Village Mela Utshav West Bengal

রথযাত্রায় নোনতা-মিষ্টি

বাঙালির উৎসবের দড়িতে টান দিয়ে চলে এল ‘রথযাত্রা’প্রতিবছর শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় বাঙালির আর এক প্রিয় উৎসব ‘রথযাত্রা’বিশাল রথে জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ স্থাপন করে শোভাযাত্রায় বের হওয়ার পালা এবার। আর বেরনোর উপলক্ষ তো আছেই। কারণ, রথ মানেই মেলা—রথের মেলা। আর সেই মেলায় দুটি লোকায়ত খাওয়ার কিন্তু একেবারে মাস্ট আইটেম। প্রথমে পাঁপড়ে কড়মড় আর শেষে জিলিপির রসে টইটুম্বর। মানে একেবারে কড়ি আর কোমলের যুগলবন্দি নোনতা-মিষ্টিতে। সঙ্গে নিমকি, গজা, লাড্ডু-র এক্সট্রা টাইম। যদিও জগন্নাথ দেবের ছাপ্পান্ন ভোগে কিন্তু পাঁপব আর জিলিপির জায়গায় হয়নি। কিন্তু তাতে কী, ভোগ তো মন্দিরে। সে মন্দির থেকে নেমে পথে নামেন জগন্নাথ দেব, তখন মানুষের মেলার সিম্বলিক ট্রেড সিক্রেট, না ফুড সিক্রেট কী, সেটাই বরং পরখ করে দেখা যাক।   

thin Indian wafer

পাঁপড় ভাজা

উপকরণ–

আলু– ২ টো (মাঝারি মাপের), সাবুদানা (মাঝারি অথবা ছোটো দানা)– ১ কাপ, গরম জল– ৭ কাপ, চিলি ফ্লেক্স– ১ চা-চামচ, ধনেপাতাকুচি– ১ চামচ, নুন স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী-

আলুর খোসা ছাড়িয়ে গ্রেট করে নিতে হবে। তারপর বেশ কয়েকবার পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সাবুদানা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে, কড়াইতে গরম জল দিয়ে সাবুদানা এবং গ্রেট করে ধুয়ে রাখা আলু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে, ৫-৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর মাঝারি আঁচে, ১০-১৫ মিনিট সাবুদানা এবং আলু সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ঢাকা দিয়ে রান্না করে নিতে হবে (মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে নেড়ে দিতে হবে)। বেশ ঘন হয়ে এলে, সাবুদানা এবং আলু খুব ভালো করে সিদ্ধ হয়ে গেলে, এরমধ্যে স্বাদমতো নুন, চিলি ফ্লেক্স, ধনেপাতাকুচি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে (খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ব্যাটারটা খুব ঘন বা খুব পাতলা না হয়ে যায়)। এবার ১৫-২০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে, যাতে একটু ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তারপর একটু মোটা প্ল্যাস্টিকের শিটের ওপর সামান্য তেল লাগিয়ে, এক হাতা করে পাঁপড়ের ব্যাটার গোল করে দিয়ে দিতে হবে। এবার ২-৩ দিন রোদে অথবা পাখার হাওয়ায় শুকিয়ে নিতে হবে এবং এয়ার টাইট কন্টেনারে রেখে দিতে হবে। তারপর প্রয়োজনমতো সাদা তেলে ভেজে পরিবেশন করতে হবে পাঁপড় ভাজা, আর এর সঙ্গে যদি থাকে লাল বাদাম ভাজা… তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

Fried Snacks

কুচো নিমকি

উপকরণ–

ময়দা– ২৫০ গ্রাম, ঘি– ২ চামচ, কালোজিরে– ১/২ চামচ, জোয়ান– ১/২ চামচ, নুন স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল এবং উষ্ণ গরম জল প্রয়োজনমতো, বিটনুন এবং লঙ্কাগুঁড়ো সামান্য।

