সাজি সবে সদর দরজায় পা রেখেছে৷ চটির স্ট্র্যাপটা পর্যন্ত লাগানো হয়নি৷
— দুধটুকু খেয়ে যা সাজি৷
— উঃ, কতবার বলেছি না মা, পিছু ডেকো না৷ এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে…
— আজকালকার মেয়ে আবার এসবও মানিস! জানিস না, মা পিছু ডাকলে ভাল হয়৷
বাড়ি থেকে বেরনোর আগে দুধটুকু খেয়ে নিয়ে দাদুভাইয়ের গলা জড়িয়ে সাজি বলে— তোমার বউমা কী কম মড্, বলো তো দাদুভাই৷ ফোকলা দাঁতে একমুখ হাসি নিয়ে অমলিন দাশগুপ্ত বলেন— ঠিক ঠিক৷ সুন্দরী, বিদূষী, স্কুলের শিক্ষিকা৷ আর একবার বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিলেই হয়৷
সাজি হো হো করে হেসে বলে— আর আমরা দাদুভাই আলট্রা মডার্ন৷
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সাজি৷ পড়াসোনায় ব্রিলিয়ান্ট৷ চেহারাটিও চমৎকার৷ তকতকে ত্বক, কাজলাকালো দুটি চোখ যেন সরোবরে দুটি ভোমরা, ছোট্ট সুন্দর নাক আর ভারী সুন্দর হাঁ-মুখ৷ হাসলেই সব দাঁত ঝকঝক করে ওঠে৷ ওর আয়নার মতো স্বচ্ছ মনে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও পুরুষের প্রতিবিম্ব পড়েনি৷ মা-বাবা মাঝে মাঝে অনুযোগ করেন— কী রে! প্রেম-ট্রেম করবি না আমরাই দেখব!
–উফ, বাপি প্লিজ৷ বিয়ে করাটা কি এতই জরুরি! ছত্রিশটা বছর তো কাটিয়েই দিলাম৷
সাজির পোশাকি নাম ঋতজা৷ সাইকোলজিতে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে৷ তারপর কিছু প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং৷ এখন ও কলকাতার বিখ্যাত কাউন্সেলর৷ তবে ওর বেশি কাজ ছোটদের নিয়ে৷ বড়দের জন্য চেম্বার খোলা শুধু একদিন৷
সেদিন সত্যিই সাজির খুব তাড়া ছিল৷ সম্ভাবীর ফোন এসেছে পরপর দু’দিন৷ ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু৷ দিল্লি বোর্ডের একটা স্কুলের প্রিন্সিপাল৷ এগারোটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট৷ সম্ভাবী বারবার বলে দিয়েছে আধঘণ্টা আগে একটা মিসড্ কল দিতে৷ ঢাকুরিয়া ব্রিজে উঠেই সাজি মিসড্ কলটা দিল৷ স্কুলে পৌঁছল ঠিক এগারোটা তিনে৷
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডাক পড়ল৷ এর আগেও বহুবার সাজি এসেছে৷ সম্ভাবী নিজের চেয়ারেই বসেছিল৷ ওর সামনে দাঁড়িয়ে উঁচু ক্লাসের এক ছাত্র৷ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারায় কোথায় যেন একরাশ কালো মেঘের ছায়া৷ সম্ভাবী সাজিকে বসতে বলে আলাপ করিয়ে দিল— ক্লাস টেনের মেহুল রয়৷ প্রতি বছর অল সেকশন ফার্স্ট৷ এত ব্রাইট ছেলে সচরাচর আমরা পাই না৷ কিন্তু মেহুল, আজ নবনীতা ম্যাম কমপ্লেন করেছেন তুমি একদম পড়াশোনা করছ না৷
মেহুল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল৷ – যাও, ক্লাসে যাও৷
সাজি হেসে বলল— তোমার নামটা তো খুব সুন্দর৷ কোথায় থাকো?
