nazrul-sukanta-two-voices-of-revolt

নজরুল ও সুকান্ত বিদ্রোহের দুই স্বর

গত ১ নভেম্বর যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টস-এর উপেন্দ্রকিশোর সভাগৃহে ছায়ানট (কলকাতা) ও কথাশিল্প আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে ‘নজরুল ও সুকান্ত: বিদ্রোহের দুই স্বর’ শিরোনামে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী, তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষে আয়োজক সংস্থাদের বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ। মাত্র একুশ বছর বয়সে প্রতিবাদী কবির অকালমৃত্যু হলেও সামান্য কয়েকবছরের সৃষ্টিশীল জীবনে বাংলা সাহিত্যে সুকান্তর যে অবদান তা আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন সাহিত্যপ্রেমীরা। ‘বিদ্রোহী’ বিশেষণে ভূষিত মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের সার্থক উত্তরসূরী সুকান্ত। সাম্যবাদী চেতনায় বিশ্বাসী দুই কবি সবসময় তাঁদের কলম ধরেছেন সমাজের দরিদ্র, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে ভেদাভেদহীন এক সুন্দর সমাজ উপহার দিতে চেয়েছেন আগামী প্রজন্মকে।

তাই সুকান্ত অক্লেশে বলেন  —
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি।
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল ৪টে। তিন ঘন্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠান ছিল বৈচিত্রে ভরপুর। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমঋতা মল্লিক ও পীতম ভট্টাচার্য। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি সৈয়দ হাসমত জালাল এবং ড. পার্থপ্রতিম পাঁজা।

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই দুই কবির সৃষ্টির প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে আলোকপাত করেন আলোচকরা। সুন্দর সমাজ নির্মাণে আজও তাঁরাই আমাদের পথপ্রদর্শক। অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। একক এবং দলীয়ভাবে বাচিক শিল্পীরা নজরুল ও সুকান্তর কবিতা আবৃত্তি করেন। এককভাবে কবিতা আবত্তি করেন — মিতালী মুখার্জী, সীমা দাশগুপ্তা, রুনা মুখার্জী, রাজকুমার মুখোপাধ্যায়, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরজিৎ সেন, রাজশ্রী বসু, অম্বালিকা পাল চৌধুরী, সাহানা নন্দন, অন্বেষা মুখার্জী, আর্যদ্যুতি ঘোষ, অর্ঘ্যদ্যুতি ঘোষ, স্বপ্নিকা দাস রায়, স্বর্ণিকা দাস রায়, জয়স্মিতা ঘোষ, আদ্রিতা মজুমদার, অম্বিকা বিশ্বাস, সৃজিতা বিশ্বাস, অর্পিতা বিশ্বাস, সুমেকা চ্যাটার্জী, শর্মিলা রায়, মৃন্ময়ী দে মুখার্জী ও তনুশ্রী অধিকারী।

দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন — ছান্দিক, অনুভব পর্ণশ্রী সাংস্কৃতিক সংস্থা, সৌমশ্রী কবিতা চর্চা কেন্দ্র, পাপিয়ার পদ্য ঘর — এর শিল্পীবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল — সুকান্তর কবিতার সঙ্গে নজরুল-সঙ্গীতের অপূর্ব মেলবন্ধন।

প্রাক্ স্বাধীনতা যুগে দুই সৃষ্টিশীল মানুষের লেখনী কীভাবে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল, তারই এক ঝলক এই অনুষ্ঠানে উঠে আসে।

পীতম ভট্টাচার্যের নির্বাচনে ছিল সুকান্তর চারটি কবিতা — বিদ্রোহের গান, হে মহাজীবন, প্রার্থী এবং অনুভব। এই কবিতাগুলির ভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোমঋতা পরিবেশন করেন — চল্ রে চপল তরুণদল বাঁধন-হারা, বল ভাই মাভৈঃ মাভৈঃ, দাও শৌর্য দাও ধৈর্য্য হে উদার নাথ, ঝড়- ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান। আয়োজকরা ভবিষ্যতে এরকম অনুষ্ঠান আবারও আয়োজন করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন।