রাত পোহালেই নববর্ষ। সবার অলক্ষেই নতুন বছরে ঢুকে পড়বে বাঙালি। বাংলা ক্যালেন্ডারে হিসেবে নতুন বছরের আবেগ, উন্মাদনা নাড়া দেয় সব বাঙালিকেই। বাঙালি মানে আবেগ, বাঙালি মানে উৎসবে উন্মাদনা, বাঙালি মানেই হুজুক। আর অবশ্যই বাঙালি মানেই মহাভোজ। খেতে ভালোবাসা বাঙালির নববর্ষের উৎসবটা মহাভোজেই কাটে। বৈশাখে বাংলা নববর্ষ কিংবা আশ্বিনের পুজোর গন্ধ -বছরভর বিভিনেন সময়ে বাঙালির রসনাবিলাস হোক লোভনীয় মেনুতে। কিন্তু সারা বছরটা খাদ্যরসিকদের বছর হতে হলে শুরুটা তো ভালো করতেই হবে। তাই বাঙালির বর্ষবরণের পাতে এবার থাকুক রঙিন পনীর পোলাও, তন্দুরীটা হোক পমফ্রেটের, পাতের মধ্যাকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু থাকুক মাটন কোফতা-গ্রেভিতে, আর শেষ পাতে আমের চাটনি হয়ে সমাপ্তিতে থাকুক রসমালাই। ভাবছেন, এই সব মেন্যু কীভাবে বানাবেন? এবার রইল তারই হদিশ—
পনীর পোলাও
উপকরণ–
বাসমতি চাল– ৩ কাপ, পনীর (কিউব করে কাটা)– ২৫০ গ্রাম, ঘি– ৪-৫ চামচ, সাদা তেল প্রয়োজনমতো, কাজুবাদাম ও কিশমিশ– ৫০ গ্রাম, তেজপাতা– ১ টা, ছোটএলাচ– ৪-৫ টা, দারচিনি– ১টা মাঝারি মাপের, লবঙ্গ– ৩-৪ টে, স্টার অ্যানিস– ১ টা, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চামচ, কাশ্মীরী লঙ্কাগুঁড়ো– ১/২ চামচ, আদাবাটা– ১ চামচ, গরমমশলা গুঁড়ো– ১ চামচ, নুন এবং চিনি স্বাদমতো।
প্রণালী–
প্রথমে ভালো করে চাল ধুয়ে ঝরঝরে ভাত তৈরি করে নিতে হবে (ভাত তৈরি করার সময় ওর মধ্যে হলুদগুঁড়ো এবং স্টার অ্যানিস টা দিয়ে দিতে হবে)। তারপর একটা বড় পাত্রে নুন মেশানো জল রাখতে হবে। এরপর পাত্রে সাদা তেল গরম করে তাতে কিউব করে কাটা পনীরের টুকরোগুলো দিয়ে হালকা করে ভেজে তুলে নিতে হবে এবং ওই নুন মেশানো জলে বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখতে হবে। এবার ওই তেলেই কাজুবাদাম ও কিশমিশ ভেজে আলাদা করে তুলে নিতে হবে। তারপর একটা বড় আকারের পাত্রে ৪ চামচ ঘি ও ২ চামচ সাদা তেল গরম করে তাতে একে একে তেজপাতা, ছোটএলাচ, লবঙ্গ ও দারচিনি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন থেকে সুগন্ধ বেরোলে কাশ্মীরী লঙ্কাগুঁড়ো, আদাবাটা, স্বাদমতো নুন এবং চিনি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। একটু ভাজা ভাজা মতো হলে এরমধ্যে গরমমশলা গুঁড়ো, আগে থেকে ভেজে রাখা কাজুবাদাম-কিশমিশ এবং আগে থেকে তৈরি করে রাখা ভাত দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর নুন মেশানো জলে ডুবিয়ে রাখা পনীরের টুকরোগুলো হাত দিয়ে চেপে জল ঝরিয়ে ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার গ্যাস বন্ধ করে ওপর থেকে ১ চামচ ঘি ছড়িয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশনের আগে আরও একবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি সুস্বাদু পনীর পোলাও।
পমফ্রেট তন্দুরী
উপকরণ–
পমফ্রেট মাছ– ৬ টা, আদাবাটা– ২ চামচ, পেঁয়াজবাটা– ৪ চামচ, রসুনবাটা– ১ চামচ, কাঁচালঙ্কাবাটা– ১ চামচ, ধনেপাতাবাটা– ১ চামচ, পুদিনাপাতাবাটা– ১ চামচ, পাতিলেবুর রস– ১ চামচ, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো– ১/২ চামচ, গোলমরিচগুঁড়ো– ১/২ চামচ, তেল প্রয়োজনমতো, নুন স্বাদমতো।
প্রণালী–