–৩৪, চক্রবেড়িয়া রোড৷
–খুব চেনা চেনা ঠিকানাটা৷ এক মিনিট, তোমার মায়ের নাম কি অবন্তী রয়?
মেহুল উত্তর দেওয়ার আগেই সম্ভাবী বলে ওঠে— তুই চিনিস নাকি সাজি!
–হ্যাঁ রে৷ আমরা একই স্কুল-কলেজে পড়েছি৷ কতবার ওদের বাড়িতে গেছি৷ মাসিমা দারুণ পিঠে বানাতেন৷ কিন্তু ওটা তো ওর বাবার বাড়ি…
–মাকে গিয়ে বলব আন্টি৷ কী নাম?
— ঋতুজা৷ সাজি দাশগুপ্ত৷
মেহুল সম্ভাবীর পারমিশান নিয়ে ক্লাসে চলে গেল৷
বিকেলের দিকে মাঝে মাঝেই সাজি চলে আসে মেহুলের কাছে৷ অনেক গল্প করে৷ গান শোনে৷ কখনও মেহুল গল্প শুনতে চায়৷ ও ভালবাসে ডিটেকটিভ গল্প৷ মাঝে মাঝেই এক্সাইটেড হয়ে বলে ওঠে— আমিও সত্যান্বেষী হব ম্যাম৷ আবার রূপকথার গল্প শুনতেও ভালবাসে৷ সাজি মনে মনে ভাবে এত ছেলেমানুষ, সহজ-সরল, এত উজ্জ্বল একটা ছেলে সাধারণের মাঝে হারিয়ে যাবে! তাহলে তো সাজির এত বছরের পড়াশোনাই বৃথা৷
— দারুণ যোগাযোগ তো! ওর জন্যই তোকে ডেকে এনেছি সাজি৷ এত ব্রিলিয়ান্ট ছেলে৷ কিন্তু কী কপালের ফের দেখ৷ ফাইনাল ইয়ারে উঠেই ও কেমন হয়ে গেল৷ আমরা তো অল ইন্ডিয়ায় ওর একটা ফাটাফাটি রেজাল্টের আশায় বসে আছি৷ তোর একটু হেলপ দরকার রে৷ পরিচিতি যখন বেরিয়েই গেল তখন তুই ওর বাড়িতে গিয়েই কাউন্সেলিংটা কর৷
— বাবা কেমন? সাজি জিজ্ঞেস করে৷
— হাজার কল করলেও কোনওদিন মিট করতে আসেননি৷ নানা অজুহাতে এড়িয়ে গেছেন৷
অবন্তীর মোবাইল নাম্বারটা নিল সাজি৷ মেহুলকে দেখে ওর মনস্তাত্ত্বিক মন একেবারেই বুঝে ফেলেছে ভয়ঙ্কর কিছু একটা ও লুকোচ্ছে৷ কোনও বিশেষ ঘটনায় ও আহত, বিরক্ত৷ পড়াশোনাও তাই হ্যাম্পার্ড৷
ফোনে অবন্তীর ওয়ার্ম ওয়েলকাম পেয়ে একটা ছুটির দিন দেখে সাজি গেল চক্রবেড়িয়া রোডে৷ মেহুলের বাবার সঙ্গে পরিচয় হল না৷ শুনল ট্যুরে গিয়েছেন৷ একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল৷ অবন্তী ডাকল— আয় মোহর৷ আমার মেয়ে সাজি, মেহুলের ছোট বোন৷ ক্লাস ফোরে পড়ে চিলড্রেন্স অ্যাকাডেমিতে৷ সাজি মনে মনে হিসাব করে৷ ক্লাস ফোর মানে বয়স আট-নয়৷
অবন্তীর সঙ্গে গল্প কী আর ফুরোয়! কলেজ লাইফে ওর একটা পাঞ্জাবি ছেলের সঙ্গে প্রেম ছিল৷ চাঁদ৷ সে সব অনেক কথা৷ বাবা-মায়ের আপত্তিতে বিয়েটা আর হয়ে ওঠেনি৷
— হ্যাঁরে সাজি! তোর বয়ফ্রেন্ড নেই, বুড়ি হতে চললি, বিয়ে করবি কবে!
