রাতজাগা পাখিটা এক অপার্থিব সুরে দিব্যর মরচে-পড়া মন-সেতারের তারে কী এক আশার ধুন তুলে দিয়ে উড়ে চলে গেল৷ দিব্য ঘড়ি দেখল৷ ভোর প্রায় পাঁচটা৷ লাগোয়া বারান্দায় এসে দাঁড়াল৷ সারবাঁধা ফুলের টবগুলোর দিকে ব্যথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল৷ হঠাৎই চোখে পড়ল একটা গাছের পাতায় অবগুণ্ঠিতা একটা ছোট্ট কুঁড়ি৷ ইন্দুর কথাগুলো মনে পড়ে গেল৷
ইন্দু যেদিন বড় হল সেদিন থেকে দিব্যর প্রতি জন্মদিনে ও একটা টবে বসানো ফুলগাছ দিয়ে যেত৷ কখনও বা পাঠাত৷ আর সঙ্গে একটা চিরকুট৷ সেখানে রবি ঠাকুরের গান বা কবিতার দু-চার কলি৷ বলেছিল,
—দিব্যদা প্রত্যকেটা গাছে একবার করেই ফুল ফুটবে৷ আর সেদিন তোমার মনের একটা ইচ্ছা পূর্ণ হবে৷ দেখো…
কিন্তু দিব্য কোনওদিনই কোনও ইচ্ছাপূরণের দাবি জানায়নি৷
‘ষোলোকলা’ মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিংয়ের ছ’তলায় দিব্যরা আর চারতলায় ইন্দুরা৷ বয়সে চার বছরের বড় দিব্য পুতুল ইন্দুকে জন্মাতে দেখেছে, বড় হতে দেখেছে৷
দিব্যর মা ইন্দুর মণিমা আর ইন্দুর মা দিব্যর মামণি৷ দুই পরিবারের প্রশ্রয়েই ওরা বড় হয়ে উঠছিল৷
পাঁচ-ছ’দিন ইন্দু আসেনি৷ সেদিন হঠাৎই দু-বেণি দুলিয়ে ঘরে ঢুকেই দিব্যকে এক ধাক্কা৷ দিব্যর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা একেবারে দোরাগোড়ায়৷
–- কী রে ইন্দু, কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলি নাকি?
— তা বলতেও পারো, তবে অন্য এক জগতে৷
দিব্য ওর হেঁয়ালি ধরতে পারে না৷ ঘটনাটা কী ও বোঝবার আগেই ও ওর মণিমার কাছে৷ দিব্য শুধু মায়ের শাসানি শুনতে পেল৷
–- এবার থেকে এই ধিঙ্গিপনা কমা একটু, বুঝলি!
দিব্য আঁচ করল৷ তাহলে ওর ইন্দু, ইন্দুমতী বড় হয়ে গেল?
সেই প্রথম৷ দিব্যর জন্মদিনে ইন্দু দিয়েছিল নাম-না-জানা একটা ফুলের গাছ— টবসমেত৷ সঙ্গে একটা চিরকূট৷ ‘আমার নয়নভুলানো এলে, আমি কী হেরিলাম হৃদয় মেলে…৷’
দিব্যর জন্মদিন শরতে৷
ইন্দুমতীর হুটহাট করে আসা-যাওয়া বোধহয় একটু কমল৷
খুব অল্প বয়সেই পিতৃহারা হয়েছিল দিব্য৷ তারপর থেকে ইন্দুর বাবা সুবিমল কাকুই ওর ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড৷
সেদিন সুবিমলকাকুর কাছে ইংলিশের একটা চ্যাপ্টার বুঝতে গিয়েছিল দিব্য৷ বাহ্, সালোয়ার-কুর্তায় বেশ লাগছে তো ইন্দুরানিকে৷ সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকাতেই ইন্দু মুচকি হেসে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল৷
দিব্য পড়া বুঝে বেরোতে যাবে, ইন্দু কী একটা গুঁজে দিল পকেটে৷ ‘পরে পড়ে দেখো মশাই৷’
প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই ইন্দুর গলায় সুরতরঙ্গের অনায়াস লীলাখেলা৷ রবীন্দ্রসঙ্গীতের আনাচে-কানাচে ছিল ওর অসামান্য দক্ষতা৷ কবিতায়ও৷
