film-fair

একত্রিশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে এবারেও নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবার ৩১ তম বর্ষ। গত ৬ নভেম্বর আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী, বর্ষিয়ান অভিনেতা ও সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা গৌতম ঘোষ, প্রবীণ সংগীতশিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়, চিত্রপরিচালক রমেশ সিপ্পিসহ গোটা টলিউড।

ডোনা গাঙ্গুলীর নৃত্যনুষ্ঠানের পরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে সূচনা করা হয় উৎসবের। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবিভূষণ’ দিয়ে সম্মানিত করা হয় আরতি মুখোপাধ্যায় এবং শত্রুঘ্ন সিনহাকে। উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত এবং অজয় কর পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সপ্তপদী’। ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ স্বরণে প্রকাশিত হয় বিশেষ একটি গ্রন্থ। সঙ্গে প্রকাশিত হয় ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের স্বারক পত্রিকা। এ বছর পালিত হচ্ছে ঋত্বিক ঘটক, রিচার্ড বার্টন, গুরু দত্ত, প্রদীপকুমার, রাজ খোসলা, রবার্ট আলটম্যান, সলিল চৌধুরী, ডেভিড স্যামুয়েল, সন্তোষ দত্ত প্রমুখের জন্মশতবার্ষিকীর স্বরণে প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বদের অভিনীত ও পরিচালিত ছবি প্রদর্শীত হয় নন্দন-১, রবীন্দ্রসদন এবং চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবনে।

অনেকদিন পরে দেখার সুযোগ হয় ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিটি। রাজ খোসলা পরিচালিত, ‘বোম্বাই কা বাবু’ ছবিটিও দেখার সুযোগ হল বহুদিন পরে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রদর্শীত হল হেমেন গুপ্ত পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘আনন্দমঠ’। ভারতীয় ভাষার ছবির প্রতিযোগিতা বিভাগে দেখানো হল মারাঠি ছবি ‘৮৭ রূপায়ণছা শাইচ্ছা পেন’, মালয়ালাম ছবি ‘এ প্রেগনেন্ট উইডো’, হিন্দী ছবি ‘আনমল’, নেপালি ছবি ‘ছোড়া যাসটাই’, তামিল ছবি ‘কাদাল কান্নি’, কংঙ্কানি চলচ্চিত্র, ‘মোগ আসুম’, অসমীয়া ছবি ‘নোই কোথা’, বাংলা ছবি ‘পরবাসী’, উর্দু ছবি ‘হোইট স্নো’। এ ছাড়াও এই বিভাগে দেখানো হয় কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষার ছবি।

বেঙ্গলি প্যানোরমা বিভাগে প্রদর্শীত হল একাধিক নতুন পরিচালকদের ছবি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘পড়শী’, ‘পিঞ্জর’, ‘বড়বাবু’, ‘হালুম’, ‘গেট আপ কিংশুক’ ইত্যাদি। ৩১ তম চলচ্চিত্র উৎসবে ফোকাস কান্ট্রি ছিল পোল্যান্ড। মোট ১৯টি পোলিশ ছবি দেখানো হল। পরিবেশ সংক্রান্ত ছবির বিভাগে আমরা দেখলাম ফরাসি ছবি ‘বামবি’, নেপালি ছবি ‘এভারেস্ট ডার্ক’, ইংরেজি ছবি ‘ঘোস্ট এলিফ্যান্টস’ ইংরেজি ছবি ‘হাউ ডিপ ইস ইওর লাভ’। ক্রীড়া বিষয়ক চলচ্চিত্র বিভাগের উল্লেখযোগ্য ছবি হল ইতালির ‘আগন’ এবং জার্মান ছবি ‘পিঙ্ক পাওয়ার’। প্রতিবারের মত এবারেও স্বল্পদৈর্ঘ্যর ভারতীয় ছবির প্রতিযোগিতায় বেশ কিছু উন্নতমানের ছবি দেখানো হয়। প্রতিযোগিতার বিভাগে প্রদর্শীত হল একাধিক ভারতীয় তথ্যচিত্র।

সাতদিনের চলচ্চিত্র উৎসবে উৎসাহী চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আকর্ষণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছবি ‘ব্লু মুন’ এবং ফরাসি ছবি ‘দ্য স্ট্রোঞ্জের’। মূল গল্পের সীমার মধ্যে থেকেই উপন্যাসের আবেগহীনতাকে প্রকাশ করা হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। ১৯৪২ সালে রচিত উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই ছবিটি দর্শকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে।

সত্যজিৎ রায় স্বারক বক্তৃতা দেন বলিউডের বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক রমেশ সিপ্পি। পাশাপাশি ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল অনেকগুলি আলোচনাসভা। সেইসব সভায় ঋত্বিকের ছবির বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা আদুর গোপালকৃষ্ণন, শেখর দাস, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অশোক বিশ্বনাথন, অমরেশ চক্রবর্তী, সুপ্রিয় সেন প্রমুখ।

চলচ্চিত্রর ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি আলোচনাচক্রে অংশ নেন বেদব্রত পেন, সানি জোসেফ, রবিরঞ্জন মৈত্র, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। চলচ্চিত্র উৎসবের শেষদিনে ছবিতে গান সংক্রান্ত এক আড্ডায় যোগ দেন বিশিষ্ট সুরকার ও শিল্পী শান্তনু মৈত্র। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে ছিলেন পরিচালক ও অভিনেতা অরিন্দম শীল। ওইদিন রবীন্দ্রসদনে এক অনুষ্ঠানে ঋত্বিক ঘটকের ছবির অভিনেতা এবং কলাকুশলীদের সম্মানিত করা হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ছিল ডোনা গাঙ্গুলীর নৃত্যানুষ্ঠান।

ভারতীয় তথ্যচিত্রের জন্য বিশেষ জুরি সম্মান দেওয়া হয় দেবলীনা মজুমদার নির্মিত, ‘জিলিপিবালার বন্ধুরা’। বিশেষ জুরি সম্মান পায় কক বরক ভাষার ছবি সুজিত দেব বর্মা ও প্রণবজ্যোতি দেকা পরিচালিত, ‘মাই লাস্ট ফেস : কুংবরা’। সেরা ভারতীয় তথ্যচিত্রের জন্য গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পুরস্কার তুলে দেওয়া হল পরিচালক জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে, ‘বিজয়ী যাপনের পটকথা’-র জন্য।

স্বল্পদৈর্ঘ্যর ভারতীয় ছবির জন্য বিশেষ জুরি সম্মান দেওয়া হল রবি কুমার পরিচালিত হিন্দি ছবি, ‘কুয়াশে কি গীত’কে। এই বিভাগে আরেকটি পুরস্কার দেওয়া হয় সুদীপ্ত বারুই পরিচালিত বাংলা ছবি, ‘অপার্থিব’ কে। সেরা স্বল্প দৈর্ঘ্যর ভারতীয় ছবির জন্য
গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পুরস্কার দেওয়া হয় লিটন পল পরিচালিত ছবি, ‘নিংমা থ্রু হার আইজ’ কে। এশিয়ান সিলেক্ট নেটপ্যাক পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয় ভারতীয় ছবি, ‘ভিক্টোরিয়া’। বেঙ্গলি প্যানোরমা বিভাগে গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পুরস্কার দেওয়া হল চন্দ্রাশীষ রায় পরিচালিত ছবি, ‘পড়শী’ কে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পুরস্কার পেল ছবি ‘রিভারস্টোন’। এই বিভাগেই পুরস্কৃত করা হয় কিউবান ছবি ‘টু দ্যা ওয়েস্ট ইন জাপাতা’।