প্রথমে ভালো করে মাছগুলো ধুয়ে জল ঝরিয়ে একটা পাত্রে রাখতে হবে। তারপর তাতে একে একে আদাবাটা, পেঁয়াজবাটা, রসুনবাটা, কাঁচালঙ্কাবাটা, ধনেপাতাবাটা, পুদিনাপাতাবাটা, পাতিলেবুর রস, হলুদগুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো, গোলমরিচগুঁড়ো, ১ চামচ তেল এবং স্বাদমতো নুন দিয়ে মাছগুলো খুব ভালো করে মাখিয়ে ২ ঘন্টা ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। এরপর মাইক্রো ওভেনে ২২০ ডিগ্রিতে ৩০ মিনিট গ্রিল করে নিলেই তৈরি পমফ্রেট তন্দুরী (গ্যাসে তাওয়া গরম করে অল্প তেল ব্রাশ করে মাছগুলো এপিঠ-ওপিঠ কম আঁচে সেঁকে নিয়েও তৈরি করা যায়)। এবার প্লেটে সাজিয়ে স্যালাড এবং সস এর সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
মাটন কোফতা-গ্রেভি
উপকরণ–
কোফতার জন্য–
মাটন কিমা– ২৫০ গ্রাম, ফেটানো ডিম– ১ টা, আদাবাটা– ২ চামচ, পেঁয়াজবাটা– ১ টা, রসুনবাটা– ১ চামচ, কাঁচালঙ্কাবাটা– ১ চামচ, ধনেপাতাকুচি– ১ চামচ, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চামচ, জিরেগুঁড়ো– ১ চামচ, ধনেগুঁড়ো– ১/২ চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো– ১ চামচ, গরমমশলাগুঁড়ো– ১/২ চামচ, ময়দা/কর্ণফ্লাওয়ার– ১/২ কাপ, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো, নুন স্বাদমতো।
গ্রেভির জন্য–
ফেটানো টকদই — ১/২ কাপ, পেঁয়াজকুচি (ছোটো)– ২ টো, টম্যাটোকুচি– ২ টো, আদাবাটা– ১ চামচ, রসুনবাটা– ১/২ চামচ, কাঁচালঙ্কাকুচি– ১ টা, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চামচ, জিরেগুঁড়ো– ১/২ চামচ, ধনেগুঁড়ো– ১/২ চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো– ১ চামচ, গরমমশলাগুঁড়ো– ১ চা-চামচ, তেজপাতা– ১ টা, গোটা শুকনোলঙ্কা– ১ টা, গোটা দারচিনি– ১ টা, লবঙ্গ– ৩-৪ টে, ছোটোএলাচ– ২-৩ টে, তেল– ২ চামচ, ফ্রেশ ক্রিম, ধনেপাতাকুচি প্রয়োজনমতো, নুন এবং চিনি স্বাদমতো।
প্রণালী–
প্রথমে একটা বড় আকারের পাত্রে মাটন কিমা নিয়ে তারমধ্যে একে একে সব বাটা মশলা এবং গুঁড়ো মশলা দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তাতে ধনেপাতাকুচি, ময়দা/কর্ণফ্লাওয়ার, ফেটানো ডিম এবং স্বাদমতো নুন দিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। এবার তা থেকে ছোট ছোট বলের আকারে গড়ে আলাদা একটা প্লেটে তুলে রাখতে হবে। এরপর একটা প্যানে বেশি করে তেল গরম করে মাটন কোফতাগুলো লালচে করে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
এবার অন্য একটা পাত্রে তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, গোটা শুকনোলঙ্কা, গোটা দারচিনি, লবঙ্গ, ছোটোএলাচ দিয়ে নাড়াচাড়া করে সুগন্ধ বের হলে পেঁয়াজকুচি ছাড়তে হবে। কিছুক্ষণ পর পেঁয়াজ সামান্য ভাজা ভাজা হয়ে এলে একে একে টম্যাটোকুচি, আদাবাটা, রসুনবাটা, কাঁচালঙ্কাকুচি দিয়ে আরও একটু ভাজতে হবে। টম্যাটো বেশ নরম হয়ে এলে এতে হলুদগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো, অল্প জল এবং স্বাদমতো নুন ও চিনি দিয়ে খুব ভালো করে মশলা কষে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পর মশলা থেকে কাঁচা গন্ধ চলে গেলে এবং মশলা থেকে তেল ছাড়লে এরমধ্যে ফেটানো টকদই দিয়ে আরও একবার খুব ভালো করে কষিয়ে নিয়ে, প্রয়োজনমতো উষ্ণ গরম জল ঢেলে মিশিয়ে ফুটতে দিতে হবে। মিশ্রণটা একটু ঘন হয়ে এলে তাতে আগে থেকে ভেজে রাখা মাটন কোফতা গুলো দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর গ্রেভি আরও একটু ঘন হয়ে এলে গরমমশলাগুঁড়ো ছড়িয়ে হালকা হাতে মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ধনেপাতাকুচি এবং ফ্রেশ ক্রিম ছড়িয়ে সার্ভ করতে হবে।
