bhanu bondopadhay and family

বাবার পড়াশোনা

কৌতুক অভিনেতাদের সম্বন্ধে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা যে, তাদের বিদ্যাবুদ্ধির দৌড় খুব বেশি না। এটা যে কী অসম্ভব ভুল, তা আমার লেখাটা পড়লেই প্রমাণ পাবেন।

জহর (কাকা) রায়ের সম্পর্কে শুনেছি,ওঁর একটা বিরাট বড় লাইব্রেরি ছিল, অবসর সময়ে তিনি সেখানেই বসে পড়াশোনা করতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ওঁর প্রিয় লেখক। আর বিদেশী সাহিত্যে পি.জি.উঢাউস, শেক্সপিয়র, সমারসেট মম– এরকম আরও বহু সাহিত্যিকের লেখা তিনি পড়াশুনো করতেন ।

আরেকটা কথা হল প্রফেসর সত্যেন বোস,কবি জসিমুদ্দিন, রমেশ মজুমদার, মোহিতলাল মজুমদার এঁদের পেয়েছিলেন বাবা, মাস্টারমশাই হিসেবে পেয়েছিলেন।‌ আর তাঁদের দ্বারা যে কতটা সমৃদ্ধ হয়েছিলেন সেটা আন্দাজ করা যায়।

এবারে বাবার কথায় বাবার কথা শোনাই। ‍

…দেশি বিদেশি সিনেমা দেখাটা ছিল আমার নেশার মতো। অশোক কুমারের ‘কিসমত’ দেখেছিলাম একুশ বার।
চ্যাপলিনের ‘গ্রেট ডিটেক্টর’ দেখেছি‍ অসংখ্যবার। কলেজে থাকতে ফ্রশক কাপরা পরিচালিত, রোনাল্ড কোলম্যান অভিনীত ‘লস্ট হরাইজন’ ভীষন ভালো লেগেছিল। তখন থেকেই ওঁর ভক্ত হয়ে যাই। কলেজে উঠে প্রথমেই ‘ভিভাভিলা’ দেখেছিলাম। ওয়ালেস বিইরীর অভিনয়ও আমায় প্রভাবিত করে। ‘হাউ গ্রেট ওয়াস মাই ভ্যালি’, ‘মি ডিভস গোস টু টাউন’, ‘সিটিজেন কেন’, ‘দে ডায়েড উইথ দেয়ার বুটস অন’, সর্বোপরি ‘লাইম লাইট’ – এইসব ছবি এবং অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। এছাড়াও নিয়মিত বাংলা ফিল্ম দেখতাম। ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘উত্তরায়ন’, ‘শেষ উত্তর’, ‘প্রিয় বান্ধবী’ ইত্যাদি ছবিও আমাকে প্রভাবিত করে।

ভালো কমেডি সবসময় আমার মনে দাগ কাটত। কলেজ লাইফে দেখা ‘সোনার সংসারে’ তুলসী লাহিড়ি ও অহীন্দ্র চৌধুরীর অভিনয় আমার মনে দাগ কেটে আছে।

bhanu-bandopadhyay

বড়ুয়া সাহেবকে আমার অন্য জগতের মানুষ মনে হত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ১৯৩৭ সালে যদি ভারতের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাবার সুযোগ হত, তাহলে নিশ্চিতভাবে প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘মুক্তি’ ভারতের প্রথম অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সিনেমা হত।

আমি নিজে সুরেলা না হলেও গানবাজনার প্রতি আমার খুবই আকর্ষণ ছিল। আমার স্ত্রী নীলিমা ছিল ‘সঙ্গীত বিশারদ’ উপাধিপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী। তার একটা ‘সংগীতশ্রী’ বলে গানের স্কুলও ছিল। আমাদের বাড়ির গাড়িবারান্দায় হেমন্ত, সুধীরলাল, আলপনা, উৎপলা, শ্যামল, সতীনাথ বহুজন গান গেয়েছে। আবার ঐ গাড়িবারান্দাতেই ফুটবল খেলোয়াড় ভেঙ্কটেশ, ধনরাজ, আমেদ এসে আমার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছে।…

সুতরাং মেয়ে হিসেবে বলতে পারি যে বাবার সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলো সবদিকেই আকর্ষন ছিল।