আজকে শোনাই বাবার কথা পরাণদা মানে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবানীতে।
পরাণদা লিখছেন, …ওঁর সঙ্গে আমি রেডিও নাটক করেছি। দূরদর্শনে ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। খুব মজার মানুষ ছিলেন। মানে জন্মগত মজার মানুষ। উনি সাধারণ কথা বললেও মানুষ হেসে উঠবে এটাই ছিল ওঁর বৈশিষ্ট্য। খুব সেনসিটিভ ছিলেন। একেবারে স্ট্রং আন্টেনা। অডিওতে কোনরকম বাঁকা সুর, জেসচারে অন্যরকম হলেই ধরে পাল্টা দিয়ে দিতেন একেবারে।
ভানুদাকে কেউ হয়তো বলল “আপনার এইসব পুরোনো বস্তাপচা জিনিষগুলো এখনও করেন কেন? “যেই না বলা, সঙ্গে সঙ্গে ভানুদারউত্তর “আরে, বস্তাটা পইচা গেছে, বস্তার ভিতরে সোনার খণ্ডগুলান তো নষ্ট হয় নাই, বস্তাটা পাল্টাইয়া ফেললেই হইব।”
ওঁর জীবনের গভীরে গিয়ে চরিত্র চিত্রায়ন,আজকালকার দিনে ভাবাই যায় না। আমরা তাঁকে বলি কমেডিয়ান। কিন্তু জীবনের সমস্ত স্তরের চরিত্রে উনি ছিলেন।
উনি যে অন্যরকম চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তো সেই জায়গা ধরে রাখার কোনও প্রবহমাণতা নেই। এখন স্পিড এসে গেছে। এখন চরিত্রের মননে, গভীরে গিয়ে চরিত্রের রূপদানের প্রবণতাই হারিয়ে গেছে। সমুদ্রের গভীরে গিয়ে মুক্তো তোলা আর সমুদ্রের ওপরের ফেনা নিয়ে তুষ্ট থাকা এই দুটোর মধ্যে যে তফাত, এখন আর তখনের অভিনয়ে সে কি তফাত রয়েছে। এখন গভীরে যাওয়ার সময় নেই।
একটা ছবি ছিল, খুব সম্ভবত ‘গৃহপ্রবেশ’, উনি সেখানে পরিচারকের পার্ট করছেন। ওঁকে মিড-ক্লোজে ধরা আছে। ওঁকে চারদিক থেকে সবাই ডাকছে। আর উনি এক একজনকে এক একভাবে উত্তর দিচ্ছেন, যখন কর্তা জিজ্ঞেস করছেন,“তুই এটা করেছিস?” তখন হ্যাঁ আর না এর মাঝখানে থলথলে কোরে মুখটা নাড়ছেন- অসাধারণ অভিনয়। ওটা একমাত্র উনিই পারেন।
আমি খুব নিবিষ্টভাবে দেখতাম উনি কীভাবে কথা বলছেন, কীভাবে চোখের ভঙ্গিমা করছেন।
উনি যে অন্যরকম চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তো সেই জায়গা ধরে রাখার কোনও প্রবহমাণতা নেই। এখন স্পিড এসে গেছে। এখন চরিত্রের মননে, গভীরে গিয়ে চরিত্রের রূপদানের প্রবণতাই হারিয়ে গেছে। সমুদ্রের গভীরে গিয়ে মুক্তো তোলা আর সমুদ্রের ওপরের ফেনা নিয়ে তুষ্ট থাকা এই দুটোর মধ্যে যে তফাত, এখন আর তখনের অভিনয়ে সে কি তফাত রয়েছে। এখন গভীরে যাওয়ার সময় নেই।
যারা এই চেষ্টা করেছেন তাতে নাকি সময়ের অপচয় হয়। সংলাপ তো “বিটুইন দ্য ডায়লগস”। শুধু সংলাপ তো অভিনয় নয়। এখন শুধু কথার পিঠে কথা বলে যাও। এ শুধু ওপর থেকে ভেসে যাওয়া,জীবনের গভীরের সন্ধান কোনওদিনই পাওয়া যাবে না।…