মানব সভ্যতার আদিকাল থেকে সঙ্গীত মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, প্রতিবাদ, উদ্যাপন, মিলন – সব ক্ষেত্রেই সঙ্গীতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সারা পৃথিবীতে একুশে জুন দিনটি পালিত হয় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস (World Music Day) হিসাবে। বিশ্বের সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য দিনটি এক উৎসব, এক মিলনমেলা।
দিনটির সূচনা হয় ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে। ফরাসী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং (Jack Lang) ও সঙ্গীতজ্ঞ মরিস ফ্লূরে (Maurice Fleuret) সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন এই দিবস উদ্যাপনের। তাঁদের ধারণায় – “সঙ্গীত ছড়িয়ে দেওয়া উচিত সর্বত্র এবং সঙ্গীতের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।” এই ভাবনা থেকে ‘Fete de la Musique’ নামে একটি অনুষ্ঠানের সূচনা হয় প্যারিসে। সেই থেকেই প্রতি বছর ২১ জুন বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এর মূল উদ্দেশ্য – সঙ্গীতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে মানুষকে একত্রিত করা এবং সঙ্গীতপ্রেমীদের উৎসাহ প্রদান। এদিন বিভিন্ন দেশে, শহরগুলিতে উন্মুক্ত আকাশের নীচে, পথে, ঘাটে, পার্কে বিনামূল্যে সঙ্গীত পরিবেশনা হয় যেখানে অংশগ্রহণ করেন পেশাদার ও অপেশাদার সব ধরনের শিল্পীরা এবং উপভোগ করেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
২১ জুন গ্রীষ্মের দীর্ঘতম দিন। তাই এই দিনটিকেই প্যারিসে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে মানুষ বেশীক্ষণ বাইরে থাকতে পারে। ১৯৮৮ সালে ২১ জুন পড়েছিল ফুটবল বিশ্বকাপের মাঝপথে। ফরাসী সরকার সেবছর আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে সঙ্গীত দিবস ও বিশ্বকাপ একত্রে উদ্যাপন করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এটি ছিল তাদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ঐতিহ্যের এক মেলবন্ধন।
সঙ্গীত এমন একটি ভাষা যা জাতি-বর্ণ-ধর্মের ভেদ পেরিয়ে মানুষকে একসঙ্গে আনতে সক্ষম। প্রতিভাবান নতুন সঙ্গীত শিল্পীদের পাদপ্রদীপের আলোয় আনা, তাদের উৎসাহদান এবং সঙ্গীতচর্চা আমজনতার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এই দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ দিনটিতে বিভিন্ন দেশে সেখানকার ভাষা ও ঐতিহ্যের সঙ্গীত উদ্যাপন করে সম্মান জানানো হয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে। মানসিক সুস্থতা, প্রশান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য সঙ্গীত যে অপরিহার্য, সেই চিন্তাধারার প্রসার ঘটানোও এ দিনটির আরেক উদ্দেশ্য। ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা সহ প্রায় একশো কুড়িটিরও বেশী দেশে উদ্যাপিত হয় এই দিবস।
ফ্রান্সে এই দিনটি নিয়েছে জাতীয় উৎসবের রূপ। প্যারিসের রাস্তায়, মেট্রো স্টেশনে, রেস্তোঁরায়, হাজারো শিল্পী পরিবেশন করেন নানা ধরনের সঙ্গীত। জ্যাজ, ক্লাসিক্যাল, র্যাপ, রক, পপ, লোকসঙ্গীত, ফিউশন ইত্যাদিতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে প্যারিস। ২১ জুন গ্রীষ্মের দীর্ঘতম দিন। তাই এই দিনটিকেই প্যারিসে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে মানুষ বেশীক্ষণ বাইরে থাকতে পারে। ১৯৮৮ সালে ২১ জুন পড়েছিল ফুটবল বিশ্বকাপের মাঝপথে। ফরাসী সরকার সেবছর আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে সঙ্গীত দিবস ও বিশ্বকাপ একত্রে উদ্যাপন করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এটি ছিল তাদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ঐতিহ্যের এক মেলবন্ধন।
