Bhanu Bandopadhyay

মায়ের স্মৃতিকথায় বাবা

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের সম্মুখীন বারবার হতে হয়েছে। এ সম্পর্কে নানান গল্প মা ছাড়া আর কে-ই বলতে পারবেন! তাই আবার ফিরে এলাম মা এর জবানীতে

খুব সম্ভবত ১৯৫২/৫৩ সালের এক রাত। রাতের খাওয়া দাওয়ার পর বাড়িশুদ্ধ সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত বোধহয় প্রায় একটা দেড়টা হবে। ভানুবাবু তখনও বাড়ি ফেরেননি। শুধু আমি আমার দেড়তলার ঘরে রাস্তার দিকের জানলায় না খেয়ে অন্ধকারে জেগে বসে আছি। রাত প্রায় দুটো নাগাদ একটা গাড়ির আওয়াজে সচকিত হয়ে নড়েচড়ে উঠলাম। ওমা! আমি উঠতে না উঠতেই গাড়িটি উধাও হয়ে গেল। হতাশ হয়ে বসে পড়লাম। কিন্তু পাঁচ মিনিট পর গাড়িটি আবারও বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েই আবার ঘুরে চলে গেল। 

এভাবে কিছুক্ষন পরপরই গাড়িটি না থেমে বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়ায় আমি অধৈর্য হয়ে পড়লাম। বোধহয় বার পাচেক এভাবে ঘুরপাক খাওয়ার পর গাড়টি বাড়ির সামনে থামল এবং আমার স্বামী দেবতাটি উক্ত গাড়ি থেকেই নামলেন। গাড়িখানি শোঁ করে চলে যেতেই অবাক হয়ে দেখলাম, উনি নিজের বাড়িতে না ঢুকে উল্টোদিকের বাড়ির দরজার আড়ালে অন্ধকারে লুকিয়ে দাড়ালেন। আমি তো অবাক বিস্ময়ে ভাবছি এ আবার কী হচ্ছে? মনে মনে ভীষন চটে যাচ্ছি যে বৃদ্ধ বয়সে মাঝরাতে কার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। 

আমি নিজে রেকর্ড,রেডিও ও সিনেমার নেপথ্য শিল্পী হলেও অপ্রয়োজনে এঁদের সামনে যেতাম না বা কথা বলতাম না। সুতরাং আরও কিছুক্ষন হবার পরও যখন ছবিদা কিছুতেই ছাড়ছেন না তখন আমি ঘোমটাটা একটু বেশি করে টেনে দরজার আড়াল থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।

একটু বাদেই তিনি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেই নিজের বাড়ির গেট খুলতে যাচ্ছেন তখুনি দেখি সেই গাড়িটা স্পিডে ব্যাক করে এসে গাড়ির ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে কে যেন ওঁর হাত ধরে টানাটানি শুরু করেছেন। 

ভানুবাবু কিছুতেই গাড়িতে উঠবেন না আর যিনি ভেতরে রয়েছেন তিনিও তাঁর সঙ্গে যাবার জন্য ঝুলোঝুলি করছেন। আমার তখনই মনে হল গাড়ির ভেতরের লোকটি ছবিদা।

এভাবে বেশ কিছুক্ষন দেখার পর আমিই আস্তে আস্তে পা টিপেটিপে নীচে নেমে গিয়ে সদর দরজার একপাট খুলে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলাম। কারণ, জানি এত রাতে গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ানোটা আমার শ্বশুরশাশুড়ি জানতে পারলে রাগ করবেন। তাছাড়া আমি নিজে রেকর্ড, রেডিও ও সিনেমার নেপথ্য শিল্পী হলেও অপ্রয়োজনে এঁদের সামনে যেতাম না বা কথা বলতাম না। সুতরাং আরও কিছুক্ষন হবার পরও যখন ছবিদা কিছুতেই ছাড়ছেন না তখন আমি ঘোমটাটা একটু বেশি করে টেনে দরজার আড়াল থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম। 

একটু বাদেই গাড়ির ভেতর থেকে ছবিদার গলা পেলাম উরে বাবা, বৌ দাঁড়িয়ে আছে,পালা,পালা”—বলেই হুস করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গেলেন। 

ভানুবাবু তখন বললেন উঃ, তুমি জানোনা, এক ঘন্টা যাবত বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছি, যেই আমার বাড়ির সামনে আসছি, অমনি ছবিদা গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে, এইবার তোমায় দেখতে পেয়ে পালিয়েছে।