— অগুনতি৷ তবে পাতে দেওয়ার মতো একটাও নেই৷ ভাবছি একাই কাটিয়ে দেব৷ মেহুলের বাবা কি ট্যুরেই থাকেন বেশি?
–আর বলিস না৷ মাসে হয়তো খুব বেশি হলে দিন দ’শেক কলকাতায়৷ আর ওই ক’দিন শুধুই মোহর আর মোহর৷ মেহুল যেন ওর ছেলেই নয়!
সাজির অদৃশ্য নোটবুক সঙ্গে সঙ্গে কথাগুলি কপি করে নেয়৷
— ছেলে যেমন মা-ন্যাওটা, মেয়ে তেমনই বাপ-সোহাগিনী৷ দাদার সঙ্গে খুব ভাব ছিল, কিন্তু কিছুদিন হল মেহুলই ওকে এড়িয়ে চলছে৷ কেন যে, বুঝতেও পারি না৷ অবন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে৷
অবন্তী ওর বাবা-মায়ের একটিই সন্তান৷ তাই বাড়িটা ওকেই দিয়ে দিয়েছেন৷ বাঘাযতীনে সত্যমের একটা ফ্ল্যাট আছে৷ ওটা তালা বন্ধই থাকে৷ ছেলেমেয়েদের স্কুল আছে৷ তাই এখানেই থাকা৷
এসে পর্যন্ত সাজি মেহুলকে একবারও দেখতে পায়নি৷ অবন্তী ওকে নিয়ে গেল মেহুলের ঘরে৷ সাজি ওর ঘরে ঢুকে দেখল মেহুল গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সারা ঘর ভর্তি ছড়ানো বই-খাতাপত্র৷ দেওয়াল জুড়ে পোস্টার৷ মা-ছেলে, মা-মেয়ের ছবি৷ আর বিটলদের৷ সাজি অবাক হয়৷ সত্যম নেই কেন!
— মেহুল, দ্যাখো তোমার ঋতজা ম্যাম৷ জানিস তো সাজি, মেহুলের তোকে খুব পছন্দ৷ যা সচরাচর হয় না৷
সাজি মেহুলের খাটেই বসল৷ মেহুলকেও বসালো৷ অবন্তী রান্নার ব্যবস্থা দেখতে গেল৷ – আমার নামটা খুব সুন্দর বলেছিলে না ম্যাম! কিন্তু ওটার তো কোনও মানেই নেই৷ আমার ভাল নাম উপবীত৷ দাদামশাইয়ের দেওয়া৷
কুলডাউন মাই বয়৷ উপবীত নামটা বড় সুন্দর৷ কত পবিত্র, তুমি সেরকম হও৷ সংসারে কতরকম মানুষ আছে৷ প্রত্যেকের সৃষ্টিছাড়া আচরণের পিছনে লুকিয়ে তাকে কোনও ঘটনা অথবা কেউ অসুস্থ৷ তুমি মনে করো তোমার বাবা সেরকমই কেউ৷ আজ থেকে তুমি সকলকে ক্ষমার চোখে দেখবে৷ মোহর ছোট৷ ও বাবাকে ভালবাসে৷ বোঝে না৷ যেদিন ওর বোধশক্তি হবে, ও মাকে বলে দেবে৷ তুমি দেখো মেহুল৷ তোমার বাবা তার আগেই নিজের আচরণে পরিবর্তন আনবেন৷
সাজি দেখল মেহুল একটা খোলসের মধ্যে গুটিয়ে আছে৷ সেটা থেকে ওকে টেনে বের করে আনতে পারলেই সব স্বচ্ছ হয়ে যাবে৷ ওর সঙ্গী হতে হবে, বন্ধুর মতো মিশতে হবে৷
— বাবা কোথায় মেহুল! – বোধ হয় ট্যুরে৷ কথাটা ভাল লাগল না সাজির৷ মেহুলের খাতা-পত্র উল্টে দেখল৷ বেশির ভাগই ফাঁকা বা ইনকমপ্লিট৷ – কেন এরকম মেহুল! তুমি না স্কুলের ব্রাইটেস্ট বয়!