আমেরিকায় এই দিনে বিভিন্ন দাতব্য সংগঠন এবং সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি বিনামূল্যে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। শহরের বিভিন্ন পার্ক, ফুটপাথ, রাস্তা, খোলা চত্বরে হয় পেশাদার, অপেশাদার শিল্পীদের ‘লাইভ পারফরম্যান্স’। নিউইয়র্ক শহরে এই দিন উপলক্ষে প্রথম অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় ২০০৭ সালে। আফ্রিকায় নাইজিরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়াতে লোকসঙ্গীত এবং সেখানকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিশেষ কিছু বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনে উদযাপিত হয় দিনটি। এখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রায় সঙ্গীত ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার মিশে আছে গভীরভাবে।
ভারতেও এই উদ্যাপন নানা রূপে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, কোলকাতা, চেন্নাই ইত্যাদি শহরে নানান সঙ্গীত উৎসবে অংশ নেন ব্যান্ডের দল, বিভিন্ন ধরনের শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞরা। সঙ্গীত শিক্ষার স্কুলগুলিও এদিন আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। এখন ভারতে প্রচুর জনপ্রিয়তা অনলাইন কনসার্ট ও ভার্চুয়াল জ্যামিং সেশনের। ইউ. টিউব., ফেস বুক, ইনস্টাগ্রাম এবং ভারতীয় স্ট্রিমিং অ্যাপগুলো এদিন নানা ‘লাইভ ইভেন্ট’ সরাসরি সম্প্রচার করে। অল ইণ্ডিয়া রেডিও, রেড এফ-এম, মির্চি, রেডিও সিটি ইত্যাদি এফ-এম চ্যানেল সম্প্রচার করে বিশেষ অনুষ্ঠান। ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত থেকে শুরু করে ভজন, গজল, সুফি, রবীন্দ্র-নজরুলসঙ্গীত, বিভিন্ন ধরনের বাংলা-হিন্দি গান ও নানান রাজের লোকসঙ্গীতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক সমাজসেবী সংস্থা পথশিশুদের জন্য আয়োজন করে থাকে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের।
ভারতে এই দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তার মধ্যে স্মরণীয় ২০২১ সালের ‘100 Pipers’ নামে একটি জনপ্রিয় স্কচ ব্যাণ্ডের এক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, যার নাম ছিল –‘ Play for a cause’। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ভারতের বহু খ্যাতনামা শিল্পী ও ব্যান্ডের দল। সংগৃহীত অর্থ ব্যবহার করা হয় কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ক্ষতিগ্রস্ত সঙ্গীত শিল্পী এবং প্রযুক্তিবিদদের সাহায্যে। ২০১৮ সালে এই দিনেই মুম্বইতে ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস’ (এন.সি.পি.এ.) একাধিক ওয়ার্কশপ এবং শিল্পীদের সঙ্গে খোলা প্রশ্নোত্তর অধিবেশন চালু করে, যাতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাড়ে সঙ্গীতচর্চার আগ্রহ।
আমেরিকায় এই দিনে বিভিন্ন দাতব্য সংগঠন এবং সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি বিনামূল্যে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। শহরের বিভিন্ন পার্ক, ফুটপাথ, রাস্তা, খোলা চত্বরে হয় পেশাদার, অপেশাদার শিল্পীদের ‘লাইভ পারফরম্যান্স’। নিউইয়র্ক শহরে এই দিন উপলক্ষে প্রথম অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় ২০০৭ সালে। আফ্রিকায় নাইজিরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়াতে লোকসঙ্গীত এবং সেখানকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিশেষ কিছু বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনে উদযাপিত হয় দিনটি। এখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রায় সঙ্গীত ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার মিশে আছে গভীরভাবে। তাই সেখানে দিনটি খুবই অর্থবহ। কারণ বাদ্যযন্ত্রগুলি আফ্রিকার সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের অংশ। ড্রাম জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে স্বকীয়তা নিয়ে জনপ্রিয় – জেম্বে (Djembe), ডুনদুন বা Talking Drum, এমবিরা (Mbira), কোরা(Kora), শকরেস (Shakres), কাবাসা (Cabasa) ইত্যাদি। ইতালিতে বিভিন্ন শহর সঙ্গীতময় হয়ে ওঠে অপেরা, জ্যাজ, লোকসঙ্গীত ও সমসাময়িক সঙ্গীতের সংমিশ্রণে।
