বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনুরাগী পাঠকের কাছে এ তথ্য অজ্ঞাত নয় যে, বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে কল্লোল-কালিকলম-প্রগতি ইত্যাদি পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে দেখা দিয়েছিল এক প্রবল উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনার জোয়ার৷ সে জোয়ারের স্রোতে ছিল মূলত নতুন ভাবধারার যৌবনোচিত মুক্ত প্রাণের সাহিত্য নির্মাণ প্রয়াস৷ এই সঙ্গে অবস্যই স্মরণীয় যে, কল্লোল-কালিকলম-প্রগতি প্রমুখ পত্রিকার অনিবার্য পরিপূরক হিসেবে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শনিবারের চিঠি’র আত্মপ্রকাশ, ২৬ জুলাই ১৯২৪-এ৷ (পত্রিকাটি চলেছিল প্রথমে সাপ্তাহিক, পরে মাসিক হিসেবে)৷ এই যুগ, এই সাহিত্য পরিবেশে এবং ‘শনিবারের চিঠি’কে কেন্দ্র করেই সজনীকান্ত দাস (১৯০০-১৯৬২) সে সময় বহু আলোচিত ও বিতর্কিত বর্ণময় এক সৃজনশীল সাহিত্য ব্যক্তিত্ব৷ বহুমুখী মননে, বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিকর্মে ও গতিময় কর্মপ্রেরণায় সজনীকান্ত ছিলেন সে যুগের সাহত্যি-সংস্কৃতি জগতের একজন অপরিহার্য প্রতিনিধি৷
অথচ, আজকের দিনে বর্তমান প্রজন্মে সজনীকান্ত দাস প্রায় বিস্মৃত৷ আর যেটুকু পরিচিতিও তাঁর রয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে, তা-ও খণ্ডিত অতিক্ষুদ্র একটি পরিচয়; এবং সে পরিচয় হল– রবীন্দ্র বিদূষক বা রবীন্দ্র-বিরোধী কালো মেঘের ছায়া হিসেবে৷
বস্তুত রবীন্দ্র-বিরোধী পরিচয়ের আড়ালে সজনীকান্তর অন্যান্য ব্যাপকতর পরিচয় চাপা পড়ে গেছে বিস্ময়কর ভাবে৷ সজনীকান্তর কবিতা ও গদ্যসাহিত্য রচনায় আকৈশোর যে অনুরাগ ও যে স্বভাব-দক্ষতা দেখিয়েছেন তা যথাযথভাবে প্রচার লাভ করেনি৷ তিনি যে এক সময়ে গান, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এবং বেতারভাষ্য রচনায় নৈপুণ্য ও পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন, সে কথাও আজ প্রায় অজ্ঞাত৷ ‘শনিবারের চিঠি’ ছাড়াও ‘প্রবাসী’, ‘মর্ডান রিভিউ’-সহ অন্তত আরও সাতটি পত্রিকার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন নানাভাবে, বিভিন্ন সময়ে৷ এ ছাড়াও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ-সহ আরও বিভিন্ন সারস্বত সংস্থা ও সমিতির সঙ্গে তাঁর ছিল ওতপ্রোত যুক্ততা৷ ‘পরিভাষা সংসদ’ ও ‘ভারতকোষ’ উপসমিতির সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন গভীরভাবে৷ তদুপরি তাঁর ক্লান্তিহীন গবেষণা কিংবা বাংলা সাহিত্যের অনুসন্ধানী পাঠক হিসেবে তাঁর সাধনার যে পরিচয়, সেটিও থেকে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে৷ তৎসত্ত্বেও, বাংলা সাহিত্যের সারস্বত প্রাঙ্গণে অন্তত পঁচিশটি গ্রন্থের লেখক সজনীকান্ত বিতর্কিত হয়েও স্বীকৃত ও অভিনন্দিত হয়েছেন তাঁর আন্তরিক অনুসন্ধিৎসা, সাহিত্য-অনুরাগ এবং সর্বোপরি নির্ভেজাল পাণ্ডিত্যের জন্য৷
যাই হোক, সজনীকান্তর কর্মমুখর গতিশীল জীবনের সমগ্র কর্মকৃতির পরিচয় তুলে ধরা সম্ভব নয় এখানে৷ এ নিবন্ধের উদ্দেশ্যও তা নয়৷
প্রচার, শ্রুতি বা ঘটনা যাই হোক না কেন, প্রকৃত সত্য হল, রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে সজনীকান্তর বিদ্রোহ, যদি কিছু থেকেও থাকে সাময়িকভাবে ‘শনিবারের চিঠি’কে কেন্দ্র করে, পরবর্তীকালে তা রূপান্তরিত হয়েছিল অকৃত্রিম ভক্তের আন্তরিক বন্দনায়৷ আর এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে সজনীকান্তর অনবদ্য সৃষ্টি ‘রবীন্দ্রনাথ: জীবন ও সাহিত্য’ শীর্ষক গ্রন্থটি৷
