Tarun Majumdar

বাবা ও তনু কাকু

আমার পাঠক বন্ধুরা ভাবছেন, এই তো আগেরবার তরুন মজুমদারের লেখা পড়লাম, আবার কেন? কিন্তু উনি এত সুন্দর করে এত তথ্য জানিয়েছেন, সেগুলো আপনাদের জানাতে ইচ্ছে করল

তাই ফিরে এলাম তনু কাকুর (তরুন মজুমদার) জবানীতে –

একটা ব্যাপার দেখে মজা লাগল। বিভিন্ন বয়সী শিল্পীর সঙ্গে ভানু বাবুর সম্পর্ক। মাছ যেমন জলের ভিতর দিয়ে তরতর করে নিজের পথ কেটে এগিয়ে যায়, এও যেন তাই। বয়স্কদের সম্মান দিচ্ছেন, ছোটদের পেছনে লাগছেন, নিজের অনন্য রসবোধ দিয়ে মাতিয়ে রাখছেন সকলকে। কিন্তু কী অসাধারণ মাত্রাবোধ! সেটে হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে দিচ্ছেন কিন্তু কী পরিশীলিত শব্দচয়ন।

ব্যক্তিগত আর পারিবারিক জীবনে উনি ছিলেন অসম্ভব দায়িত্বশীল মানুষ। ওঁর আরও একটা দিক আছে। ভাগ্যক্রমে দুজনকে পেয়েছিলেন নিজের সাংস্কৃতিক পথ-প্রদর্শক হিসেবে যাঁদের একজন দেশবিখ্যাত, অন্যজন বিশ্ববিখ্যাত। কবি জসীমুদ্দিন আহমেদ আর বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের আবিষ্কর্তা বিজ্ঞানী সত্যেন বোস। একদিক থেকে অসীম শ্রদ্ধা আর অন্যদিক থেকে নিবিড় স্নেহ –এক অপূর্ব সেতুবন্ধন তৈরি করেছিল।

এইরকম যাঁর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি, মানসিকতা আর রুচির দিক থেকে আর পাঁচজনের সাথে পা মিলিয়ে চলবেন কী করে?

জীবিকার প্রয়োজনে নিজের মনের বিরুদ্ধে ওঁকে কিছু কাজ করতে হয়েছে কিন্তু আমাদের এই পোড়া দেশে অনেককেই তা করতে হয়। 

যাক এবার আসি কিছু মজার কথায়।

উনি একবার বলেছিলেন “অভিনয় ছাড়া যদি অন্য কোন কাজ আমার কান্ধে দ্যান, সেইটাও করুম

আমি পড়লাম মহা মুস্কিলে, ওঁকে দিয়ে কী কাজ করাব?

“আমি ঢাকার পোলা, ঘোড়ার গাড়ি আর ছ্যাকরা গাড়ি চালান আমার কাছে জলভাত,তাই আর কিছু না দ্যান, সেটের মধ্যে ঘোড়ার গাড়ি যাতায়াত অপারেট করনের ভারটা না হয় আমারেই দিলেন। কথা দিতাসি, ডুবাবু না

একটি ছবির সেট পড়েছে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। চওড়ায় একশো আর লম্বায় দেড়শো ফুট এইটুকু জায়গার মধ্যেই পুরো সেটটাকে আঁটাতে হবে। সেই রাস্তা দিয়ে ঢুকবে আর বেরোবে একটা ঘোড়ার গাড়ী। কিন্তু মুস্কিল হল, গাড়িটা ঢুকছে ঠিকই কিন্তু কিছুতেই ঠিকমত বেরোতে পারছেনা।

হঠাত্ ভানুবাবুর গলা শোনা যায়- “পাইসি”,আমার মনের মত এক্সট্রা কাজ।

বুঝতে না পেরে বলি- “কী কাজ”?

“আমি ঢাকার পোলা, ঘোড়ার গাড়ি আর ছ্যাকরা গাড়ি চালান আমার কাছে জলভাত,তাই আর কিছু না দ্যান, সেটের মধ্যে ঘোড়ার গাড়ি যাতায়াত অপারেট করনের ভারটা না হয় আমারেই দিলেন। কথা দিতাসি, ডুবাবু না

এর পরেই ওঁর দাপট দেখে কে? এই ঘোড়াদুটোকে ধমকাচ্ছেন এই আবার গাড়োয়ানকে। একবার নিজেই চড়ে বসলেন কোচম্যানের আসনে। এরই মধ্যে ওখানে উপস্থিত পাহাড়িদা বলে উঠলেন, “এই ভেনো!তুই পড়ে গেলে কিন্তু ঘাড়টা ভাঙবে

সঙ্গে সঙ্গে ভানুবাবুর জবাব, “অত সোজা না। আমার এই ঘেটি ডাইরেক্টলি ইম্পোর্টেড ফ্রম ঢাকা। আপনে সরেন। ঘোড়ার চাঁট একবার খাইলে ‘পাহাড়ি’ থিকা ‘হাঁড়ি’ হইয়া যাইবেন।”

তারপর সত্যি নানা হাঁকডাক আর কায়দা করে কাজটা ঠিক উতরে দিলেন।