সেদিন দিব্যও পরেছিল আগুনরঙা পাঞ্জাবি৷ সকলের অনুরোধে ইন্দু গাইল, ‘মহারাজ এ কী সাজে এলে হৃদয়পুর মাঝে…’
দিব্য ফ্ল্যাটে ঢুকে বুকপকেট থেকে কাগজটা বের করে৷ ‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায় রে, মরি এ কী তোর দুস্তর লজ্জা…৷’ পরিষ্কার বুঝল দিব্য৷ ওর মুগ্ধ দৃষ্টিকে অনুসরণ করেই দুষ্টু মেয়েটা টুক করে লিখে ফেলেছে৷
দিব্যর উচ্চমাধ্যমিক শেষ৷ ইন্দুর ক্লাস এইট৷ পরীক্ষার পরে মামণির বিশেষ অনুরোধে ও অফিসিয়ালি ইন্দিুর প্রাইভেট টিউটর হয়ে গেল৷
ইন্দুর চপলতা, প্রগলভতার সঙ্গে সঙ্গেই চলে ওর পড়াশোনা৷ পড়তে বসেও যখন তখন গানের কলি৷ কবিতার লাইন লিখে দিব্যকে বিব্রত করে৷ দিব্যও কেমন যেন আকুল হয়৷
সেদিন সন্ধেবেলা৷ ওদের ‘ষোলোকলা’র ছাদে দিব্য উঠেছিল৷ মন যখন খুব আনচান করে আকাশের তারাদের মধ্যে ও বাপিকে খোঁজে৷
তখন ও মাত্র ছ’বছরের৷ হঠাৎ একদিন ওর বাপি হারিয়ে গেল৷ মামণি বললেন, বাপি নাকি হঠাৎ তারা হয়ে আকাশে চলে গেছেন৷ বড় হয়ে দিব্য বুঝেছিল কঠিন সত্যটা আসলে মৃত্যু৷
হারিয়ে গিয়েছিল দিব্য আকাশের অগণিত তারার মধ্যে৷ হটাৎ সুরেলা গলায় গান শুনে চমক ভাঙে৷ ‘আজি যত তারা তব আকাশে, সবে মোর প্রাণ ভরি প্রকাশে…৷’
–- হ্যাঁরে ইন্দু, টের পেলি কী করে আমি ছাদে?
— সিক্সথ সেন্স৷
— আর এই সময়োপযোগী গানটা?
— ওটাই তো আমার তুরুপের তাস! দিব্যর একমাথা চুল এলোমেলো করে দিয়ে ইন্দু বলে৷
— শুধুই আমার জন্য তো!
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ইন্দু৷
— অন্যরকম কথা বোলো না তো দিব্যদা৷ ভাল লাগে না৷
— তবে কি সাহিত্যের কথা শুনবি? আচ্ছা বল তো, আইনস্টাইন ও ইন্দুবালা কার লেখা?
— ওমা! সেটা আবার জানি না? আমার নামকরণ তো বিভূতিভূষণের ওই গল্পটা থেকে৷ আমি ইন্দুবালা আর তুমি আইনস্টাইন!
ওরা বড় হয়৷ প্রতি শরতে দিব্যদের বারান্দায় ফুলের টব সংখ্যায় বাড়ে৷ ফুলও ফোটে, চিরকূটও আসে৷ তবে দিব্য কোনওদিন মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করে না৷
গ্র্যাজুয়েশনে ইংলিশে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার পর ইন্দুর বাবার বিশেষ অনুরোধে দিব্য কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসে৷ ধাপে ধাপে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়৷ দিব্যর বাবাও ছিলেন আইএএস অফিসার৷
তখন দিব্যর বাইশ, ইন্দুর আঠারো৷
প্রথম পোস্টিং বর্ধমান৷ চলে যাওয়ার আগের দিন আইনস্টাইন ও ইন্দুবালার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল দিব্য৷ দেখা করতে৷ প্রসাধনবর্জিত মুখ৷ চোখ দুটি ছলছল৷ কী অপরূপ! এত লাবণ্যময়ী কবে হয়ে উঠল ইন্দু!