প্রণালী–

প্রথমে একটা বড় পাত্রে ময়দা, স্বাদমতো নুন, কালোজিরে, জোয়ান এবং ২ চামচ ঘি নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ময়ান দিয়ে, অল্প অল্প করে উষ্ণ গরম জল দিয়ে খুব ভালোভাবে মেখে একটা মণ্ড তৈরি করে রাখতে হবে। এবার এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা ঘি দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে একটা ভিজে কাপড় দিয়ে মণ্ডটি ১৫-২০ মিনিট ঢেকে রেখে দিতে হবে। তারপর ওই মণ্ডটি আরও একবার ভালো করে মেখে নিয়ে, তা থেকে বড়ো বড়ো লেচি কেটে বেলে নিতে হবে। এরপর একটা ছুরির সাহায্যে প্রথমে সোজা সোজা লাইন টেনে কেটে নিয়ে, পরেরবার লম্বা লম্বা একটু তেরছা লাইন টেনে কেটে নিতে হবে। দেখতে অনেকটা ছোটো ছোটো বরফির মতো হবে। এবার একটা পাত্র গরম করে তাতে প্রয়োজনমতো সাদা তেল দিয়ে ভালো করে গরম করে নিতে হবে। এবার এর মধ্যে ছোটো ছোটো বরফির আকারে কেটে রাখা নিমকিগুলো ছেড়ে দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ পর নিমকিগুলো সোনালি রঙ ধরলে তেল ঝরিয়ে তুলে নিতে হবে। সব শেষে সামান্য বিটনুন আর লঙ্কাগুঁড়ো ছড়িয়ে, মিশিয়ে নিয়ে সার্ভ করতে হবে।

Sweet Snacks

খাস্তা গজা

উপকরণ–

ময়দা– ৫০০ গ্রাম, ঘি– ৪-৫ চামচ, কালোজিরে– ১ চা-চামচ, জোয়ান– ১ চা-চামচ, নুন এবং চিনি স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল এবং উষ্ণ গরম জল।

প্রণালী–

প্রথমে একটা বড় পাত্রে ময়দা, স্বাদমতো নুন, কালোজিরে, জোয়ান এবং ঘি নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ময়ান দিয়ে, অল্প অল্প করে উষ্ণ গরম জল দিয়ে খুব ভালোভাবে মেখে একটা মণ্ড তৈরি করে রাখতে হবে। এবার এরমধ্যে কয়েক ফোঁটা ঘি দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে একটা ভিজে কাপড় দিয়ে মণ্ডটি বেশ কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে দিতে হবে। এবার একটা বড়ো আকারের পাত্রে পরিমাণমতো চিনি এবং জল দিয়ে রস তৈরি করে নিতে হবে (দুই আঙ্গুলে রস নিয়ে দেখে নিতে হবে, এক তার হলে বুঝতে হবে রস তৈরি ঠিক হয়েছে)। তারপর আগে থেকে মেখে রাখা ওই মণ্ডটা আরও একবার ভালো করে মেখে নিয়ে, তা থেকে বড়ো বড়ো লেচি কেটে একটু মোটা করে বেলে নিতে হবে। এরপর একটা ছুরির সাহায্যে চৌকো চৌকো করে কেটে নিতে হবে। এবার একটা পাত্রে প্রয়োজনমতো সাদা তেল নিয়ে ভালো করে গরম করে নিতে হবে। এবার এরমধ্যে চৌকো করে কেটে রাখা গজাগুলো ছেড়ে দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ পর গজাগুলো সোনালি রঙের হয়ে এলে তেল ঝরিয়ে তুলে নিতে হবে। এরপর সেগুলো চিনির রসে বেশ কিছু সময় ধরে ডুবিয়ে রাখতে হবে। রস সম্পূর্ণভাবে গজাগুলোতে ঢুকে গেলে পরিবেশন করতে হবে খাস্তা গজা।

Coconut laddoo

নারকেলের লাড্ডু

উপকরণ–

নারকেল বাটা– ২ কাপ, সুজি– ১/২ কাপ, ছানা– ১/২ কাপ, ঘি– ৪ চামচ, ছোটো এলাচ গুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, গুড় স্বাদমতো, কাজুবাদাম এবং নারকেল পাওডার প্রয়োজনমতো (বাজারে কোকোনাট পাওডার হিসাবে প্যাকেট পাওয়া যায়)।

