হায় রে ভারতীয় ফুটবল! ভারতের দৈন্যদশা থেকে কিছুতেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না৷ কোচের পর কোচ বদল হচ্ছে৷ কিন্তু ভারত যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থাকছে। সেই জায়গা থেকে কিছুতেই উঠে আসা সম্ভব হচ্ছে না৷ করুণ অবস্থা আরও ঘনীভূত হচ্ছে৷ ভারতীয় ফুটবল সংস্থার ভুল ভাবনা আর কোচের ভুল পরিকল্পনা সর্বনাশ আরও প্রকট হচ্ছে৷ শুধু প্রচারে থেকে কর্মকর্তারা আখের গুছিয়ে নেওয়ার খেলায় বাজিমাত করছেন৷ নিজেদের পছন্দের মতন বিদেশি কোচদের আমদানি করে ঢালাও অর্থ ব্যয় করছেন৷ তবুও ভারতীয় ফুটবলে কোনও হেরফের নেই৷ সমালোচনার কাঁটায় বিদেশি কোচদের হাত থেকে ব্যাটন কেড়ে নিয়ে স্বদেশী কোচের হাতে তুলে দিলেও, কোনও পরিবর্তনের ছবি দেখতে পাওয়া যায়নি৷ ব্যর্থতা আবার সামনে এসেছে ভারতীয় ফুটবলে৷
কবে যে সুদিন আসবে কেউই হলফ করে বলতে পারবেন না৷ কোচ বদল করার নাটক না করে কর্মকর্তাদের উচিত পরিকাঠামো কীভাবে আধুনিক করা যায়! বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়া৷ ঘরের অভ্যন্তরে দাপাদাপি করে ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্রে বড় জায়গা পাওয়াটা কোনও সাফল্য নয়৷ আন্তর্জাতিক ফুটবলের ক্রীড়াঙ্গণে নিজেকে প্রকাশ করতে না পারলে, সবই বৃথা হয়ে যাবে এবং যাচ্ছে৷ ভারতে যেখানে ১৪৫ কোটি মানুষ বাস করে, সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেওয়াটা অন্ধকারে ডুবে থাকা৷ অবাক হতে হয় আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের একটা ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র কেপ ভার্দে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে৷ যেখানে ৬ লক্ষের কম মানুষ বাস করেন৷ তাহলে ভারতের ফুটবলের অবস্থাটা ভাবতে হবে৷
স্বদেশী কোচ খালিদ জামিলের জমানায় ভারতীয় ফুটবলের চেহারায় কোনও নতুন রং লাগেনি৷ সেই দৈন্যদশা প্রকট হচ্ছে তো হচ্ছেই৷ এএফসি এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকে ভারত যেখানে বেরিয়ে আসতে পারে না, সেখানে নতুন কিছু আশা করা বৃথা৷ তাই হল৷ ফুটবলপ্রেমীরা ভেবেছিলেন কোচ খালিদ জামিল সাহসী ভূমিকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন৷ কিন্তু এই পরীক্ষায় ডাহা ফেল করলেন কোচ খালিদ৷
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন কোচ খালিদের ব্যর্থতাটা কোথায়? আসলে কাফা নেশনস কাপ ফুটবলে একটু সাফল্যের মুখ দেখার পরে কোচ খালিদের মুখে চওড়া হাসি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল৷ কিন্তু তিনি একবারের জন্যেও অনুভব করেননি কাফা নেশনস কাপ একটা আমন্ত্রিত ফুটবল টুর্নামেন্ট ছিল৷ ওই টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলকে সাহসী ফুটবল খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করে৷ দেশে ফিরে আসার পরে কোচ খালিদ জামিল সেই পুরনো রোগে আক্রান্ত হলেন৷ অবসর নেওয়া স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীকে ডেকে নিলেন কোচ খালিদ৷ অর্থাৎ তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন সুনীল ছাড়া ভারতীয় দলের আক্রমণভাগের ভিত শক্ত করতে পারা যাবে না৷ চল্লিশের বেশি বয়সের ফুটবলার সুনীল ছেত্রী ছাড়া অন্য কোনও তরুণ স্ট্রাইকার ভারতীয় দলের জয়ের পথকে খুঁজে দিতে পারবেন না! অর্থাৎ ভারতীয় ফুটবলে এখনও সুনীল হলেন অপরিহার্য৷
এখানে একথাও স্পষ্ট হল সুনীলকে বাদের তালিকায় রেখে দিলে কোচের পদটা চলে যেতে পারে৷ সমালোচনার বাক্যবাণে জর্জরিত হবেন কোচ খালিদ৷ তাই কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে সুনীলের উপর ভরসা রেখে ফাটকা চাল খেললেন কোচ খালিদ৷ আদপে সুনীল আসাতে ভারতীয় দল কি লাভবান হল? নিট ফল শূন্য৷ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের খেলায় প্রথম সাক্ষাৎকারে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের খেলাটি ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকল৷ ওই খেলায় সুনীলের কী ভূমিকা ছিল? লজ্জার হার থেকে ভারত বাঁচলেও, কোচ খালিদ জামিল, ঘরের মাঠ অর্থাৎ গোয়াতে দ্বিতীয় সাক্ষাতে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে নতুন কোনও ছক তৈরি করতে পারলেন না৷
শুধু সুনীল কেন, ডিফেন্ডার শুভাশিস বসুকে ডাকতে হল৷ নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার সন্দেশ জিঙ্ঘাল লাল কার্ড দেখাতে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে না পারায়৷ তারপরে দুরন্ত ফুটবলার আপুইয়াকে প্রথমে দলে রাখা হয়নি৷ চাপে পড়ে আপুইয়াকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনও পথ খুঁজে পাননি৷ তারপরে প্রথম ম্যাচে ভারতের গোলদাতা রহিম আলিকে গোয়ার মাঠে প্রথম একাদশে না রেখে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা কোচ খালিদের ভুল সিদ্ধান্ত৷
যেখানে ভারতীয় দল এগিয়ে ছিল একগোলে, সেই গোলকে ধরে রাখবার জন্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল, সেই গোলকে ধরে রাখার জন্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল, তা কোচ খালিদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ সেই ফাঁকে সিঙ্গাপুর দুই গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে বেরিয়ে গেল৷ সুনীল ছেত্রীর গতি যে শ্লথ হয়ে গেছে, তা খেলায় স্পষ্ট৷ সেই সুনীলের পরিবর্তে রহিম আলিকে নামিয়ে কোনও লাভ হল না৷ তার আগেই খেলা ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে৷
একদিকে ভারতীয় দলে রক্ষণভাগে একনাগাড়ে ভুলের খেসারত আর অন্যদিকে আক্রমণভাগের ফুটবলারদের চরম ব্যর্থতা। অন্ধকার আরও ঘনীভূত হচ্ছে৷ কবে ভারতীয় ফুটবল এর থেকে মুক্তি পাবে, কেউই হলফ করে বলতে পারবেন না৷