বিকেলের দিকে মাঝে মাঝেই সাজি চলে আসে মেহুলের কাছে৷ অনেক গল্প করে৷ গান শোনে৷ কখনও মেহুল গল্প শুনতে চায়৷ ও ভালবাসে ডিটেকটিভ গল্প৷ মাঝে মাঝেই এক্সাইটেড হয়ে বলে ওঠে— আমিও সত্যান্বেষী হব ম্যাম৷ আবার রূপকথার গল্প শুনতেও ভালবাসে৷ সাজি মনে মনে ভাবে এত ছেলেমানুষ, সহজ-সরল, এত উজ্জ্বল একটা ছেলে সাধারণের মাঝে হারিয়ে যাবে! তাহলে তো সাজির এত বছরের পড়াশোনাই বৃথা৷
ছুটিছাটার দিনে মেহুলকে নিয়ে সাজি বেড়াতে বেরোয়৷ একদিন ওরা গেল চিড়িয়াখানায়৷ সাত-সকালে৷ পনেরো বছরের একটা ছেলে বাঁধনহারা হয়ে মিশে গেল ফুলেদের মেলায়, পাখিদের কলরবে৷ খুশির হাওয়ায় মেহুল ভেসে চলল৷ কত-কতদিন পরে সাজি দেখল মেহুল প্রাণ খুলে হাসছে৷ ছুটছে৷ হরিণকে ছোলা খাওয়াচ্ছে৷ সাজি একটু পেছনে পড়ে গিয়েছিল৷ হঠাৎ নজরে পড়ল একটু দূরে মেহুল একটা আট-দশ বছরের মেয়ের হাত ধরে কী যেন বলছে৷ ছুট্টে গেল সাজি৷
— তোমার মা কোথায়! কেন বাবার সঙ্গে একা এসেছ? মেয়েটি ভয় পেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল৷ সাজি বুঝল ও ঠিক সূত্র ধরেই এগোচ্ছে৷
ওরা কত ঘোরে৷ সারা কলকাতা৷ কিন্তু মেহুলের পড়াশোনা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে৷ সম্ভাবীর কাছে আর একটু সময় চায় সাজি৷
এর মধ্যে অনেক কথা বলেছে মেহুল৷ মাকে চোখে হারায়৷ কিন্তু বাবা আর মোহরকে সহ্য করতে পারে না৷ কেন! কেন! সাজি ভাবে৷
সেদিন মেহুলের স্কুল ছুটি৷ ওদের ফাউন্ডেশন ডে৷ মোহর স্কুলে৷ অবন্তী কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে৷ সত্যমের সঙ্গে সাজির পরিচয় হয়নি— সেদিন পর্যন্ত৷ মেহুল জানত— সাজি আসবে৷ মে মাস৷ প্রচণ্ড তাপ৷ মেহুলের ঘরের মোটা পর্দাগুলো টেনে দিল সাজি৷ আধো অন্ধকারে দু’জনে আধশোওয়া হয়ে গল্প করছিল৷ নানারকম৷ হঠাৎ সাজি জিজ্ঞেস করল— কেন পড়াশোনা করছ না তুমি মেহুল? সব ম্যামরা কমপ্লেন করছেন৷ প্রিন্সিপ্যাল ম্যামের কত আশা৷ স্কুলের গর্ব তুমি৷ কেন মেহুল! কেন! আমি তো তোমার বন্ধু৷ আমাকে বলো৷
সাজির কোলে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে মেহুল৷
— আমি কী করে মন দেব পড়ায় ম্যাম! চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবা মোহরকে কোলে বসিয়ে আদর করছে৷ খাইয়ে দিচ্ছে৷ ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে কত কী করছে…৷ মায়ের অ্যাবসেন্সে৷ মোহর কি শিশু! আমি পারছি না ম্যাম৷ আমি পারব না৷ এসব দেখলেই আমাকে পাহাড়ের চুড়ো থেকে কে যেন ধাক্কা মারে৷ আমি গড়িয়ে পড়তেই থাকি, পড়তেই থাকি…৷
