মৃণাল সেনের ১০২ তম জন্মদিনটি অভিনবভাবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিল উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি আর্কাইভ। গত ১৪ মে, জীবনস্মৃতি আর্কাইভের সংরক্ষণশালায় জন্মদিনটি পালনের আয়োজন করা হয়েছিল। পাঁচদিনব্যাপী একটি প্রদর্শনীর ছিল মৃণাল সেনকে নিয়ে। সাজানো হয়েছিল জেনেসিস এবং একদিন আচানক সিনেমার পোস্টার, বুকলেট, স্থিরচিত্র দিয়ে। অনু্ষ্ঠানের প্রচারপত্র প্রকাশ করেছিলেন মৃণাল সেনের পুত্র ও পুত্রবধূ কুণাল সেন এবং নিশা রূপারেল সেন। মৃণাল সেন গৃহীত দশটি স্থিরচিত্রের প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠানটিকে মননঋদ্ধ করেছিল। আর দুষ্প্রাপ্য প্রাপ্তি ছিল মৃণাল সেন গৃহীত একমাত্র মুভিং ইমেজের প্রদর্শনী। যা মূলত কুণাল সেনের ছোটবেলায় মধুপুর ভ্রমণের পারিবারিক চিত্রে এক নির্বাক চিত্রগ্রহণ হলেও এক অসামান্য ঐতিহাসিক দলিল, সিনেমা গবেষকদের কাছে।
১৯৬৭ সালের শীতকালীন ছুটির সময়ে বিহারের মধুপুরে পারিবারিক ভ্রমণে গিয়েছিলেন মৃণাল সেন। স্ত্রী গীতা ও পুত্র কুণাল ছাড়াও সেই ভ্রমণের সঙ্গী ছিলেন তাঁর দুই ভাই, শাশুড়িমা এবং কুণাল সেনের পোষা কুকুর পিকু। একই জায়গায় শুটিং চলার কারণে মাঝেমধ্যে অনুপকুমার অবসর সময়ে দেখা করতে আসতেন সেন পরিবারের সঙ্গে। এই মধুপুর বেড়াতে যাওয়ার কিছুদিন আগেই মৃণাল সেন মাদ্রাজে এক বিদেশি পর্যটকের কাছ থেকে ৮এমএম মুভি ক্যামেরা কিনেছিলেন। এই ভ্রমণে মাত্র একটিবার ওই ক্যামেরা ব্যবহার করিছিলেন মৃণাল সেন। বাড়ি ফিরে কোডাক থেকে ফিল্ম প্রসেস করা হয়। কিন্তু এই ফর্মাটের প্রোজেক্টর য়ন্ত্র না থাকায় তা দেখার সুযোগ মৃণাল সেনের জবীদ্দশাতে আর হয়ে ওঠেনি।
২০১০ সালে মৃণাল পুত্র কুণাল সেন শিকাগোতে থাকার সময়ে সেই রিলটিকে ফিল্ম ফর্মাট থেকে ডিজিটাল ফর্মাটে ট্রান্সফার করেন। ২ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই নির্বাক ছবির অবস্থা খুব ভালো না হলেও এর সংরক্ষণ ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই জরুরি। মুভিং ইমেজের প্রায় সবটাই মৃণাল সেনের নিজের হাতে তোলা। সামান্য কিছু অংশ, যেখানে কুণাল সেন ক্যামেরা হাতে নিয়েছেন, সেখানে মৃণাল সেনকে দেখা যাচ্ছে। এই নির্বাক চলমান চলচ্চিত্রটি মৃণাল সেন গৃহীত একমাত্র মুভিং ইমেজ। চলচ্চিত্র চর্চাকারীদের কাছে এটি একটি অমূল্য সম্পদ।
উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি আর্কাইভ বরাবরই তাঁদের ভাণ্ডারে এমন অনেক অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কুণাল সেনের অনুমতিক্রমে মৃণাল সেনের ১০২ তম জন্মদিনে এই মুভিং ইমেজ দেখানো ছিল অনুষ্ঠানের পরম প্রাপ্তি।