আবার অন্য দিকে, মুখ্যত রবীন্দ্রনাথের ‘নটরাজ ঋতু রঙ্গশালা’ গীতিনাট্য (প্রকাশ আষাঢ় ১৩৩৪)-কে কেন্দ্র করে এবং পরবর্তী ‘শনিবারের চিঠি’-তে প্রকাশিত বিরূপ লেখাকে কেন্দ্র করে যে রবীন্দ্র বিরোধিতা বা রবীন্দ্র বিদূষণের দূষিত হাওয়া সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন, তাতে সজনীকান্তর সক্রিয় ভূমিকা ছিল; সন্দেহ নেই৷ সজনীকান্তর এই প্রতিমুখী ভূমিকা ও এইসব কাজে রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে ব্যথিত হন, ক্ষুব্ধ হন এবং অবশ্যই তিনি মানসিকভাবে আহত বোধ করেন৷ কোথাও কোথাও সামান্য হলেও, তাঁর প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন৷ তবে এই প্রসঙ্গটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বহু চর্চিত একটি বিষয়৷ বর্তমান নিবন্ধে এসব নিয়ে আলোচনাও আমাদের লক্ষ্য নয়৷
এই নিবন্ধের স্বল্প পরিসরে, শুধু একটা বিষয়েই একটু দৃষ্টি ফেরাব আমরা৷ তা হল– প্রচার, শ্রুতি বা ঘটনা যাই হোক না কেন, প্রকৃত সত্য হল, রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে সজনীকান্তর বিদ্রোহ, যদি কিছু থেকেও থাকে সাময়িকভাবে ‘শনিবারের চিঠি’কে কেন্দ্র করে, পরবর্তীকালে তা রূপান্তরিত হয়েছিল অকৃত্রিম ভক্তের আন্তরিক বন্দনায়৷ আর এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে সজনীকান্তর অনবদ্য সৃষ্টি ‘রবীন্দ্রনাথ: জীবন ও সাহিত্য’ শীর্ষক গ্রন্থটি৷ এ তাঁর রবীন্দ্র-বন্দনার উজ্জ্বলতম অভিজ্ঞান৷ আরও স্মরণীয়, বইটি উৎসর্গ করা হল ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়কে, যিনি সর্বপ্রথম সমবয়সী রবীন্দ্রনাথকে ‘বিশ্ব-কবি’ অভিধায় অভিনন্দিত করেছিলেন৷ গ্রন্থের উৎসর্গ পৃষ্ঠাটি আজকের যুগের উৎসাহী পাঠকের কাছে উদ্ধারযোগ্য: “যে বাঙালি মনীষী বাংলার কবি ও রবীন্দ্রনাথকে সর্বপ্রথম ‘বিশ্বকবি’ বলিয়া অভিনন্দিত করিয়াছিলেন সেই ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়… স্মরণে এই গ্রন্থ নিবেদিত হইল৷”
গ্রন্থকার সজনীকান্ত এই বই-এর ভূমিকায় প্রথম বাক্যটিতে লিখেছেন, “পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গীতিকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর…৷” তারপর লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ কবি– স্রষ্টা এবং দ্রষ্টা, সুতরাং ঋষি৷” জীবনের শেষ প্রান্তের অকপট অনুভব এসব৷
রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাসের একটি বিশেষ স্থানে ‘দীর্ঘতর’ ছায়া বলে লেখা হয়েছিল৷ রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লিখে যুক্তিসহ ‘দীর্ঘতর’ কথাটির বাস্তব ভ্রান্তি দেখিয়েছিলেন সজনীকান্ত৷ রবীন্দ্রনাথ মেনে নেন সজনীকান্তের কথা৷ এবং পরবর্তী সংস্করণে ‘দীর্ঘতর’-র স্থানে ‘খর্ব্ব’ কথাটি বসানো হয়৷ এই বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আত্ম-স্মৃতি’তে সজনীকান্তর প্রণিধানযোগ্য উক্তিটি উদ্ধৃত করছি: “এই দীর্ঘতর-কে খর্ব করা– ইহাই বাংলা সাহিত্যে আমার সর্বপ্রথম কীর্তি, আধুনিক ভাষায় ‘অবদান’-ও বলিতে পারি৷