প্রণালী–

প্রথমে একটা পাত্রে ছানা ভালো করে মেখে নিয়ে, তাতে নারকেল বাটা মিশিয়ে আরও একবার খুব ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। তারপর সুজি হালকা আঁচে ভেজে আলাদা পাত্রে তুলে রাখতে হবে। এবার অন্য একটা পাত্রে ঘি গরম করে তাতে ভেজে রাখা সুজি আর মেখে রাখা ছানা-নারকেল বাটা দিয়ে খুব ভালোভাবে মেশাতে হবে, এবার অল্প অল্প করে স্বাদমতো গুড় মেশাতে হবে, যাতে মণ্ডটা বেশ মসৃণ এবং একটু চিটচিটে মতো হয়। মিশ্রণটা তৈরি হয়ে এলে, ছোটো এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে ভালো করে মিশিয়ে, নামিয়ে সামান্য ঠাণ্ডা করে নিতে হবে (হাতে সহ্য করতে পারা যাবে এমন ঠাণ্ডা হয় যেন)। এরপর হাতে অল্প ঘি মাখিয়ে, ওই মণ্ড থেকে কিছুটা করে নিয়ে হাতের সাহায্যে গোল গোল লাড্ডুর আকারে গড়ে নিতে হবে। লাড্ডু তৈরির সময় ভেতরে একটা করে কাজুবাদাম ভরে দিতে হবে। তারপর অন্য একটা পাত্রে নারকেল পাওডার নিয়ে তাতে লাড্ডুগুলো একে একে গড়িয়ে নিতে হবে, যাতে করে লাড্ডুর গায়ে নারকেল পাওডারটা সুন্দর করে কোট হয়ে যায়। এবার প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে, সুস্বাদু নারকেলের লাড্ডু।

jilipi sweet

জিলিপি

উপকরণ–

ময়দা– ২৫০ গ্রাম, চিনি– ৫০০ গ্রাম (৪ কাপ), জল– ২ কাপ, ছোটো এলাচ– ৩-৪ টে, বেকিং সোডা– ১ চিমটি, ভাজার জন্য সাদা তেল।

প্রণালী–

প্রথমে একটা পাত্রে জিলিপির খামির তৈরি করার জন্য ১৭০ গ্রাম ময়দা জল দিয়ে একটু থকথকে করে মেখে ১ দিন ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর পরের দিন ঢাকা খুলে সেটা একটু ফেটিয়ে নিয়ে, ওর মধ্যে বাকি ময়দা এবং বেকিং সোডা দিয়ে খুব ভালো করে ফেটিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে (প্রয়োজনমতো জল মেশানো যেতে পারে)খুব ঘন আবার খুব পাতলা যেন না হয়, মিডিয়াম একটা ব্যাটার তৈরি করে রাখতে হবে। এবার একটা বড়ো আকারের পাত্রে চিনি, জল এবং থেঁতো করা ছোটো এলাচ দিয়ে রস তৈরি করে নিতে হবে। চিনির রস হালকা আঠালো হলে নামিয়ে নিতে হবে। এবার একটা পাত্রে প্রয়োজনমতো সাদা তেল নিয়ে ভালো করে গরম করে নিতে হবে। এরপর একটা খালি বোতলের মধ্যে ব্যাটার ভরে, ক্যাপে একটা ছিদ্র করে নিতে হবে। তারপর গরম তেলে বোতলে ভরে রাখা ব্যাটার জিলিপির মতো আড়াই প্যাচ করে দিতে হবে। এবার বেশ কিছুক্ষণ পর জিলিপিগুলো লালচে রঙের হয়ে এলে তেল ঝরিয়ে তুলে নিতে হবে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো চিনির রসে বেশ কিছু সময় ধরে ডুবিয়ে অন্য একটা পাত্রে রস ঝরিয়ে তুলে নিয়ে পরিবেশন করতে হবে মুচমুচে জিলিপি।