আগস্ট মাসটা বড্ড মিশ্র প্রকৃতির। শ্রাবণের বর্ষা আর ভাদ্রের গরম মিলিয়ে রীতিমতো হাসফাঁস অবস্থা। ভরসা এটুকুই–ইংরেজি ক্যালেন্ডারে এই মাসটা জানান দেয়, পুজো আসতে আর বেশি দেরি নেই। আরও একটা ব্যাপার থাকে এই মাসেই স্বাধীনতা দিবসের আগেপরেই থাকে রাখী বন্ধন। সম্প্রীতির উৎসব। এখন অবশ্য অবাঙালি প্রভাবে সেটা রক্ষাবন্ধন নাম পেয়েছে। তা সে নামে কী এসে য়ায়! আসলে তো উৎসবই। তারপর থাকে জন্মাষ্টমী। শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব। ইদানীং কসমোলিটান বাঙালি অ-বাঙালিদের পার্বণীকেও আপন করে নিয়েছে। ফলে গণেশ চতুর্থীতেও আর শুকনো মুখে থাকছে না বাঙালি। এবছর আবার রাখীবন্ধন, জন্মাষ্টমী আর গণেশ চতুর্থী – পার্বণীর ত্রহস্পর্শ ঘটেছে এই আগস্ট মাসে। প্রত্যেক পার্বণের প্রথাগত ভোগ নিবেদনের উপাচার দিয়ে কেমন করে উৎসব উদযাপন হবে? রাখীবন্ধনে আমিষ, নন্দোৎসবের তাল এবং গণপতি বাপ্পার প্রিয় মিষ্টিতে কেমন করে আরাধনা আর রসনা দুই-ই তুষ্ট হবে – দুটি করে মোট ছ’টি পদে রইল তারই সুলুকসন্ধান।
ফিস ফিঙ্গার
উপকরণ–
মাছের ফিলে– ৩০০ গ্রাম (লম্বা ফিঙ্গার শেপে কাটা), পাতিলেবুর রস– ১ টেবিল চামচ, আদা-রসুন বাটা– ১ চামচ, পেঁয়াজ বাটা– ১ চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা– ১/২ চা-চামচ, ধনেপাতা এবং পুদিনাপাতা বাটা– ২ চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, ফেটানো ডিম– ১ টা, ময়দা– ২-৩ চামচ, নুন স্বাদমতো, ব্রেডক্রাম্ব এবং ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালী-–
প্রথমে মাছের ফিলেগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। এবার একটা বড় পাত্রে মাছের টুকরোগুলো নিয়ে তাতে প্রথমে স্বাদমতো নুন, পাতিলেবুর রস এবং গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে মেখে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর ওই নুন-লেবু মাখানো মাছের মধ্যে একে একে আদা-রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, ধনেপাতা এবং পুদিনাপাতা বাটা দিয়ে খুব ভালো করে মেখে ৩-৪ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে ম্যারিনেট করে রেখে দিতে হবে। এবার ম্যারিনেট করে রাখা মাছ গুলোকে ফ্রিজ থেকে বের করে রাখতে হবে। এরপর একটা বাটিতে ডিম, স্বাদমতো নুন নিয়ে ফেটিয়ে রাখতে হবে। তারপর দুটো আলাদা আলাদা প্লেটে ময়দা আর ব্রেডক্রাম্ব নিতে হবে। এবার ম্যারিনেট করে রাখা মাছের টুকরোগুলোকে এক এক করে প্রথমে ময়দায় কোট করে, তারপর ডিমের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে, ভালো করে ব্রেডক্রাম্ব এ কোট করে নিতে হবে। তারপর একটা ফ্রাই প্যানে বেশি করে সাদা তেল গরম করে তাতে মাছের টুকরোগুলোকে সোনালি করে ভেজে, একটা টিস্যু পেপার পাতা প্লেটে রাখতে হবে কিছুক্ষণ, যাতে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। এবার সার্ভিং প্লেটে সাজিয়ে, কাসুন্দি বা সস এর সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে সুস্বাদু ফিশ ফিঙ্গার।
চিকেন পিৎজা
উপকরণ–
পিৎজা তৈরির বেস (বড়)– ১ টা, চিকেন (ছোটো ছোটো করে কাটা)– ১ কাপ, আদা-রসুনবাটা– ১ চামচ, পেঁয়াজবাটা (ছোটো)– ১ টা, জিরেগুঁড়ো– ১/২ চামচ, ধনেগুঁড়ো– ১/২ চামচ, হলুদগুঁড়ো এবং লঙ্কাগুঁড়ো, নুন স্বাদমতো, ক্যাপ্সিকামকুচি (ছোটো)– ১ টা, পেঁয়াজকুচি (ছোটো)– ১ টা, টোম্যাটোকুচি (ছোটো)– ১ টা, কাঁচালঙ্কাকুচি– ২ টো, সুইট কর্ণ– ২-৩ চামচ, মেয়োনিজ– ২ চামচ, পিৎজা সস– ২ চামচ, চিলিফ্লেক্স– ১/২ চা-চামচ, মিক্সহার্বস– ১/২ চা-চামচ, চিজ প্রয়োজনমতো, সাদা তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালী-–