এবার একটু ফিরে যাই সজনীকান্তর শৈশব ও কৈশোরে৷ সেখানে দেখি আশ্চর্য এক সমাপতন৷ রবীন্দ্রনাথের বাল্যজীবনে যে কাব্যিক অনুরণন ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ পংক্তিটি, স্কুল ছাত্র নয়-দশ বছরের বালক সজনীকান্তের জীবনেও তেমনি কাব্যিক দ্যোতনা ও মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করল রবীন্দ্রনাথের লেখা দুটি ছত্র:
“দিনের আলো নিবে এল, সূর্যি ডোবে ডোবে
আকাশ ঘিরে মেঘ ছুটেছে চাঁদের লোভে লোভে৷”
এই পংক্তিদুটি পড়ে, বালক সজনীকান্তের অনুভবী মন্তব্য—“সামান্য একটি কবিতা, ধরন-ধারণ যে খুব অচেনা তা নয়, কথাগুলোও নূতন নয়– কিন্তু মনে কোথা হইতে একটা নূতন রং ধরিল, একটা অপরূপ সুরের মূর্ছনা লাগিল৷” এই রং এবং অপরূপ সুরমূর্ছনা সারা জীবনই তাকে প্রভাবিত করেছে, প্রাণিত করেছে, উদ্ভাসন এনেছে অন্তরে অন্তরে৷
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে সজনীকান্তের সম্পর্ক ছিল গুরু-শিষ্যের মতো৷ শৈশব থেকে আমৃত্যু তিনি ছিলেন মনে প্রাণে রবীন্দ্রভক্ত৷ রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া জীবনের সমস্ত কাজই অসম্পূর্ণ সজনীকান্তের৷ উভয়ের মধ্যে চিঠির আদান-প্রদান হয়েছে প্রচুর৷ এই সব চিঠিতে ফুটে উঠেছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের গভীরতা৷ দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা এখানে কয়েকটি চিঠির কথা উল্লেখ করব৷
রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাসের একটি বিশেষ স্থানে ‘দীর্ঘতর’ ছায়া বলে লেখা হয়েছিল৷ রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লিখে যুক্তিসহ ‘দীর্ঘতর’ কথাটির বাস্তব ভ্রান্তি দেখিয়েছিলেন সজনীকান্ত৷ রবীন্দ্রনাথ মেনে নেন সজনীকান্তের কথা৷ এবং পরবর্তী সংস্করণে ‘দীর্ঘতর’-র স্থানে ‘খর্ব্ব’ কথাটি বসানো হয়৷ এই বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আত্ম-স্মৃতি’তে সজনীকান্তর প্রণিধানযোগ্য উক্তিটি উদ্ধৃত করছি: “এই দীর্ঘতর-কে খর্ব করা– ইহাই বাংলা সাহিত্যে আমার সর্বপ্রথম কীর্তি, আধুনিক ভাষায় ‘অবদা’-ও বলিতে পারি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার জীবনে দীর্ঘতর-কে খর্ব করার ইহাই শেষ নয়৷”
আর একটি চিঠির কথা মনে পড়ছে৷ চিঠিটি সজনীকান্তের লেখা রবীন্দ্রনাথকে৷ চিঠির তারিখ– ৭ মার্চ, ১৯২৭৷ চিঠিটি দীর্ঘ৷ এর মূল বক্তর্ব্য: তৎকালে কল্লোল-কালিকলম ইত্যাদি কাগজে যে সমস্ত লেখা প্রকাশিত হত, তার কিছু কিছু ভীষণ অপছন্দের ছিল সজনীকান্তের৷ কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে, Realistic-এর নামে এসব লেখা শ্লীলতার গণ্ডি অতিক্রম করে যায়৷ তাই এসব লেখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া দরকার৷ ‘শনিবারের চিঠি’তে তাঁদের প্রতিবাদ-প্রয়াস কোনওভাবেই ফলপ্রসূ হয়নি৷ এই প্রেক্ষাপটে সজনীকান্ত তাঁর চিঠিতে রবীন্দ্রনাথকেই আহ্বান করেছেন, এর বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করতে৷ সজনীকান্ত লিখছেন, “…এই প্রবল স্রোতের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ (শনিবারের চিঠি) এত ক্ষীণ যে, কোনও প্রবল পক্ষের তরফ থেকে এর প্রতিবাদ বের হওয়ার একান্ত প্রয়োজন আছে৷ যিনি আজ পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যকে রূপে-রসে পুষ্ট করে আসছেন তাঁর কাছেই আবেদন করা ছাড়া আমি অন্য পথ না দেখে আপনাকে আজ বিরক্ত করছি৷” তারপর একই চিঠিতে উপসংহারে লিখছেন, “ক্ষুদ্র লেখকের লেখনীতে সত্য প্রতিবাদও অনেক সময় ঈর্ষা বলে হেলা পায়৷ আপনি কথা বললে আর যাই বলুক, ঈর্ষার অপবাদ কেউ দেবে না৷”