সেদিন দিব্যও পরেছিল আগুনরঙা পাঞ্জাবি৷ সকলের অনুরোধে ইন্দু গাইল, ‘মহারাজ এ কী সাজে এলে হৃদয়পুর মাঝে…’
দিব্যর একটুও ইচ্ছে ছিল না কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার৷ ইন্দু, মাকে একা রেখে যাওয়ার৷ সকলের আশ্বাসে ও একটু ভরসা পেল৷
মনে পড়ে যায় দিব্যর৷ অনেক পুরনো কথা৷ ‘ষোলোকলা’র কমিউনিটি হলে দুর্গাপুজোর কথা৷ ইন্দু, দিব্য ভোর থেকে রাস্তায় রাস্তায়৷ ভোরের নির্মল বাতাসে ওরা শ্বাস নেয়, তারপর দুপুরের সোনা রোদ৷ পরস্পরের সান্নিধ্য ওদের আকুল করে৷ কিন্তু ফিরতেই হয়৷ ইন্দুবালা ভোগ পরিবেশন করবে৷
বর্ধমানে পৌঁছয় দিব্য৷নতুন পরিবেশ৷ নতুন কাজ৷ তবে মন বসে যায়৷
বেশ কিছুদিন ধরেই দিব্য ইন্দুর ফোন পাচ্ছে না৷ মিসড্ কল দেওয়া সত্ত্বেও৷ মা বলেন, ইন্দু নাকি খুব ব্যস্ত৷ গান, ফাংশন নিয়ে৷
দিব্য অভিমানে গুমরে মরে৷ ওর কীসের দায়! বিপদ হলে ইন্দু জানাবে না কেন! দু’বছরে বাড়িতে আরও দুটো টব বেড়েছে৷ বর্ধমানের ঠিকানায় এসেছে দুটো চিরকূট৷ অভিমানে দিব্য খুলেও দেখেনি৷ আজ মায়ের সঙ্গে কথা বলে কেমন শঙ্কিত হয়ে ওঠে মন৷ আলমারি খুলে চিরকূট দুটো বের করে৷
দিব্য নিজেকে প্রবোধ দেয়৷ মোবাইলে হাত দিয়েও তুলে নেয়৷ আবারও আসে শরৎ৷ মায়ের অনুরোধে দিব্য জন্মদিনের আগের দিনই কলকাতায়৷
— কাল দুপুরে আমরা ইন্দুদের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করব৷ ওদের সেই রকমই ইচ্ছে৷
ইচ্ছে তো ছিল দিব্যর মনেও৷ তবে সেটা ইন্দুকে দেখবে বলে৷
— ইন্দু কই মামণি?
— আর বলিস না ওর কথা৷ গান, গান করেই পাগল হল৷ কোনওরকমে গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ হলে বাঁচি৷
দিব্য মনে মনে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে৷ ওর জন্মদিনের থেকেও তাহলে ইন্দুর গানের অনুষ্ঠানটা বেশি জরুরি৷
খাওয়াদাওয়া সেরেই দিব্য ফ্ল্যাটে ফিরে আসে৷ কাজের মাসি বলে– ইন্দুদিদি এসেছিল, এটা দিয়ে গেছে৷
দিব্য অবাক হয়৷ আরও একটা ফুলগাছ৷ আরও একটা চিরকূট৷ ‘আজ তোমারে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে৷ ভয় কোরো না, সুখে থাকো, বেশিক্ষণ থাকব নাকো, এসেছি দণ্ড দুয়ের তরে৷’
এল, অথচ দেখা করল না৷ কেন, ইন্দু কেন? তুই কি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস? শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘগুলো হাসে৷ কানাকানি করে৷ ‘তোমার ইন্দু কই! ইন্দুমতি! ইন্দুরানি!’