আমের চাটনি
উপকরণ–
আম– ৫০০ গ্রাম, কালো সরিষা– ১/২ চা-চামচ, গোটা শুকনো লঙ্কা– ১ টা, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চামচ, আদা কুচি– ১ চা-চামচ, শুকনো খোলায় ভাজা জিরে-লঙ্কাগুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, সরষের তেল– ১ চামচ, নুন ও চিনি স্বাদমতো।
প্রণালী–
প্রথমে আমগুলো ভালো করে ধুয়ে খোসা সমেত লম্বা লম্বা টুকরো করে কেটে নিতে হবে। তারপর একটা পাত্রে তেল গরম করে তাতে সরিষা ও গোটা শুকনোলঙ্কা ফোড়ণ দিয়ে, আমের টুকরোগুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করে হলুদগুঁড়ো, স্বাদমতো নুন ও অল্প জল দিয়ে মিশিয়ে দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর আম সিদ্ধ হয়ে এলে চিনি দিয়ে নাড়তে হবে। বেশ কিছুক্ষণ নাড়ার পর চাটনি বেশ ঘন হয়ে এলে আদা কুচি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার একটা পাত্রে ঢেলে ওপরে শুকনো খোলায় ভাজা জিরে-লঙ্কাগুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশণ করতে হবে।
রস মালাই
উপকরণ–
দুধ– দেড় লিটার, চিনি– ৩ কাপ, ছোটোএলাচ গুঁড়ো– ১ চা-চামচ, পাতিলেবুর রস– ২ টো, কেশর– ১ চিমটি, কিশমিশ, কাজুবাদাম কুচি এবং লাল চেরিকুচি প্রয়োজনমতো।
প্রণালী–
প্রথমে একটা পাত্রে ১ লিটার দুধ গরম করতে হবে হাই ফ্লেমে। দুধ ভালোমতো ফুটতে শুরু করলে আঁচ মিডিয়াম করে পাতিলেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে ছানা কাটিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা পরিষ্কার সাদা কাপড়ে ছানা রেখে ১ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং জল ঝরিয়ে নিতে হবে। এবার কাপড় থেকে ছানা একটা থালায় নিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিয়ে ছোটো ছোটো গোল বল তৈরি করে রাখতে হবে। তারপর একটা পাত্রে ৬ কাপ জল ও দেড় কাপ চিনি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ঘন রস তৈরি করে নিতে হবে। রস তৈরি হয়ে গেলে ছানার বলগুলো রসের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে, সুসিদ্ধ হলে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর অন্য একটা পাত্রে বাকি দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ ফুটে অর্ধেক হয়ে এলে তাতে কেশর ও বাকি চিনি মিশিয়ে, সমানে নাড়তে হবে। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে মিডিয়াম আঁচে দুধ নাড়ার পর ঘন হয়ে গেলে, ছানার বলগুলো রসের থেকে তুলে হাত দিয়ে রস চেপে নিয়ে সেইগুলো দুধে ফেলতে হবে। এবার সামান্য একটু ফুটিয়ে নিয়ে ছোটোএলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে মিশিয়ে নিতে হবে এবং ছোটো ছোটো বোলে ঢেলে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। এরপর কিশমিশ, কাজুবাদাম কুচি এবং লাল চেরিকুচি দিয়ে সাজিয়ে নিলেই পরিবেশনের জন্য তৈরি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা রস মালাই।