bangla Bhasha

ভাষা সংকট আসলে সভ্যতার সংকটেরই প্রতিফলন

গত ক’য়েক মাস ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। ভিনরাজ্যে বাংলা বললে বাংলাদেশী সন্দেহে অনুপ্রবেশকারী তকমা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টিকে বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণ তথা ‘ভাষাসন্ত্রাস’ বলে দাবি করছে রাজ্যের শাসক দল। প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। আসলে ভাষাকে হাতিয়ার করে রাজনীতির যুদ্ধ চলছে। এতে অবমাননা হচ্ছে বাংলা ভাষার। তৈরি হচ্ছে ভাষার সংকট। রাজনীতির দোহাই দিয়ে ভাষাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ভাষার এই সংকটকে কীভাবে দেখছেন ওপার বাংলার বিদগ্ধ চিন্তাবিদ, স্বদেশ রায়। তারই প্রতি ফলন এই নিবন্ধে।

বাংলাদেশের হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ইতিহাস আছে ঠিকই, তবে এর ধারাবাহিকতা পাওয়া যায় না। বরং যা দেখা যায়, তা কখনো আলোর ঝলকানি, আবার কখনো অন্ধকারের গাঢ় ছায়া।

সভ্যতার ইতিহাসে স্পষ্ট দেখা যায়, কোথাও যদি অন্তত কয়েক শতাব্দী ধারাবাহিকভাবে সভ্যতার ট্রেন নির্বিঘ্নে না চলে, তাহলে সেখানে প্রকৃত আলোর উন্মেষ ঘটে না। বাঙালির সভ্যতার নিদর্শন যেমন লোকগীতি, লোকসাহিত্য ও মাটির কাজ পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, এর পরম্পরা খুবই দুর্বল। এর অর্থ, সভ্যতার সেই ট্রেন মাঝে মাঝেই থেমে গিয়েছে।

এর ফলে এখানকার মানুষ শুধু প্রকৃতির উপাদান ধ্বংস করেছে তা-ই নয়, বরং মানবিক উপাদানও বিনষ্ট করেছে। মানবিক উপাদান ধ্বংস হওয়ার ফলেই সমাজে বলপ্রয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ বারবার স্থান করে নিয়েছে। আর এসব রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির চরিত্রেও ঢুকে পড়েছে — যা অন্ধতা ও কলুষাতা।

সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ ছাত্রদের মুখে যে ভাষা উচ্চারিত হচ্ছে, তা শুধু রাজনৈতিক সংকট নয়, সভ্যতারও সংকট| যে কোনও কারণেই হোক, রাজনীতির নামে সভ্যতাকে যে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা অস্বীকার করলে ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে।

সৌজন্য : সারাক্ষণ (বাংলাদেশ )