সেদিন সন্ধেয় দিব্য ফিরে যায় বর্ধমানে৷ খুব মন খারাপ নিয়ে৷
দিব্যর কোয়ার্টারটা সুন্দর৷ এক চিলতে বাগান সামনে৷ ইচ্ছে করে খুব মাকে নিয়ে আসতে৷ কিন্তু বড্ড জেদ৷ ফ্ল্যাট ছেড়ে আসবে না৷ ইন্দুবালার গভীর আস্তানাটি কিন্তু সুরক্ষিত৷ দিব্যর মনে৷
কাজের চাপ দেখিয়ে মায়ের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও ও কলকাতায় যায় না৷ দুটো শরৎ চলে যায়৷ মা মোবাইলে বলেন— ইন্দু এসেছিল৷ বড় অস্থির দেখলাম মেয়েটাকে৷ চেহারায় লালিত্য নেই৷ মুখের হাসি শুকিয়ে গেছে৷ কতদিন ওদের ফ্ল্যাটে গিয়েছি৷ কিন্তু ইন্দুকে দেখিনি৷ ওর বাবা মা? কিছু বলতে চান না৷
দিব্য অভিমানে গুমরে মরে৷ ওর কীসের দায়! বিপদ হলে ইন্দু জানাবে না কেন! দু’বছরে বাড়িতে আরও দুটো টব বেড়েছে৷ বর্ধমানের ঠিকানায় এসেছে দুটো চিরকূট৷ অভিমানে দিব্য খুলেও দেখেনি৷ আজ মায়ের সঙ্গে কথা বলে কেমন শঙ্কিত হয়ে ওঠে মন৷ আলমারি খুলে চিরকূট দুটো বের করে৷ ‘যা পেয়েছি ভাগ্য বলে মানি/ দিয়েছ তো তব পরশখানি/ আছ তুমি এই জানা তো জানি/ খেদ রবে না এখন যদি মরি৷’ অন্য চিরকূটটা খুলতে গিয়ে ছিঁড়ে যায়৷
দিব্যর মন কেমন করে খুব৷ কী এমন ঘটালি ইন্দু! কোথায় তুই!
সেবার শনি-রবিবারের ছুটিতে অভিনন্দন আসে৷ দিব্যর অন্তরঙ্গ বন্ধু৷ ওর কাছেই দিব্য খবর পায়৷ ইন্দুর গানের শিক্ষক— বয়সে প্রায় দেড়গুণ— তরুন্ময় ঘোষের সঙ্গে কাউকে না বলে বাড়ি ছাড়া হয়েছে ইন্দু৷ বিয়ে করেছে৷ থাকে গড়িয়ার কাছে৷ অভিনন্দন বহুদিন কলকাতায় ছিল না৷ না হলে হযতো দিব্য খবরটা আগেই পেত৷
দিব্য গুম মেরে যায়৷ ইন্দু তুই কি পাগল হলি! শুধু গানকেই ভালবাসলি! তুই না বিভূতিভূষণের ইন্দুবালা!
অস্থির হয় দিব্য৷ মাকে ফোন করে৷ – আসছে শনিবার আসছি মা৷
কলকাতায় এসেই ছোটে ইন্দুদের ফ্ল্যাটে৷ দু’জনেই অসুস্থ৷ মামণি বলেন
— কিছুই বুঝতে পারিনি রে৷ হঠাৎ একদিন সকালে উঠে দেখি আমাদের শূন্য করে দিয়ে ও চলে গেছে৷ তোর কাকুর একটা মাইনর স্ট্রোকও হয়ে গেছে৷ যোগাযোগের কোনও চেষ্টাই করে না৷
— অভিনন্দন জানাল কী করে মামণি?
— ওর পিসির বাড়ি তো গড়িয়াতেই৷ শুনেছি ইন্দুর বাড়ির কাছে৷
— আমি কি যাব একবার ইন্দুর সঙ্গে দেখা করতে? সুবিমলবাবু ইশালায় হাত নাড়েন৷
— দুখিনী মেয়েটা তোকে দেখলে হযতো আরও ভেঙে পড়বে৷ থাক দিব্য৷
কোনও সমাধানের পথ খুঁজে না পেয়ে বর্ধমানে ফিরে আসে দিব্য৷ কাজকর্মের চাপে ইন্দু আসে যায় অনুক্ষণ৷ কতা বলে, গান শোনায়৷ এই অভিমানী তো এই সোহাগিনী৷
দিব্য অপেক্ষা করে থাকে আর একটা শরতের৷ কই! ও বাড়িতে টব তো এল না৷ বর্ধমানে চিরকূটও না৷ তবে কি ইন্দুর খুব বিপদ!
