suchitra sen and bhanu bandopadhyay

মহানায়িকা ও বাবার সুসম্পর্ক

সুচিত্রা সেন যে স্বল্পবাক ছিলেন ও লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে ভালবাসতেন এটা সবার জানা কিন্তু বাবার সঙ্গে ওঁর একটা খুব বন্ধুর সম্পর্ক ছিল। দুজনেরই শেকড় পূর্ববঙ্গেওঁদের প্রথম দেখা হল‘সাত নম্বর কয়েদী’ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে। ওঁদের সখ্যতা বাড়ল‘সাড়ে চুয়াত্তর’ছবি করার সময়। 

সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ সেনের ভরসার মানুষ ছিলেন বাবা। একটি রাত’নামে একটি ছবির আউটডোর শুটিংয়ে চলেছেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সবিতা বসু আর বাবা। দিবানাথ সেন সুচিত্রাকে স্টেশনে ছাড়তে এসে বাবার পাশে বসিয়ে বলে গেলেন, আপনার জিম্মায় রেখে গেলাম। একটু ভাল করে দেখভাল করবেন। আউটডোরে যাচ্ছেন তো। কয়েকদিন পরে যখন ফেরা হল, হাওড়া স্টেশনে দিবানাথ এলেন স্ত্রীকে রিসিভ করতে। বাবা ওঁকে বললেন এই যে তুতুবাবু, আপনার স্ত্রীকে এক পিস ফিরিয়ে দিলাম  –‘এক পিস’কথাটা তখন খুব চালু ছিল অর্থাৎ অক্ষত,সশরীরে।

suchitra sen and bhanu bandopadhyay

একবার দুজনে দুটি আলাদা আলাদা ছবির জন্য শুটিং করতে মুম্বই গেছেন। ওখানে এক পার্টিতে আবার দুজনের দেখা। সুচিত্রা সেন আমাদের পরিবারকে এতই আপন মনে করতেন যে মুম্বই থেকে একটা লাল ছাপা শাড়ি নিয়ে এসে মা কে দিয়েছিলেন। এটা মা এর মন খুব ছুঁয়ে যায় যে ওখানে গিয়ে সুচিত্রা আমার কথা মনে করে একটা উপহার এনেছে। মা বাবাকে বলেন যে আমাদেরও তো ওকে কিছু দেওয়া উচিতবাবা তখন নিউ মার্কেট থেকে একটা পারফিউম কিনে দেন ওঁকে, যেটা সুচিত্রা সেনের খুব পছন্দ হয়েছিল।

suchitra sen bhanu suchitra sen and bhanu bandopadhyay uttam kumar
ছবি দেখলে বোঝা যায় ভানুবাবুর সঙ্গে সুচিত্রার সখ্যতার সম্পর্ক, আছেন উত্তমকুমারও

একবার মহানায়িকার কাছে থিয়েটারে অভিনয় করার অফার আসে। মিসেস সেন বাবাকে ওঁর বাড়িতে ডেকে পাঠান এবং বলেন যে ওরা আমায় একটা অনেক টাকার পারিশ্রমিক অফার করছে। বাবা তখন বলেন “আপনি রোজ রোজ অভিনয় করবেন মঞ্চে, পাবলিক আপনাকে রোজ দেখতে পাবে সহজেই, সেটা কি আপনি নিতে পারবেন? আরেকটু ভেবে দেখুন”।

তিনি থিয়েটারের অফার চিরদিনের জন্য প্রত্যাখ্যান করেন। নিজের ইমেজ রক্ষা করার জন্য থিয়েটারের অফার নাকচ করেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে এটাও প্রমান হয় যে বাবাকে কতটা অভিভাবকসম শ্রদ্ধাও করতেন মহানায়িকা।

বাবার আইকনিক নাটক জয় মা কালি বোর্ডিং’এর স্পেশাল শো ছিল তপন থিয়েটারে। বাবা সুচিত্রা সেনকে আমন্ত্রন জানান। উনি রাজী হয়ে যান কিন্তু বলেন যে, আমি কুড়ি-পচিশ মিনিটের বেশি থাকব না। উনি এসেছেন শুনলে দর্শকদের ঠেকানো মুশকিল হবে তাই বাবা ফার্স্ট রোয়ের দশটা ও সেকেন্ড রোয়ের দশটা রো রিসার্ভ রাখলেন। উনি এলেন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে। নাটক শেষ হবার পাঁচ মিনিট আগে চলে যান মানে পুরো নাটকটাই উনি দেখেছিলেন এবং পরে ফোন কোরে বাবাকে প্রশংসা করেন।

উনি কোন উতসব, অনুষ্ঠানে না গেলেও প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ পেলে ছুটে যেতেন। আমার ঠাকুরদা, ঠাকুমা মারা যেতে উনি হবিষ্যি ফল নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা কোরে যান। বাবা মারা যাওয়ার পর সকলে যখন শ্মশানে, তখন মহানায়িকা আমাদের বাড়িতে এসে সারা দুপুর মা এর হাতটা শক্ত করে নিজের হাতের মধ্যে ধরে বসেছিলেন। 

একেই বলে পারিবারিক সৌহার্দ্য।