পুন এল পঁচিশে বৈশাখ৷
একাশি বছর আগে এই দিন এসেছিল এমনি অস্থির সমারোহে—
“নটলীলা-বিধাতার নব নাট্যভূমে উঠে গেল যবনিকা৷
শূণ্য হতে জ্যোতির তজর্নী
স্পর্শ দিল একপ্রান্তে স্তম্ভিত বিপুল অন্ধকারে,
আলোকের থরথর শিহরণ চমকি চমকি
ছুটিল বিদ্যুৎবেগে অসীম তন্দ্রার স্তূপে স্তূপে,
দীর্ণ দীর্ণ করি দিল তারে৷
গ্রীষ্মরিক্ত অবলুপ্ত নদীপথে অকস্মাৎ প্লাবনের দুরন্ত ধারায়
বন্যার প্রথম নৃত্য শুষ্কতার বক্ষে বিসর্পিয়া
ধায় যথা শাখায় শাখায়;—
সেইমতো জাগরণ শূণ্য আঁধারের গূঢ় নাড়ীতে নাড়ীতে,
অন্তঃশীলা জ্যোতির্ধারা দিল প্রবাহিয়া!”
তুমি এলে ধরণীর কোলে৷
ধ্বনিল মঙ্গল-শঙ্খ উদয়-দিগন্তে সেই দিন,
দিল ডাক চির-নূতনেরে,
অক্ষয় যৌবনে দিল ডাক৷
ব্যথায় বিবশক্লান্ত সেদিনের ব্যাকুলা প্রকৃতি
আপনার গর্ভগৃহে অম্লান সুন্দরে দিল ডাক৷
চৈত্রের জড়তা-শেষে এল শুদ্ধ পঁচিশে বৈশাখ৷
পুন এল পঁচিশে বৈশাখ৷
বর্ষে বর্ষে এই দিন এল, গেল চ’লে;
তুমি বার বার
আশিটি বছর ধরি ধরণীর আশীর্বাদ করিলে গ্রহণ৷
জীবনের পানপাত্র পূর্ণ করি নিশ্বাসে নিশ্বাসে
আকন্ঠ করিলে পান মর্ত্যের অমৃতরসধারা;
শুভ জন্মদিনে তব বারংবার করিলে বন্দনা
নানা ছন্দে কবিতায় গানে৷
প্রশান্ত নির্লিপ্ত প্রাণে সমাপ্তি সন্ধান করি জীবনের কর্ম-অবসানে
প্রতি বর্ষে আপনারে করিলে প্রস্তুত৷
তারপর একদিন বাইশে শ্রাবণ এল ঝুলন-পূর্ণিমা-নিশি-শেষে,
শান্ত চিত্তে নত নেত্রে পরিচিত পৃথিবীর বক্ষ হতে লইলে বিদায়
এল নিমন্ত্রণ তব, ধরণীর কবি,
অজানা নেপথ্যলোকে বিরাটের ছায়াসন-তলে,
“পুরাতন আপনার ধ্বংসোন্মুখ মলিন জীর্ণতা”
পশ্চাতে ফেলিয়া রাখি রিক্ত হস্তে গেলে সেই দিন
নূতন জীবনচ্ছবি বিরচিতে আরবার শূণ্য দিগন্তের ভূমিকায়৷
পুন এল পঁচিশে বৈশাখ৷
শনিবারের চিঠি, ৫১ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা
মূল কবিতাটি সজনীকান্ত দাসের ‘পঁচিশে বৈশাখ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকিলত৷গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রপ্রয়াণের পরের বছর, ইংরেজি ১৯৪২ তথা ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ, বৈশাখ মাসে৷