অভিনন্দনকে খবর নিতে বলে দিব্য, দু’দিন পরে খবর আসে৷ ইন্দু অসুস্থ৷ খুবই৷ ডিভোর্সের কেস চলছে৷ কামালগাজিতে একটা নার্সিংহোমে অ্যাডমিটেড৷ মায়ের ফোন আসে৷ – তোর একটা চিঠি এসেছে দিব্য৷
অফিসে দশদিনের লিভ স্যাংশন করিয়ে নেয় দিব্য৷ কলকাতার ফ্ল্যাটে পৌঁছয়৷ চিঠি কই৷ এ তো চিরকূট৷ ‘প্রেমের হাতে ধরা দেব তাই রয়েছি বসে/ অনেক দেরি হয়ে গেল দোষী অনেক দোষে৷’
রাতটা কোনওমতে কাটে৷ ভোরের আলো ফুটতেই দিব্য ছোটে অভিনন্দনের বাড়ি৷ তারপর নার্সিংহোম৷
–ইন্দুবালা ঘোষ কি অ্যাডমিটেড এখানে?
— হ্যাঁ, দোতলায় একুশ নম্বর বেড৷
— কে অ্যাডমিট করিয়েছেন৷
— ওনার ডক্টর৷
তড়িঘড়ি করে একুশ নম্বরে৷ ওই তো দিব্যর ইন্দু৷ যে দুটো নাম যোগ করলে হয় দিব্যেন্দু৷ দিব্যর ভাল নাম৷
শীর্ণকায়া ইন্দু উজ্জ্বল দুটি চোখ তুলে তাকায়৷
— সেই এলে দিব্যদা, এত দেরি করে!
— চুপ ইন্দু, কোনও কথা নয়৷ আমার বাড়িতে ফিরে যাবি৷ কোনও অসুখ হয়নি তোর৷ আর জানিস তো, আজ ভোরে কী হয়েছে?
ইন্দু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়৷
— তোর অসুস্থতার খবর পাওয়ার পরে ঘুম হযনি সারারাত৷ ভোরে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম৷ হঠাৎ নজরে পড়ল তোর দেওয়া একটা টবের গাছে একটা কুঁড়ি উঁকি মারছে৷ কোনওদিনই কোনও ইচ্ছে পূরণের কথা বলিনি৷ এই প্রথমবার…৷
— কোন গোপন ইচ্ছের কথা বললে দিব্যদা?
— আমার ইন্দুমতী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক৷ তারপর তার দিব্যদার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে, পায়ে শিঞ্জিনী বাজিয়ে সে ঘুরে বেড়াবে সারা বাড়ি৷ কখনও মণিমার কাছে আবদার… আজ কিন্তু ইলিশভাপা মণিমা৷ আবার কখনও ও দিব্যদা আজ একটা শরদিন্দুর গল্প বলো না…৷’
আর বলতে পারে না দিব্য৷ ওর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যায়৷ স্পষ্ট দেখতে পায় লজ্জায় রাঙা হয়ে ওর ইন্দুরানি খাটের ওপর উঠে বসেছে আস্তে আস্তে৷ সেই তেরো বছরের ইন্দু– যে বুঝতে পেরেছিল ও বড় হচ্ছে… দিব্যকে কিছু না বলেই পালিয়ে গিয়েছিল মণিমার কাছে৷
দিব্যর মনে হল এখুনি বোধ হয় ইন্দু গেয়ে উঠবে, ‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসি, তুমি অবসরমত বসিয়ো নিশিদিন হেথায় বসে আছি, তোমার যখন মনে পড়ে আসিয়ো…৷’
অঙ্কন: অনুপ রায়
শনিবারের চিঠি, শারদ সংখ্যা, ১৪২১