চিনে ফ্রেঞ্চ কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে সেখানকার ফরাসি দূতাবাস প্রথম এই দিবস উদ্যাপন চালু করে। এখন সেখানে চিনা শিল্পীরা নানান ধরণের অনুষ্ঠান করে থাকে। এছাড়া শহরের প্রধান চত্বর, পার্ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা গান-বাজনা করে। ক্লাসিক্যাল চিনা সঙ্গীত থেকে রক ব্যান্ড সবই সেখানে থাকে। চিনাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র এরহু, গুজেং, পিপা ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয় তাদের সংস্কৃতির কিছু পরিচয়।
জাপানেও সেই একই ছবি। তবে এখানে তার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ধর্মসঙ্গীত ‘শিন্টো’ ও বৌদ্ধসঙ্গীতের পরিবেশনও হয়। অস্ট্রেলিয়ায় আবার দেখা যায় আদিবাসী সঙ্গীতের প্রভাব। এছাড়া হয় স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান ও সঙ্গীত শিক্ষার আসর। ভিয়েনা শহর তো বিখ্যাত ‘সিটি অফ মিউজিক’ নামে। এখানেই তো জন্মেছেন মোজার্ট বিঠোভেন, শুবার্ট, হেডন(Haydn), স্ট্রাউস।
পশ্চিমী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ছাড়াও শহরের নানান খোলা চত্বরে হয় বেহালা, জ্যাজ ইত্যাদির পরিবেশন। মিলেমিশে যায় ‘ভিয়েনা ফিলহারমোনিক অর্কেষ্ট্রা’–র সঙ্গে ‘ভিয়েনা স্টেট অপেরা’–র সঙ্গীত-নৃত্যের অনুষ্ঠান। এছাড়া সেখানকার ‘পপ্’ও লোকসঙ্গীত তো আছেই। সঙ্গীত জড়িয়ে আছে ভিয়েনাবাসীর জীবনের সঙ্গে। তাই অস্ট্রিয়ার মানুষজনের কাছে এই দিনটি নয় নিছক আমোদ-প্রমোদের। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের এই বিশেষ দিন তাদের কাছে যেন এক জাতীয় পরিচয় – দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং রাজনৈতিক ধারণার এক সমন্বিত রূপ।
ভারতেও ইদানিং ‘আণ্ডার গ্রাউন্ড ব্যান্ড’ সংস্কৃতি মেট্রো শরহগুলোয় ক্রমবর্ধমান। এসব ব্যান্ডের ভিন্ন ঘরানার গান প্রায়শই বহন করে রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা। এ শুধু সঙ্গীত নয় – এক প্রতিবাদ, আত্মপ্রকাশ ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যম। ভারতে এই ব্যান্ডের মধ্যে পরিচিত – ইণ্ডিয়ান ওশন (Indian Ocean), পরিক্রমা (Parikrama), অগ্নি (Agnee), দ্য লোকাল ট্রেন (The local train), ডেমোনিক রেজারেক্শন্ (Demonic Resurrection), আভিয়াল (Avial), ক্যাকটাস (Cactus), ফসিলস্ (Fossils), জু (Zoo) ইত্যাদি।
রাশিয়াতে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে এই দিবসের জনপ্রিয়তা – বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজান ইত্যাদি শহরে আয়োজিত হয় বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠান। মিউজিক স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, আর্ট-ক্যাফে আর পার্কে হয় ‘ওপেন এয়ার কনসার্ট’। পরিবেশিত হয় ইউরোপীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত, রাশিয়ান লোকসঙ্গীত, ইলেকট্রনিক মিউজিক, আণ্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড ইত্যাদি। আণ্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড হল একটা সঙ্গীতের দল যারা মূলধারার সঙ্গীতের বাইরে থেকে স্বাধীনভাবে গান লেখে, সুর দেয়, প্রযোজনা করে। এদের গানের শৈলী প্রচলিত ধারা থেকে ভিন্ন। খ্যাতির থেকে প্রকাশের স্বাধীনতাকেই বেশী গুরুত্ব দেয় এরা। ভারতেও ইদানিং ‘আণ্ডার গ্রাউন্ড ব্যান্ড’ সংস্কৃতি মেট্রো শরহগুলোয় ক্রমবর্ধমান। এসব ব্যান্ডের ভিন্ন ঘরানার গান প্রায়শই বহন করে রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা। এ শুধু সঙ্গীত নয় – এক প্রতিবাদ, আত্মপ্রকাশ ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যম। ভারতে এই ব্যান্ডের মধ্যে পরিচিত – ইণ্ডিয়ান ওশন (Indian Ocean), পরিক্রমা (Parikrama), অগ্নি (Agnee), দ্য লোকাল ট্রেন (The local train), ডেমোনিক রেজারেক্শন্ (Demonic Resurrection), আভিয়াল (Avial), ক্যাকটাস (Cactus), ফসিলস্ (Fossils), জু (Zoo) ইত্যাদি।