প্রথমে একটা কড়াইতে অল্প তেল গরম করে, একে একে আদা-রসুনবাটা এবং পেঁয়াজবাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। বেশ একটু ভাজা ভাজা মতো হলে হলুদগুঁড়ো, স্বাদমতো নুন, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো আর সামান্য পরিমাণে জল দিয়ে মশলা কষিয়ে নিতে হবে, যাতে মশলার কাঁচা গন্ধ না থাকে। এবারে এর মধ্যে ছোটো ছোটো করে কেটে রাখা চিকেন দিয়ে মশলার সঙ্গে খুব ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে (মাঝে মাঝে অল্প করে গরম জল দিতে হবে)। বেশ কিছুক্ষণ পর চিকেন মোটামুটি সিদ্ধ হয়ে এলে এবং তেল ছাড়তে শুরু করলে একটা পাত্রে ঢেলে রাখতে হবে। তারপর একটা স্টিলের প্লেটে সামান্য সাদা তেল মাখিয়ে পিৎজা তৈরির বেস রেখে, তার ওপরে এক এক করে মেয়োনিজ, পিৎজা সস দিয়ে পুরো বেসটা কভার করে দিতে হবে। এরপর ক্যাপ্সিকামকুচি, পেঁয়াজকুচি, টোম্যাটোকুচি, কাঁচালঙ্কাকুচি, সুইট কর্ণ এবং চিকেন দিয়ে পুরো পিৎজা বেসটা সাজিয়ে নিতে হবে। তারপর এর ওপরে স্বাদমতো নুন, চিলিফ্লেক্স, মিক্সহার্বস ছড়িয়ে, ওপর থেকে চিজ গ্রেট করে দিতে হবে। এবারে একটা বড় পাত্র গরম করে ওর ভেতরে একটা স্ট্যান্ড বসিয়ে, পিৎজার প্লেটটা বসিয়ে, মাঝারি আঁচে ঢাকা দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর অন্য একটা সার্ভিং প্লেটে রেখে পিৎজা কাটার দিয়ে কেটে গরম গরম সার্ভ করতে হবে।
তালের বড়া
উপকরণ–
তালের মাড় / পাল্প– ৪ কাপ, চিনি– ২০০ গ্রাম, নারকেল কোড়া– ৩ কাপ, চালের গুঁড়ো– দেড় কাপ, ময়দা– ৪ চামচ, নুন স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালী–
প্রথমে একটা বড় পাত্রে তালের মাড় / পাল্প, চালের গুঁড়ো, নারকেল কোড়া, ময়দা, নুন, চিনি সব একসঙ্গে নিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। এবার কড়াইতে বেশি করে সাদা তেল গরম করে, এই মেখে রাখা তালের মিশ্রণ থেকে ছোট ছোট গোলাকার বড়া তেলে ছাড়তে হবে, এবং মাঝারি আঁচে সোনালি করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরি তালের বড়া।
তালের মালপোয়া
উপকরণ–
তালের মাড় / পাল্প– ১ কাপ, পাকা কলা– ২ টো, চালের গুঁড়ো– ১ কাপ, ময়দা– ১ কাপ, সুজি– ৪ চামচ, চিনি– ১ কাপ, দুধ প্রয়োজনমতো, নুন স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালী–
প্রথমে একটা বড় পাত্রে সুজি, কলা ও চিনি নিয়ে একসঙ্গে খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে এবং ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর চিনি গলে গেলে এর মধ্যে একে একে চালের গুঁড়ো, ময়দা, তালের মাড় /পাল্প, দুধ এবং স্বাদমতো নুন দিয়ে আরও একবার খুব ভালো করে মেখে ৩০-৪০ মিনিট মতো ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর একটি বড় পাত্রে সাদা তেল গরম করে, আগে থেকে তৈরি করে রাখা ওই মিশ্রণ থেকে এক হাতা করে নিয়ে গরম তেলে ছাড়তে হবে। এক পিঠ ভাজা হলে অন্য পিঠ লালচে করে ভেজে তুলে নিতে হবে তালের মালপোয়া। ইচ্ছা হলে, চিনির রস তৈরি করে তাতে ডুবিয়ে নেওয়াও যেতে পারে।
সাবুদানার লাড্ডু