একান্তই ব্যক্তিগত একটি চিঠির কথা বলে শেষ করব এই প্রসঙ্গ৷ সজনীকান্তের অসুস্থতায় রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং চিকিৎসকের ভূমিকা নিয়েছেন এবং বায়োকেমিক ওষুধ Prescribe করেছেন৷ এ সময় সজনীকান্ত মারাত্মকভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন৷ রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখে (জুন ১, ১৯৪০) সজনীকান্ত জানান সে কথা৷ রবীন্দ্রনাথ শীঘ্র আরোগ্য কামনা করে চিঠি পাঠালেন পাঁচ দিনের মধ্যে, সঙ্গে ‘ব্যবস্থা-পত্র’ (জুন ৬, ১৯৪০)৷ সেই ব্যবস্থা-পত্র অনুযায়ী বায়োকেমিক ওষুধ প্রয়োগ করে উপকৃত হন সজনীকান্ত৷ এবং সে কথা কবিকে চিঠি লিখে জানান তিনি (জুন ২৮, ১৯৪০)৷ দু’দিন পরেই উনআশি বছরের ‘চিকিৎসক’ রবীন্দ্রনাথ সকৌতুকে ও প্রফুল্ল চিত্তে চিঠির উত্তর দিলেন চল্লিশ বছরের ‘রোগী’ সজনীকান্তকে (জুন ৩০, ১৯৪০)৷
কবি লিখলেন— “আমার ওষুধে ফল পেয়েছ৷ বিধাতা আমার প্রতি প্রসন্ন৷ যে বয়সে স্বভাবতই অন্য খ্যাতির বালি চাপা পড়ে, সেই বয়সে তিনি একটা নতুন পথ খুলে দিলেন৷ আমার জীবনচরিতের শেষ অধ্যায়ে এই খবরটা দিয়ে যেতে পারবে৷”
উভয়ের মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক-অনুষঙ্গে এ তথ্যও এখানে স্মরণযোগ্য যে, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর প্রকাশিত হয়েছিল ‘শনিবারের চিঠি’-র রবীন্দ্রসংখ্যা৷ এবং এর পরের বৈশাখেই (১১.৫.১৯৪২) প্রকাশিত হল সজনীকান্তের ‘পঁচিশে বৈশাখ’ নামে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থখানি৷ আর এই গ্রন্থের স্বত্ব-প্রসূত অর্থ কলকাতার সে-সময়ের রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্রে দান করা হয়েছিল৷
অবশেষে স্মরণ করব, রবীন্দ্রনাথের তিরোধানের পর সজনীকান্তের ‘মর্ত্য হইতে বিদায়’ শীর্ষক অসামান্য কবিতাটির কথা৷ কবিতাটির রচনাকাল ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১৷ ব্যথাহত বিপন্ন ভক্ত সজনীকান্তের শ্রদ্ধা নিবেদন অমর্ত্য-ধাম যাত্রী রবীন্দ্রনাথকে৷ কবিতাটি পরের দিনই, ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে অনুষ্ঠিত শোকসভায় পঠিত হয়৷ ভক্তিবিনম্র নিবেদিত প্রাণ সজনীকান্তের উক্ত কবিতা থেকে কয়েকটি পংক্তি উদ্ধৃত করছি এখানে৷
“বৃহদারণ্য বনস্পতির মৃত্যু দেখেছ কেউ?
অরণ্যভূমি আঁধার করিয়া শতেক বর্ষ ধরি
শাখা-প্রশাখায় মেলি সহস্র বাহু
মৃত্তিকারস করিয়া শোষণ শিকড়ের পাকে পাকে
নিম্নে বিরচি বহু বিস্তৃত স্নেহ ছায়া আশ্রয়
অভ্রংলিহ বনস্পতির মৃত্যু দেখেছ কেউ?”
সজনীকান্তের হৃদয় উৎসারিত এই রবীন্দ্র-অনুরাগ অকৃত্রিম অকপট ও সত্য৷
তথ্যসূত্র:
১) রবীন্দ্রনাথ— জীবন ও সাহিত্য/সজনীকান্ত দাস/পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি৷
২) সজনীকান্ত দাস/ব্রজেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়৷
৩) সজনীকান্ত দাসকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের পত্রাবলি/ বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ / (সম্পাদনা সংকলন: শ্রীমতী সাগর মিত্র)
৪) ভারতকোষ (৫ম খণ্ড) / বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ৷
৫) রবীন্দ্রনাথ ও সজনীকান্ত / জগদীশ ভট্টাচার্য / রঞ্জু পাবলিশিং হাউস৷
৬) বাঙালি চরিতাভিধান / সাহিত্য সংসদ৷
সজনীকান্ত দাসের জন্মমাসে ‘শনিবারের চিঠি’র লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত হল