রাশিয়ায় আবার রয়েছে লোকসঙ্গীতেরও প্রাধান্য। সঙ্গীত দিবসে তাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বালালাইকা (Balalaika) এবং ডমরা (Domra) ব্যবহার করে লোকসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। স্পেনে বিশ্বসঙ্গীত দিবস এক রঙিন, বৈচিত্র্যময়, মানবিকতার দিন। পথচারী, শিল্পী, পর্যটক সবাই যেন হয়ে ওঠে সামগ্রিক এক সুরের অংশ। প্রচুর অনুষ্ঠান হয় মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ভ্যালেন্সিয়া, ইবিজা, গ্রানাডায়। পেশাদার, অপেশাদারদের মধ্যে গিটারবাদক, ড্রামার, জিপসি ও ফ্লেমেঙ্কো শিল্পীরা মাতিয়ে দেন অনুষ্ঠান। অনেক সময় অংশ নেন রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষও। স্পেনের নিজস্ব ঐতিহ্য ফ্লেমেঙ্কো নাচের অনুষ্ঠান সবচেয়ে বেশী দেখা যায় আন্দালুসিয়া অঞ্চলে। স্পেনের স্থানীয় পৌরসভা ও বিভিন্ন সংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলি খুবই সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে।
লাতিন আমেরিকাতেও সংগীত জীবনের এক অঙ্গ। তাই সঙ্গীত-দিবস এখানে এক স্বতঃস্ফুর্ত উৎসব। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, কিউবা, কলম্বিয়াতে হয় সঙ্গীত নৃত্যের বিশেষ প্রদর্শন। প্রাণবন্ত মানুষজন পথে নেমে পরিবেশন করে তাদের প্রাণের নাচ-সাম্বা, সালসা, ট্যাঙ্গো, কুম্বিয়া, মারিয়াচি ইত্যাদি। প্রতিটি নৃত্যকলার রয়েছে এক বিশেষ শৈলী। এছাড়া রাস্তায়, পার্কে গিটারবাদন, লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য তো আছেই। লাতিন-আমেরিকার ব্যান্ডগুলির সঙ্গীত পরিবেশন বেশীর ভাগই বৈষম্য, দারিদ্র ও মানবাধিকার নিয়ে। তাদের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র চারাঙ্গো গিটার(Charango), কেইনা বা কুইনা বাঁশী (quena) ইত্যাদি বিশেষ স্থান নেয় সঙ্গীত উৎসবে।
গ্রেট ব্রিটেনেও বড় শহরগুলিতে হয় ‘ওপেন এয়ার কনসার্ট’।এছাড়াও বহু সাংস্কৃতিক সঙ্গীতের মিলনমেলায় গান-বাজনা পরিবেশন করেন ব্রিটেনে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা। ভাটিকান শহরে আবার এই দিনটির তাৎপর্য আধ্যাত্মিক ভাবনা ও শান্তির প্রকাশে। বিভিন্ন চার্চে ধর্মীয় সঙ্গীতে অংশ নেন ক্যাথলিক শিল্পীরা। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, সিস্টিন চ্যাপেল বা আশেপাশের পবিত্র স্থানগুলিতে পরিবেশিত হয় শুধুই ধর্মীয় ধ্যানমূলক সুর।
আজকের দিনে বিশ্ব যখন বিদীর্ণ রাজনৈতিক বিভাজন, সামাজিক বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক ভেদরেখায়, তখন সঙ্গীতই পারে সব ভেদাভেদের উর্ধে গিয়ে এক সুরেলা বিশ্ব গঠন করতে। এই বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের তাৎপর্য শুধু গান গাওয়ার নয়, এ দিবস একে অপরকে অনুভব করার, মানবতাকে শ্রদ্ধা করার।
এইভাবে পৃথিবীর ছোট, বড় সব দেশেই পালিত হয় বিভিন্ন ধরনের উৎসব। তবে এ শুধু উৎসব নয় – একটি আন্দোলন। সঙ্গীত তখন শুধু নয় বিনোদন বরং তা হয়ে ওঠে আত্মার প্রশান্তি, সমাজের সংহতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের মাধ্যম। এখন প্রযুক্তির বিকাশে সৃজনশীলতার ক্রমবর্দ্ধমান গতিতে বিশ্বসঙ্গীত দিবস নিয়েছে ‘ডিজিটাল’ রূপ। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নানান ধরনের ‘অ্যাপ’। জন্ম নিয়েছে এক নতুন ধারা। সঙ্গীত যেখানে যেভাবেই প্রকাশিত হোক না কেন লক্ষ্য কিন্তু একটাই – হৃদয়ের অনুভূতিকে ভাষা দেওয়া। সঙ্গীত কোন একক ভাষা নয়-এক সার্বজনীন অনুভব যা জাতি-ধর্ম-ভাষা ও সীমান্তের উর্ধে। সঙ্গীত একত্রিত করে মানুষকে। সঙ্গীত এক শক্তিশালী মানবিক ভাষা যা যুগে যুগে ব্যবহৃত হয়েছে শান্তি, প্রতিবাদ, ভালবাসা, আত্মিক মুক্তির মাধ্যম হিসাবে। আজকের দিনে বিশ্ব যখন বিদীর্ণ রাজনৈতিক বিভাজন, সামাজিক বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক ভেদরেখায়, তখন সঙ্গীতই পারে সব ভেদাভেদের উর্ধে গিয়ে এক সুরেলা বিশ্ব গঠন করতে। এই বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের তাৎপর্য শুধু গান গাওয়ার নয়, এ দিবস একে অপরকে অনুভব করার, মানবতাকে শ্রদ্ধা করার।