উপকরণ–
সাবুদানা (ছোটো)– ১ কাপ / ২৫০ গ্রাম, ঘি– ২ চামচ, চিনি– ১ কাপ / ২৫০ গ্রাম (মিষ্টি কম খেলে চিনির পরিমাণ কমিয়ে নেওয়া যাবে), ফুড কালার (হলুদ অথবা কমলা)– ৩-৪ ফোঁটা, ছোটোএলাচ গুড়ো– ১/২ চা-চামচ, চারমগজ– ২ চামচ, কাজুবাদাম কুচি– ৪ চামচ।
প্রণালী–
প্রথমে সাবুদানা খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ২ কাপ / ৫০০ মিলি জল দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। জল শুকিয়ে সাবুদানা ঝরঝরে হয়ে গেলে, প্যানে ১ চামচ ঘি গরম করে সাবুদানা ভেজে নিতে হবে। ৫-৭ মিনিট ভাজার পরে সাবুদানা গুলো স্বচ্ছ হয়ে আসবে, তখন এর মধ্যে চিনি দিয়ে খুব ভালো করে নাড়াচাড়া করতে হবে। চিনি গলে গেলে ফুড কালার দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে এবং ১ চামচ ঘি দিয়ে নাড়তে হবে। জল শুকিয়ে আসতে শুরু করলে এতে কাজুবাদাম কুচি এবং চারমগজ দিয়ে সম্পূর্ণ জল শুকিয়ে গিয়ে সাবুর মিশ্রণটা একটা মণ্ড আকারে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে। তারপর ছোটোএলাচ গুড়ো মিশিয়ে, একটা পাত্রে ঢেলে একটু ঠাণ্ডা করে নিতে হবে (খেয়াল রাখতে হবে, বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে লাড্ডুর আকারে গড়তে অসুবিধা হতে পারে)। এবারে একটু গরম থাকা অবস্থায় লাড্ডু গুলো তৈরি করে নিতে হবে।
মোদক
উপকরণ–
চালের গুঁড়ো– ১০০ গ্রাম, নারকেল গুঁড়ো (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়)– ১ প্যাকেট, চিনি (গুঁড়ো করে রাখা)– ১৫০ গ্রাম, গুঁড়ো দুধ– ২৫০ গ্রাম, দুধ (ঘন করে ফোটানো)– ৫০০ মিলি., জাফরান (দুধে ভেজানো)– ১ চিমটি, আমন্ড (মিহি করে কুচি করা / গুঁড়ো)– ৫০ গ্রাম, কাজুবাদাম (মিহি করে কুচি করা / গুঁড়ো)– ৫০ গ্রাম, পেস্তা (মিহি করে কুচি করা / গুঁড়ো)– ২৫ গ্রাম, কিশমিশ– ৫০ গ্রাম, ছোটোএলাচ গুঁড়ো– ১ চা-চামচ, ঘি প্রয়োজনমতো, মোদক তৈরির মোল্ড।
প্রণালী–
প্রথমে গ্যাস জ্বেলে একটি বড় কড়াই বসিয়ে তাতে ঘি গরম করে, চালের গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে ২-৩ মিনিট নাড়তে হবে যাতে কাঁচা গন্ধটা চলে যায়। এরপর এতে নারকেল গুঁড়ো দিয়ে আরও ১ মিনিট নাড়াচাড়া করে, ঘন করে ফোটানো দুধ দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে। তারপর গুঁড়ো দুধ, গুঁড়ো চিনি, জাফরান, ছোটোএলাচ গুঁড়ো এবং আমন্ড-কাজু ও পেস্তা দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটা খুব ভালো করে নাড়তে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত পাত্রের গা থেকে আলাদা না হয়ে আসে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিশ্রণটা ডো-এর মতো হয়ে এলে এবং পাত্রের গা থেকে আলাদা হয়ে এলে, একটা থালায় ঢেলে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। এবার ওপর থেকে একটু ঘি ছড়িয়ে ভালো করে হাতের সাহায্যে মেখে ছোটো ছোটো লেচি করে, ভেতরে একটা করে কিশমিশ ভরে দিতে হবে। তারপর মোদকের মোল্ডে সামান্য ঘি মাখিয়ে নিয়ে তাতে একটা করে লেচি দিয়ে মোদকের আকারে গড়ে নিতে হবে। মোদকের মোল্ড যদি না থাকে তাহলে, লেচি গুলোকে মোদকের মতো তৈরি করে, টুথপিক দিয়ে সুন্দর করে দাগ দিয়ে সাজিয়ে নিলেই তৈরি সুস্বাদু মোদক। এবার সার্ভিং প্লেটে রেখে গোলাপের পাপড়ি অথবা রুপোলি তবক দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।