সন্ধে পেরিয়ে রাতের দিকে এগিয়ে চলেছে ঘড়ির কাঁটা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় তখন বেজায় কাবু অসহ্য পেটের যন্ত্রণায়। ওয়েলিংটন স্ট্রিটের বিশাল বাড়িতে তখন হাজারো ডাক্তারের ব্যস্ততা। উদ্বিগ্ন মুখের আনাগোনা।কিছুতেই কমছে না যন্ত্রণা। ক্রমশ যন্ত্রণায় কাবু আর দুর্বল হয়ে পড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
জ্ঞানরঞ্জন নিয়োগী তখন ডা. বিধান রায়ের তথা রায়বাড়ির প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ডা. বিধান রায়ের খুব কাছের মানুষ। অস্থির হয়ে গাড়ি নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের দিকে। গাড়ি গিয়ে থামল এক কবিরাজের চেম্বারের সামনে। ব্যস্ত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে এলেন জ্ঞান নিয়োগী মশাই। চেম্বারে উপবিষ্ট সেই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন কবিরাজ শৈলেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। চেম্বার ভর্তি রোগী, তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জ্ঞানী নিয়োগী বললেন— ‘শলু মশাই আপনাকে তো একবার যেতেই হয়’।
অবাক শৈলেশচন্দ্র। উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞাসা করলেন- ‘কোথায়?’
-আমাদের সি.এম স্যার খুব অসুস্থ। পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন!
-সে কি?আর সব বড় বড় ডাক্তাররা কী করছেন তাহলে?
-সে বলতে পারব না, আপনাকে এক্ষুনি একবার যেতেই হবে। অগত্যা শলু মশাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠলেন। সন সন করে গাড়ি ছুটে চলল ওয়েলিংটনের দিকে। বাড়ির গেটে গাড়ি থামতেই তড়িৎ গতিতে নামলেন জ্ঞান নিয়োগী মশাই। সঙ্গে সৌম্য দর্শন সুপুরুষ কবিরাজ মশাই।
দোতলার দক্ষিণ দিকের ঘরে শায়িত বিধান চন্দ্র। আগাগোড়া বিধানবাবুকে ভালো করে দেখলেন কবিরাজ মশাই, বিধানচন্দ্র তখন যন্ত্রণায় ঘামছেন।
কবিরাজ মশাই হাঁক পাড়লেন-এক্ষুনি গরম জল আর সাবান চাই।
গরম জল এল। সাবানও এল। ঘরে এক পরিচারক ছাড়া শলু মশাই সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। তারপর বিধানচন্দ্রকে অবাক করে নিজের হাতে ডুস দিলেন।একবার নয়। দু-দু’বার।একটু পরেই বেশ ক’দিনের জমা মল-বাহ্যি সবকিছু বেরিয়ে এল।
পেট অনেকটা পরিষ্কার হতে আরামের শব্দ বেরিয়ে এল ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের মুখ থেকে। একরাশ স্বস্তি নিয়ে ডা. বিধান রায় কবিরাজ মশাইকে জিজ্ঞেস করলেন-আপনি বুঝলেন কী করে পেটে পচা মল জমে ছিল?
দীর্ঘকায় সৌম্যদর্শন কবিরাজ শৈলেশচন্দ্র বললেন-ঘরে ঢুকেই আমি আপনার ঘাম থেকে এই গন্ধটা পেয়েছিলাম। তাই চেষ্টা করে দেখতেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।
রসিক বিধানচন্দ্র রায় এবার জিজ্ঞেস করলেন, পথ্য কী চলবে?
মুচকি হাসি দিয়ে সটান জবাব কবিরাজ মশাইয়ের- যেমন করে নেহেরুকে আপনি ভালো করে দিয়েছিলেন। আপনার চিকিৎসা আপনাকেই ফিরিয়ে দিলাম।– শুধু ডাবের জল, সঙ্গে বাংলার মানুষের প্রতি আপনার একান্ত আশীর্বাদ।
লেখকঃ কবিরাজ শৈলেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পৌত্র (মেহেরপুর রাজবাড়ির ছোটকুমার)।