিলেন, বিরাট কোহলি আবার অধিনায়কের ব্যাটনটা নিয়ে ইংল্যান্ডে উড়ে যাবেন৷ কিন্তু না, কারোর কথা তিনি শুনলেন না৷ বিরাট নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দিলেন, আর নয়৷ আমি আর টেস্ট ক্রিকেটে খেলব না৷ অবসরের বার্তায় ক্রিকেট ভক্তদের চোখে জল চিকচিক করে উঠল৷ বিনা মেঘে বজ্রপাত৷ সবাই কেমন যেন দিশেহারা হয়ে গেলেন৷
ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি শতরান করার কৃতিত্ব তাঁর৷ টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ২০টি শতরান করেছেন৷ ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্টে রান করার কৃতিত্ব বিরাটের৷ টেস্টে তাঁর ৫৮৬৪ রান রয়েছে৷ টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে কোহলির ঝুলিতে রয়েছে সাতটি দ্বিশতরান৷ অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি দ্বিশতরান করার কৃতিত্ব কোহলির৷
বিরাট বলতেই একটা উজ্জ্বল তারকা৷ অনন্য নজির৷ একটা ভরসা৷ ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ব্যাটিং করার প্রবণতা বিরাট কোহলিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে৷ তাই বিরাট বলতেই একটা আবেগ৷ একটা ভালোবাসা৷ একটাই আন্তরিকতা৷ তাই বিরাট টেস্ট ক্রিকেট থেকে এতো তাড়াতাড়ি ছুটি নিতে পারেন কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না৷
যেদিন মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত থেকে বিরাট কোহলি অধিনায়কের ব্যাটনটা তুলে নিয়েছিলেন,সেদিন থেকেই কোহলির প্রেমে ক্রিকেট ভক্তরা হাবুডুবু খেয়ে চলেছেন৷ ২০১৪ সালে তাঁর হাতে জ্বলজ্বল করে ওঠে অধিনায়কের ব্যাটনটা৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তাঁর হাতে থেকেই আর্মব্যান্ডটা শোভা পেয়েছিল৷ তার আগ্রাসী ভূমিকা সবার কাছে অন্য বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল৷ এক কথায় বলা যায় তাঁর অধিনায়কত্বে ভারতে টেস্ট ক্রিকেটে সোনালী দিনে উদ্ভাসিত ছিল৷ তাঁর ফিটনেস নিয়ে কোনও কথা হবে না৷ তাঁর একাগ্রতা তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে আদর্শ৷
অধিনায়ক কোহলি দেশের অন্যতম সেরাদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবেন৷ তিনি ৬৮টি টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ ৪০টি টেস্ট ম্যাচে জয়ের আলো দেখেছেন৷ ১১টি ম্যাচে কোনও ফয়সালা হয়নি৷ ১৭ টেস্ট ম্যাচে হারতে হয়েছে৷ অবশ্যই ঘরের মাঠে তাঁর জয়ের পরিসংখ্যান অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়৷ ঘরের মাঠে তিনি ৩১টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ আর জিতেছেন ২৪টি ম্যাচে৷ তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় কত বড় মাপের অধিনায়ক ছিলেন বিরাট কোহলি৷ বিদেশে ৩৬টি টেস্ট ম্যাচে ১৬টিতে জয় পেয়েছেন৷ বিদেশের মাটিতে সৌরভের নেতৃত্বে ভারতীয় দল যতগুলি ম্যাচ জিতেছিল, তাকে ছাপিয়ে গিযেছেন বিরাট কোহলি৷ টেস্ট ক্রিকেটে বিরাট কোহলির বর্ণময় খেলা সবাইকে স্বপ্ন দেখাতে জানে৷ অসংখ্য নজির আর দুরন্ত ব্যাটিং ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে৷ ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে এক ক্যালেন্ডারে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করেন বিরাট কোহলি৷ পাশাপাশি, অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেছেন৷ ২০১৯ সালে দক্ষিণ আপ্রিকার বিরুদ্ধে অপরাজিত ২২৪ রান বিরাটের নামের পাশে আজও লেখা আছে৷ শুধু তাই নয়, ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি শতরান করার কৃতিত্ব তাঁর৷ টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ২০টি শতরান করেছেন৷ ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্টে রান করার কৃতিত্ব বিরাটের৷ টেস্টে তাঁর ৫৮৬৪ রান রয়েছে৷ টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে কোহলির ঝুলিতে রয়েছে সাতটি দ্বিশতরান৷ অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি দ্বিশতরান করার কৃতিত্ব কোহলির৷
অধিনায়ক হিসেবে ছ’টি দ্বিশতরান করেন৷ ভারতের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড রয়েছে কোহলির দখলে৷ আবার কোহলি টানা চারটি টেস্ট সিরিজে দ্বিশতরান করে বিরল রেকর্ড গড়ে রেখেছেন৷ ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আইসিসি টেস্ট রাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট পান বিরাট কোহলি৷ অর্থাৎ বিরাট নামের মধ্যে কোথায় যেন একটা মাহাত্ম্য লুকিয়ে রয়েছে৷ এশিয় মহাদেশে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজে রেকর্ড গড়েন বিরাট কোহলি ২০১৮- ১৯ সালে৷ আবার টানা ন’টি টেস্ট ম্যাজ জেতার অনন্য নজির রয়েছে বিরাট কোহলির ঝুলিতে৷
১৪টা বছর কেটে গিয়েছে ক্রিকেট মাঠ বিরাট কোহলির৷ কখনও শান্ত৷ কখনও মেজাজি৷ আবার ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় ড্রেসিং রুমে সবার আপনজন৷ বর্ণময় জীবন বিরাট কোহলিকে সবসময় অন্যভাবে পরিচিত করেছে৷ বিরাটের বিরাট হৃদয় সবসময় কথা বলেছে৷ প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে সাহসী ও সংগ্রামী মনোভাব ছিল কোহলির একটা গুণ৷ দেশের জন্যে কোনও আপস নয়৷ জীবনকে বাজি রেখে খেলেছেন৷ দেশের সম্মানকে সবচেযে বড় জায়গা দিয়েছেন৷
বিরাট কোহলি বলতেই নায়ক৷ অস্ট্রেলিয়ার উইকেট ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে কোহলি সবচেযে বেশি শতরান করার কৃতিত্ব৷ সাতটি শতরান করে ক্রিকেট রাজা হিসেবে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন৷ আসলে কোহলির আগ্রাসী ভূমিকা উপভোগ করেছে ক্রিকেট দুনিয়া৷ তাঁর মেজাজটাই আসল রাজার৷ পাশাপাশি তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিং সারা মাঠ মাতিয়ে রাখতো৷ তাই তো টেস্ট ক্রিকেট বিদায় বেলায় অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে ‘২৬৯ সাইনি অফ’ কথাটা লিকে ফেললেন। আচমকা এই কথাটার পিছনে কোহলির রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ২৬৯টা ম্যাচ কেলে মাঠ বন্ধুদের অভিনন্দন জানালেন৷ নিজের মনটাও ভারাক্রান্ত হয়েছিল৷ আর তিনি তাঁদের গর্জন শুনতে পারবেন না গ্যালারি থেকে৷ হাত নাড়িয়ে বলতে পারবেন না ফেন্সিংয়ের ধারে গিযে তোমরাই আমার অনুপ্রেরণা৷ নিজের গায়ে ১৮ নম্বর জার্সিটায় আর চুম্বনে ভরিয়ে দেবেন না৷ ১৪টা বছর কেটে গিয়েছে ক্রিকেট মাঠ বিরাট কোহলির৷ কখনও শান্ত৷ কখনও মেজাজি৷ আবার ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় ড্রেসিং রুমে সবার আপনজন৷ বর্ণময় জীবন বিরাট কোহলিকে সবসময় অন্যভাবে পরিচিত করেছে৷ বিরাটের বিরাট হৃদয় সবসময় কথা বলেছে৷ প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে সাহসী ও সংগ্রামী মনোভাব ছিল কোহলির একটা গুণ৷ দেশের জন্যে কোনও আপস নয়৷ জীবনকে বাজি রেখে খেলেছেন৷ দেশের সম্মানকে সবচেযে বড় জায়গা দিয়েছেন৷ দেশের পতাকা আমাদের গর্ব৷ ভারতবর্ষ মহান৷ এই আদর্শে নিজেকে উজাড় করে দিযেছেন ক্রিকেট মাঠে বিরাট কোহলি৷ তাঁর আন্তরিকতা ও জেদ বিরাটকে বিরাট করে তুলেছে৷ ক্রিকেট বন্ধুরা যেভাবে পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেছেন, সেই কথা কোনও দিনই ভুলে থাকতে পারবেন না৷ তাই তাঁদের স্যালুট জানিয়ে বিরাট কোহলি বলেছেন— জয় হোক ভারতীয় ক্রিকেটের৷