সাজি বুঝতে পারে সব৷ সস্নেহে মেহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়৷
— কুলডাউন মাই বয়৷ উপবীত নামটা বড় সুন্দর৷ কত পবিত্র, তুমি সেরকম হও৷ সংসারে কতরকম মানুষ আছে৷ প্রত্যেকের সৃষ্টিছাড়া আচরণের পিছনে লুকিয়ে তাকে কোনও ঘটনা অথবা কেউ অসুস্থ৷ তুমি মনে করো তোমার বাবা সেরকমই কেউ৷ আজ থেকে তুমি সকলকে ক্ষমার চোখে দেখবে৷ মোহর ছোট৷ ও বাবাকে ভালবাসে৷ বোঝে না৷ যেদিন ওর বোধশক্তি হবে, ও মাকে বলে দেবে৷ তুমি দেখো মেহুল৷ তোমার বাবা তার আগেই নিজের আচরণে পরিবর্তন আনবেন৷ কিন্তু মেহুল, ফাইনালের আর দেরি নেই৷ সবার যে অনেক আশা তোমাকে নিয়ে৷ আজ থেকেই জোর কদমে পড়াশোনা৷ সেই জগৎটায়, যেখানে তুমি বুঁদ হয়ে ডুবে থাকতে৷ প্রমিস, মেহুল৷
দু’হাত দিয়ে সাজিকে জড়িয়ে ধরে মেহুল৷ – প্রমিস ম্যাম, কিন্তু তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেও না কোনওদিন৷ তুমি যে আমার অন্য মা৷
আজ সাজির মনে সন্ধের আকাশের তারাগুলো জুঁইফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে৷ কানে বাজছে স্যারের একটা কথা—জেনে রাখবে ঋতুজা, শতকরা পঞ্চাশভাগ শিশুকন্যার প্রথম মোলেস্টেশন ঘটে তার জন্মদাতার হাতে…৷
অবন্তী বেরতে যাচ্ছিল৷ তখনই এক ভদ্রলোক ঢুকলেন৷ অবন্তী বলে উঠল— আরে, দাঁড়া দাঁড়া, পরিচয় করিয়ে দিই৷ ও সত্যম৷ আর এ সাজি৷ মেহুলের নতুন ম্যাম৷ সাজি নমস্কার করে বলে— আর একদিন আলাপ হবে ভাল করে৷ আজ আসি৷
রাস্তায় বেরিয়ে সাজির চিন্তাগুলো কেমন খেই হারিয়ে ফেলল৷ ওর চেম্বারে আসা ভদ্রলোক প্রান্তিক রায় আর সত্যম একই লোক৷ তাহলে সত্যম রায় জানেন যে তিনি অন্যায় কাজ করছেন৷ তিনি বিকৃতমনস্ক৷ তবে সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন যখন হয়েছেন তখন মানতেই হবে উনি নিজেকে পাল্টাতে চান৷ যে রোগী আত্মসমর্পণ করে, চিকিৎসকের সুবিধা হয় তার চিকিৎসা করতে৷ বিশেষ করে মনস্তাত্ত্বিকের৷
সাজির এখন অনেক কাজ৷ সত্যমকে আলোর পথ দেখানো৷ মেহুলকে স্বাভাবিক করে তোলা৷ ও যে ওর অন্য মা৷ অপত্য স্নেহে আপ্লুত হৃদয় নিয়ে তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে৷
কিন্তু এমনও তো হতে পারে৷ আজকের পরে হযতো সত্যম আর ওর চেম্বারেই এলেন না৷ তাহলে!
অঙ্কন: ডি’সুজা
শনিবারের চিঠি, মে, ২০১৩ সংখ্যা